শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

উপমহাদেশে কুকের ব্যাটিং রোমাঞ্চ

ক্রীড়া প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম থেকে

উপমহাদেশে কুকের ব্যাটিং রোমাঞ্চ

ক্রিকেটার মাত্রই সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ঘরের মাঠে খেলতে। শৈশব, কৈশোর যেখানে মিলে মিশে একাকার। এমন মাঠেই খেলতে বেশি ভালো লাগার কথা। দেশের মাটিতে খেলে যতটা শান্তি ততটা নিশ্চয়ই নয় বিদেশের মাটিতে। কেননা পরিবেশ, দর্শক সব কিছুই থাকে প্রতিকূলে। আর দেশের মাটিতে সব কিছুই থাকে পক্ষে। সে কারণে দেখা যায় অধিকাংশ খেলোয়াড়ের বড় বড় রেকর্ডগুলো তাদের দেশের মাটিতেই। তবে ব্যতিক্রমও আছে। আর সেই ব্যতিক্রমী এক ক্রিকেটার ইংল্যান্ডের অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক।

তবে উপমহাদেশের কন্ডিশন যে কুকের খুব পছন্দ তা নয়, কিন্তু ঘরের মাঠের চেয়েও উপমহাদেশের উইকেটেই বেশি ভালো খেলেন তিনি। আর উপমহাদেশের মধ্যে তার প্রিয় স্থান বুঝি বাংলাদেশ! সে কারণেই কিনা ওয়ানডে অধিনায়ক ইয়ন মরগান যেখানে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে আসেনি সেখানে কুক সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের মুখ দেখেই চলে এসেছেন বাংলাদেশে।

অ্যালিস্টার কুকের রেকর্ডও কথা বলছে, বাংলাদেশ তার কতটা প্রিয়! নিজের দেশ ইংল্যান্ডে যেখানে টেস্টে তার ব্যাটিং গড় ৪৫.১৩, সেখানে বাংলাদেশে গড় ১১৪। দুই ম্যাচ খেলে দুই দুটি সেঞ্চুরি। বাংলাদেশে দুই ম্যাচে করেছেন ৩৪২ রান। ২০১০ সালে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তার ১৭৩ রানের ইনিংসটি ভোলার কথা নয়। ওই একই সিরিজে দ্বিতীয় টেস্টেও ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেও আরেক সেঞ্চুরি।

চট্টগ্রামে তো কুককে আউট করাই যাচ্ছিল না। কুক যেভাবে স্মুথলি খেলছিলেন, বাংলাদেশের ফিল্ডাররা যেন তাকে আউট করার কথা ভুলেই গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের ভুলেই সাজঘরে ফিরতে হয়েছিল তাকে। স্পিনার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বল পুল করতে গিয়ে ব্যাটে বলে ঠিক মতো সংযোগ ঘটাতে পারেননি। বল সোজা চলে যায় মাহমুদুল্লাহর হাতে। ওই ম্যাচে আরেক ইনিংসেও কুক শিকার হয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের।

ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংস সুবিধা করতে পারেননি ইংলিশ দলপতি। মাত্র ২১ রানেই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন স্পিনার আবদুর রাজ্জাক রাজ। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে দেখা গেছে অন্য এক কুককে। যিনি ১০৯ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কুক মোট চারটি ম্যাচ খেলেছেন। দুটি ইংল্যান্ডের মাটিতে। সব মিলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তার গড় ৬৬.৮৩। যেখানে তার টেস্ট ক্যারিয়ারে গড় রান হচ্ছে ৪৭.৩১। মোট রান ১০৫৯৯। কুক তার টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৩৩ ম্যাচে ২৯ সেঞ্চুরি এবং ৫১ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। অথচ উপমহাদেশে এসে তিন দেশ বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় করেছেন ১৫ ম্যাচে করেছেন ৭ সেঞ্চুরি। সঙ্গে রয়েছে ৬টি হাফ সেঞ্চুরি। ভারতের মাটিতে ভারতের বিরুদ্ধে কুকের ব্যাটিং গড় ৬১.৮৫। ৮ ম্যাচে ৪ সেঞ্চুরি ও ৩ হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৮৬৬ রান। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ৫ ম্যাচে ১টি সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছেন তিনটি হাফ সেঞ্চুরি। পাকিস্তানে কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি কুকের।

ইংলিশ কিংবা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা সাধারণত উপমহাদেশ সফর করতে চান না। এখানকার কন্ডিশন তাদের জন্য সুবিধাজনক নয়। তা ছাড়া স্পিনিং কন্ডিশনে তাদেরকে রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয়। কিন্তু কুক এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা। উপমহাদেশে যেন কুকের ব্যাট আরও উজ্জীবিত হয়।

বাংলাদেশের কুকের মুধর স্মৃতি থাকলেও খেলতে আসছেন দীর্ঘ ছয় বছর পর। এখানকার কন্ডিশনে খুব একটা তারতম্য না হলেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে কিন্তু ক্যারিশম্যাটিক পরিবর্তন ঘটেছে। তা ছাড়া বাংলাদেশে এসে কন্ডিশন নিয়েও চিন্তিত ইংলিশ অধিনায়ক, ‘বাংলাদেশ গত তিন চার বছরে অনেক ভালো করেছে। টেস্টে আমরা ছন্দে থাকলেও কন্ডিশন আমাদের পক্ষে নয়। বাংলাদেশে ভালো মানের স্পিনার আছে, যারা ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। তাই আমার মনে হচ্ছে ভালো লড়াই হবে।’

সর্বশেষ খবর