শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুলতান ট্র্যাজেডি চট্টগ্রামেও

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে হার কোনোভাবেই হতাশার নয়। দুই টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ডই পরিষ্কার ফেবারিট। মাঠে নামার আগে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম তা স্বীকারও করেন। কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম তিনদিন ম্যাচ বাংলাদেশেরই নিয়ন্ত্রণে ছিল। বোলারদের দাপটে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল টাইগাররা। ইংলিশদের বিরুদ্ধে টেস্টে ২২ রানে হার প্রত্যাশিত দলই বলা যায়। সত্যি বলতে কী ক্রিকেটপ্রেমীদের ভাবনায় ছিল হয় ড্র না হয় ইংল্যান্ড জিতবে। কিন্তু টেস্টের চেহারা তো ভিন্ন রকম হয়ে পড়েছিল। যে অবস্থা ছিল বাংলাদেশের জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়। শোচনীয় হারে কোনো আফসোস থাকত না। কিন্তু জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে হেরে যাওয়াটা সত্যিই বেদনাদায়ক। এই কষ্ট ভোলার নয়।

ম্যাচ চট্টগ্রামে হলেও পুরো দেশ উত্তেজনার কাঁপছিল। গতকাল সবার চোখ ছিল বন্দরনগরীর দিকে। জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ জেতার কৃতিত্ব রয়েছে। দুই দেশের শক্তি খর্ব হওয়ায় টেস্টে বাংলাদেশের বিজয় নিয়ে উল্লাসটা তেমনভাবে হয়নি। ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে দেশ উৎসবে ভেসে যেত। অভিনন্দনে ভাসতেন ক্রিকেটাররা। এখন ২২ রানের হারের বেদনায় জ্বলছে দেশ। টেস্টে ইংল্যান্ড এমনিতেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তারপর আবার বাংলাদেশের কোচই যখন বলেন ইংল্যান্ডের ২০ উইকেট ফেলার সামর্থ্য আমাদের নেই। তখন অন্যরা জয়ের আশা করেন কীভাবে? সাকিব কিন্তু বলেছিলেন অবশ্যই ইংল্যান্ড ফেবারিট। তারপরও আমরা ছেড়ে কথা বলব না। ওদের ২০ উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য আমাদের আছে। বাস্তবে তা কিন্তু প্রমাণও দিয়েছেন। শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ থাকা সত্ত্বেও ইংল্যান্ডকে প্রথম ইনিংস ২৯৩, দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ রানে অলআউট করে দেয়। মেহেদী, সাকিব ও তাইজুলের বোলিং দাপটে তারা রানের পাহাড় গড়তে পারেনি। শেষ ইনিংসে সফরকারীরা ২৮৬ রানে লিড নেওয়ায় বাংলাদেশ কিছুটা হলেও বিপাকে পড়ে যায়। তারপরও ব্যাটিংয়ে জ্বলে ওঠায় জয়ের আশা জেগে উঠেছিল। ক্রিকেটে কখন কী হয় বলা মুশকিল। কে কখন প্রাধান্য বিস্তার করে বলা যায় না। তাই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪০ রানের মাথায় সাকিব সাজ ঘরে ফেরত গেলে মনে হচ্ছিল ইংলিশরা একদিন আগেই টেস্ট জিতে যাবে। কিন্তু মুশফিকের সঙ্গে সাব্বির জুটি বাঁধলে দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। দুজনার ধৈর্যশীল ব্যাটিং আর দেখেশুনে শট খেলায় ম্যাচ হাতে চলে আসছিল। ইংলিশ বোলাররা এ সময়ে এতটা অসহায় হয়ে পড়েন যে, মনে হচ্ছিল এ জুটিই বাংলাদেশকে জয় এনে দেবেন। কিন্তু দুভাগ্যক্রমে ২২৭ রানে মুশফিক ক্যাচ আউট হয়ে যান। মূলত অধিনায়কের বিদায়ের পরই ম্যাচ চলে যায় ইংল্যান্ডের হাতে। অল্প সময়ের মধ্যে সাজ ঘরে ফেরেন মেহেদী ও রাব্বি। স্বীকৃত ব্যাটস ম্যান হিসেবে ক্রিজে তখন সাব্বিরই। ২৩৮ রানে ৮ উইকেটের পতন।

খেলতে নামেন তাইজুল। চতুর্থ দিন শেষে ২৫৩ রান উঠলে শেষ দিনে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৩৩ রানের।

ভরসা ছিল সাব্বিরকে নিয়েই। অনেকে স্বপ্ন দেখছিলেন অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে সাব্বিরই বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় এনে দেবেন। সুন্দর এক সকালের অপেক্ষায় ছিল জাতি। যারা বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া নিয়ে নাক ছিটকিয়ে ছিল সেই ইংল্যান্ডকে হারাবে বাংলাদেশ এর চেয়ে বড় গর্ব আর কি হতে পারে? কিন্তু হলো না স্বপ্ন পূরণ। সাব্বির ৬৪ রানে ক্রিজে টিকে থাকলেও ২৬৩ রানের মাথায় তাইজুল ও শফিউল আউট হয়ে গেলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। যে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল তা কি কোনো দিন আর পাওয়া যাবে? এমন সুযোগ এসেছিল ২০০৩ সালে মুলতানে। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৫ রানে ৮ উইকেট পড়ে গেলে বাংলাদেশের জয়টা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তানকে জিততে হলে প্রয়োজন ছিল ৫৭ রানের। অধিনায়ক-ইনজামাম-উল হক ১৩৮ রানের দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে সেই ম্যাচে পাকিস্তান জয় পেয়েছিল ১ উইকেটে। ১৩ বছর পর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জেতার সুযোগ পেয়েও পারল না বাংলাদেশ। মুলতানের ট্র্যাজেডির দেখা মিলল চট্টগ্রামেও।

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ২৯৩/১০, দ্বিতীয় ইনিংস : ২৪০/১০

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ২৪৮/১০, দ্বিতীয় ইনিংস : ২৬৩/১০

সর্বশেষ খবর