শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিলের পাঁচ অধিনায়ক

রাশেদুর রহমান

বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিলের পাঁচ অধিনায়ক

ব্রাজিলে ফুটবলকে ধর্মজ্ঞান করা হয়। মাঠে-ঘাটে, পাড়া-মহল্লায় কিংবা অলি-গলিতেও চোখে পড়ে ফুটবলের শৈল্পিক ছবি। ছোট ছোট বাচ্চাদের পায়েও দেখা যায় জোগো বোনিতোর ছন্দ। ব্রাজিলে ফুটবলের এই যে উন্মাদনা, জাতীয়ভাবে উদযাপনের এই যে প্রয়াস এটা দু-এক দিন কিংবা মাস কিংবা বছরে হয়নি। যুগ যুগ ধরে পরম তপস্যার মধ্য দিয়ে ফুটবলকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে ব্রাজিল যেখানে অন্যরা কেবল মাথা উঁচু করেই তাকাতে পারে। ইউরোপের প্রাণহীন ফুটবলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ব্রাজিলিয়ানরা। ল্যাটিনরা। ছন্দ আর হাই পারফরম্যান্স ফুটবলের মধ্য দিয়ে বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াইয়ে পাঁচবার শিরোপা জিতেছে ব্রাজিল। রাজার সিংহাসনে বসেছে বার বার। ব্রাজিলকে পাঁচবার সিংহাসনে বসিয়েছেন যে পাঁচ জন সেনাপতি, তারা কোথায় আজ!

ব্রাজিল প্রথমবারের মতো বিশ্বজয় করে ১৯৫৮ সালে। সুইডেনের মাটিতে সুইডেনকে ৫-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন পেলে-ভাভা-জাগালোরা। সে বিশ্বকাপের সেনাপতি ছিলেন হিডেরাল্ডো বেল্লিনি। ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত এ ফুটবল সেনাধিনায়ক ১৯৫৭-৬৬ সালের মধ্যে ব্রাজিলের জার্সিতে একজন ডিফেন্ডার হিসেবে ৫১টি ম্যাচ খেলেছেন। ১৯৩০ সালের ৭ জুন জন্ম নেওয়া এ মহান ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন আলজেইমার ডিজিজের সঙ্গে লড়াই করে। ২০১৪ সালের ২০ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ৮৩ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান। অবশ্য ব্রাজিল তার বিশ্বজয়ী সেনাপতিদের মধ্যে সবার প্রথম হারিয়েছিল মাউরো রামোসকে। ১৯৬২ সালে ল্যাটিন দেশ চিলিতে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ। তখন ব্রাজিলের পঞ্চ পাণ্ডবের নাম ধাম ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। পেলে-ভাভা-গ্যারিঞ্চা-ডিডি-জাগালোদের সামলানো তখন দায় হয়ে পড়ে বিশ্বের। ১৯৬২ সালে মহাতারকাদের নেতৃত্ব দেন মাউরো রামোস। ফাইনালে চেকোস্লোভাকিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব জয় করে ব্রাজিল। মাউরো রামোস একজন ডিফেন্ডার হিসেবে ব্রাজিলের জার্সিতে ১৯৪৮-৬৫ সময়ের মধ্যে মাত্র ২২ ম্যাচ খেলেছেন। তবে বিশ্বজয়ী অধিনায়ক হিসেবে ব্রাজিলের কাছে তিনি সব সময়ই সম্মান পেয়েছেন। পেলেদের মতো কিংবদন্তি ফুটবলাররাও সমীহ করতেন রামোসকে। ২০০২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ৭২ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান তিনি। ব্রাজিল তার তৃতীয় বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কার্লোস আলবার্তোকে চিরতরে হারিয়ে ফেলে গত মঙ্গলবার। ১৯৭০ বিশ্বকাপে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জয় করে জুলে রিমে ট্রফি চিরতরে নিজেদের করে নেয় ব্রাজিল। সেই দলকে নেতৃত্ব দেওয়া কার্লোস আলবার্তো পেলেদের ছেড়ে চলে যান চিরতরে। আধুনিক ফুটবলের সবচেয়ে ‘পারফেক্ট’ ডিফেন্ডার হিসেবে স্বীকৃত তিনি। ব্রাজিলের জার্সিতে খেলেছেন ১৯৬৪-৭৭ পর্যন্ত। ৫৩ ম্যাচে করেছেন ৮টা গোলও। আলবার্তোর মধ্য দিয়েই ব্রাজিল তার সোনালি যুগের তিনজন সেনাপতিকেই হারাল। এরপর দীর্ঘ সময়ের বিরতি দিয়ে ব্রাজিল বিশ্বকাপ জয় করে ১৯৯৪ সালে। সেবার ইতালির সঙ্গে কঠিন লড়াইয়ের পর ফাইনালে টাইব্রেকারে ব্রাজিল জিতেছিল ৩-২ ব্যবধানে। চতুর্থবারের মতো ব্রাজিলকে বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দিয়েছিলেন দুঙ্গা। তার পুরো নাম কার্লোস কেতানো ব্লের্ডন ভেরি। ১৯৬৩ সালের ৩১ অক্টোবর জন্ম নেওয়া এ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার আন্তর্জাতিক ফুটবলে যাত্রা করেন ১৯৮৭ সালে। ১৯৯৮ পর্যন্ত তিনি ৯১টা ম্যাচ খেলে ৬টা গোল করেন ব্রাজিলের হয়ে। ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ করার পর তিনি ব্রাজিলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দুই টার্মে। ২০০৬-১০ ও ২০১৪-১৬। তার অধীনে ব্রাজিল ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ জিতলেও বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায়নি। বর্তমানে চাকরি হারিয়ে নতুন কোচের চাকরি খুঁজছেন দুঙ্গা। ব্রাজিলের পঞ্চম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কাফু। ১৯৭০ সালের ৭ জুন জন্ম নেওয়া এ ফুটবলার একজন সাইড ব্যাক হিসেবে ব্রাজিল দলে ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৯০ সালে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ১৪২টা ম্যাচ খেলেছেন তিনি ব্রাজিলের জার্সিতে। গোল করেছেন ৫টা। তবে ২০০২ সালে ব্রাজিলকে পঞ্চম বিশ্বকাপ শিরোপা উপহার দিয়ে তিনি ব্রাজিলিয়ানদের হৃদয়ে আসন গেড়ে নেন। ঠাঁই করে নেন আলবার্তোদের সারিতে। তার নেতৃত্বেই জাপান থেকে শিরোপা জিতে বাড়ি ফিরেছিল ব্রাজিল। সিলেকাওরা রোনাল্ডোর ডাবলে ২-০ গোলে হারিয়েছিল অলিভার কানদের দুরন্ত জার্মানিকে। বর্তমানে কাফু বিভিন্ন টিভি শোতে অংশ নেন। পাশাপাশি একজন সমাজসেবক হিসেবেও কাজ করছেন তিনি। তা ছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় ফুটবলবিষয়ক কলামও লিখেন কাফু।

ব্রাজিল বিশ্বজয়ী পাঁচ অধিনায়কের মধ্যে তিনজনকেই হারিয়েছে। বাকি দুজন কতদিন ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন কে জানে! ব্রাজিল আবার কবে নতুন বিশ্বজয়ী অধিনায়ক পাবে, তাই-বা কে জানে!

সর্বশেষ খবর