রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মেহেদীর বিস্ময়কর রেকর্ড

মেজবাহ্-উল-হক

মেহেদীর বিস্ময়কর রেকর্ড

মেহেদী হাসান মিরাজের চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষেক হয়। নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। ঢাকা টেস্টেও দাপট ধরে রেখেছেন। প্রথম ইনিংসে ইংলিশদের ৬ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরান —রোহেত রাজীব

হাত ঘোরাতে ঘোরাতে বাইশ গজের এক প্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে পৌঁছে গেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ক্রিস ওয়াকসকে আউট হওয়ার পর যেন একটু বেশিই সেলিব্রেশন করলেন। কেনই বা করবেন না! একে তো ৯৯ রানের জুটি ভাঙার স্বস্তি সেই সঙ্গে তিনি যে একটি বিশ্বরেকর্ডেরও মালিক হয়ে গেছেন। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪০ বছরের ইতিহাসে প্রথম অফস্পিনার হিসেবে প্রথম দুই টেস্টের একটি করে ইনিংসে অন্তত ৫ উইকেট শিকারে অনন্য কৃতিত্ব দেখিয়েছেন মিরাজ।

শুধু কি তাই! প্রথম দুই টেস্টে ১৩ উইকেট নিয়েও আরেকটি রেকর্ডের মালিক হয়েছেন মিরাজ। এর আগে বাংলাদেশি কোনো বোলার প্রথম দুই ম্যাচে ১৩ উইকেট শিকার করতে পারেননি। মিরাজের সামনে আরও একটি ইনিংস তো রয়েছেই।

 রেকর্ডবুকে নাম লিখিয়ে উচ্ছ্বসিত এই স্পিনার, ‘আমার খুবই ভালো লাগছে। যদি আমি এতটা ভালো আশা করিনি। আমার লক্ষ্য থাকে স্বাভাবিক একটা পারফর্ম করার। কিন্তু অনেক ভালো হয়ে গেছে। এমন পারফরম্যান্সে আমি সত্যিই অভিভূত।’

গতকাল মিরাজ ৮২ রানে নিয়েছেন ছয় উইকেট। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৮০ রানে নিয়েছিলেন ছয় উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে এক উইকেট। অভিষেকের পর টানা দুই টেস্টে পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার ঘটনা আর নেই। এর আগে নাঈমুর রহমান দুর্জয়, সোহাগ গাজী, ইলিয়াস সানি ও মঞ্জুরুল ইসলাম অভিষেকে ছয় উইকেট করে শিকার করলেও দ্বিতীয় টেস্ট এই কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি। অভিষেক টেস্টে ৫ উইকেট করে নেওয়া দুই বোলার তাইজুল ইসলাম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও পরের টেস্টে ভালো করতে পারেননি।

ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টে ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন এমন বোলার আছেন ২৩ জন। তবে অফস্পিনার হিসেবে মিরাজই প্রথম। তবে দুই টেস্টের চার ইনিংসের মধ্যে দুই ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব  মিরাজের আগে আর একজন অফস্পিনারই দেখাতে পেরেছিলেন, তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে খেলা প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার সনি রামাদিন। ১৯৫০ সালে দ্বিতীয় টেস্টের দুই ইনিংসেই পাঁচটি করে উইকেট নিয়েছিলেন (প্রথম ইনিংসে ৫টি, দ্বিতীয় ইনিংসে ৬টি)। কিন্তু সনি তার প্রথম টেস্টে ৫ উইকেট পাননি।

 টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে কিংবদন্তি অফস্পিনারের তালিকা করলে সবার উপরে থাকবে লঙ্কান স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরনের নাম। শুধু অফস্পিনার কেন, বোলারদের মধ্যেই তাকে সর্বকালের সেরা বলা যায়। যিনি ৮০০ উইকেট নিয়ে রেকর্ডবুকের এভারেস্টের চূড়ায় আসন পেতে বসে আছেন। কিন্তু লঙ্কান এই বোলারও ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টে কোনো ইনিংসেই ৫ উইকেট পাননি। প্রথম দুই টেস্টের চার ইনিংসে মুরালি পেয়েছেন ১, ২, ১, ০ উইকেট।

৮৬ টেস্টে ২৯৭ উইকেট নিয়েছেন ইংলিশ কিংবদন্তি অফস্পিনার দেরেক আন্ডারউড। ইংলিশ তারকা এতটাই ভয়ঙ্কর ছিলেন যে সতীর্থরা তাকে ডাকতেন ‘ডেড-লী’ বলে। ব্যাটসম্যানরা আন্ডারউডের বল খেলতেই পারতেন। তিনিও প্রথম দুই টেস্টের চার ইনিংসে নিয়েছিলেন মাত্র দুই উইকেট- ০, ০, ১, ১।

টেস্টের ইতিহাসে জিম লেকারই প্রথম বোলার যিনি ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়েছেন (১৯৫৬ সালে ম্যাচটেস্টার টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে, ওই টেস্টে জিম ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন)। অবিস্মরণীয় এক রেকর্ডের মালিক এই ইংলিশ কিংবদন্তি অফস্পিনারও অভিষেকের পর দুই টেস্টের দুই ইনিংসে ৫টি করে উইকেট পাননি। জিম তার অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে পেয়েছিলেন ৭ উইকেট। কিন্তু পরের ইনিংসে দুই উইকেট। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট নিয়েছেন, কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে বল করার সুযোগই হয়নি।

বিশ্বের প্রথম স্পিনার হিসেবে ৩০০ উইকেট নেওয়ার মাইলফলক অর্জন করেছিলেন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি স্পিনার ল্যান্স গিবস। ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৭৯ টেস্টে নিয়েছেন ৩০৯ উইকেট। লাইনলেন্থ ঠিক রেখে দীর্ঘ স্পেলে বোলিং করার জন্য স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন ক্যারিবীয় এই স্পিনার। ১৯৬২ সালে ভারতের বিরুদ্ধে ব্রিজটাউন টেস্টে ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু অভিষেকে মোটেও আলো ছড়াতে পারেননি। প্রথম দুই টেস্টের চার ইনিংসে তার উইকেট সংখ্যা ছিল- ১, ৩, ০, ২।

সর্বকালের সেরা অফস্পিনারের তালিকা করলে বিশান বেদীর নাম উপরের দিকেই থাকবে। সত্তরের দশকে স্পিন জগতে ঝড় তুলেছিলেন। ভারতীয় এই অফস্পিনার ৬৭ টেস্টে নিয়েছেন ২৬৬ উইকেট। অথচ তার অভিষেকটা ছিল খুবই সাদামাটা। তিনি তো দুই ম্যাচের কোনো ইনিংসেই ৫ উইকেট পাননি (২, ১, ৪)।

কিংবদন্তির কাতারে থাকবেন পাকিস্তানি অফস্পিনার সাকলাইন মুস্তাকও। ৪৯ টেস্টে নিয়েছেন ২০৮ উইকেট। কিন্তু অভিষেকে তিনিও তেমন একটা সাড়া ফেলতে পারেননি। প্রথম দুই টেস্টের চার ইনিংসে ২, ২, ৩, ২ উইকেট নিয়েছেন।

বিশ্বের সব কিংবদন্তি অফস্পিনারকে টপকে গতকাল নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন বাংলাদেশের মেহেদী হাসান মিরাজ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

 ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ২৪৪/১০, ৮১.৩ ওভার (রুট ৫৬, ওয়াকাস ৪৬, রশীদ ৪৪)। মেহেদী ৬/৮২, তাইজুল ৩/৬৫। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ১৫২/৩, ৩১ ওভার (ইমরুল ৫৯, মাহমুদুল্লাহ ৪৭)। (দ্বিতীয় দিন শেষে)

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর