ভুটানকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাওয়া মানেই গোলের বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া। একসময় এমনও অবস্থা গেছে, বিরতি চলাকালে ভুটানের কর্মকর্তারা কম গোল দেওয়ার জন্য মাঠে অনুরোধ রাখতেন। দুই দেশের বন্ধুত্বের খাতিরে তা রক্ষাও করা হতো। সেই ভুটানের কাছেই কিনা বাংলাদেশ শোচনীয় হার মেনেছে। ১০ অক্টোবর থিম্পুতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপ প্রাক বাছাইপর্ব ফুটবলে বাংলাদেশ জাতীয় দল ৩-১ গোলে হেরে দেশে ফিরেছে। ফুটবল ইতিহাসে এই প্রথম ভুটানের কাছে হার। এমন লজ্জাকর পারফরম্যান্সে ক্রীড়ামোদীরা ক্ষুব্ধ। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলাররা বলছেন লজ্জায় তারা বাইরে মুখ দেখাতে পারছেন না। জাতীয় দলের সমালোচনার পাশাপাশি বাফুফে কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিও উঠেছে। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান বাফুফে নির্বাহী কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবি করেছে। ফুটবল বাঁচাতে ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া সরকারের প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কেউ কেউ আবার ব্যর্থতার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিও তুলেছেন। ফুটবলে ব্যর্থতা ঘিরে ক্রীড়াঙ্গনে নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বাফুফে ভবনের সামনে কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবি চেয়ে মিছিল করা হচ্ছে। যে পরিস্থিতি তাতে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ব্যর্থতার দায়ভার স্বীকার করে জাতীয় দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম ক্ষমা চাইলেন। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভুটানের কাছে হারের কোনো অজুহাত নেই। খারাপ খেলেই আমরা হেরে গেছি। এ জন্য দেশবাসী কতটা ব্যথিত তা আমি উপলব্ধি করছি। তাই অধিনায়ক হিসেবে সব ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে আমি জাতির কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।’
মামুনুল বলেন, জাতীয় দলে দীর্ঘদিন ধরে খেলছি। ম্যাচে যেমন জিতেছি, তেমনি হেরেও গেছি। তবে ভুটানের কাছে হার কখনো ভুলবার নয়। এটাকে আমি আমার ক্যারিয়ারে কালো অধ্যায় বলব। যে দাগ কখনো মুছবার নয়। প্রশ্ন উঠেছে, থিম্পুতে কেন আমরা এত খারাপ করলাম? ১-১ গোলে ড্র করলেও তো বাছাইপর্বে চলে যেতাম। যারা সেদিনকার ম্যাচ দেখেছেন তারা নিশ্চয় ভুটানের গোলগুলো দেখেছেন। ডিফেন্স লাইন পুরোপুরি ব্যর্থ ছিল। তা না হলে ম্যাচটা অন্তত ড্র করা যেত। যাক সেই আফসোসের কথা বলে লাভ নেই। আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি এটাই সত্য। জাতীয় দলের অধিনায়ক আক্ষেপ করে বলেন, ম্যাচ হারলেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এই দুর্দশা থেকে কীভাবে বের হওয়া যায় সেই পরামর্শ কেউ দিচ্ছেন না।
মামুনুল বলেন, মিডিয়ায় বেশ কয়জন সাবেক ফুটবলার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমি বলতে চাই না তারা যখন খেলতেন দেশকে কী দিতে পেরেছেন। আমরা হারলেই সমালোচনায় ফেটে পড়েন। মানলাম এটাই আমাদের প্রাপ্য। কিন্তু কখনো কি তারা আমাদের কোনো পরামর্শ দিয়েছেন তোমরা এভাবে খেল। এটা কি তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। ব্যর্থতার পুরো দোষ দেওয়া হচ্ছে সালাউদ্দিন ভাইকে। অনেকে তার পদত্যাগও দাবি করছেন। আমি তো বলব অভিভাবক হিসেবে তিনি ঠিকই দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের মান উন্নয়নে কম পরিশ্রম করছেন না। আমরাই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছি। কোনো সন্দেহ নেই ফুটবলে বড্ড দুঃসময় যাচ্ছে। তবে ভুটানের কাছে হারের পর যে ভাষায় কথা বলা হচ্ছে তা ফুটবলে কোনো উপকার না অপকার হবে তা সমালোচকরা ভেবে দেখুন। এমনিতেই আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এখন তো সবারই ফুটবলের পাশে থাকা উচিত। আমি মনে করি সবাই মিলে কাজ করলে ফুটবলে এই দুর্দশা কেটে যাবেই।