আর মাত্র পাঁচটা টেস্ট ম্যাচ। তারপরই বাংলাদেশ ক্রিকেটের উঠুনে দীর্ঘ পথ চলায় পূরণ করবে টেস্ট ম্যাচের সেঞ্চুরি। শততম টেস্টের মাইলফলক স্পর্শ করতে আর খুব বেশি দেরি নেই। সামনেই রয়েছে নিউজিল্যান্ড সিরিজ। এরপর ভারত সিরিজ। সবমিলিয়ে আগামী বছরেই হয়তো মাইলফলকটা স্পর্শ করবে বাংলাদেশ। তবে তার আগেই ক্রিকেটের অভিজাত শ্রেণিতে চির আসন গেড়ে নিচ্ছে টাইগাররা। একে একে বধ করে চলেছে রাজাধিরাজদের। শত শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়েও এখন আর ব্যাঘ্র থাবার সামনে টিকে থাকতে পারছে না প্রতিপক্ষ। প্রায় ১৬ বছরের টেস্ট ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে কত ঘাত প্রতিঘাতই না সহ্য করতে হয়েছে টাইগারদের। কখনো কখনো টেস্ট স্টেটাস কেড়ে নেওয়ার মতো হুমকিও এসেছে। প্রতিবারই দারুণ জয়ের তীব্র হুঙ্কারে সমালোচকদের থামিয়ে দিয়েছে টাইগাররা। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২২৬ রানের জয়ে টেস্ট আঙ্গিনায় বিজয়ী হিসেবে নিজেদের নাম লেখায় বাংলাদেশ। হাবিবুল বাশারের সেই দলটা কী দুরন্ত ম্যাচই না জয় করেছিল। অবশ্য পরবর্তী টেস্ট ম্যাচটা জয় করতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দীর্ঘ সাড়ে চার বছর। ২০০৯ সালের জুলাইতে সাকিবের নেতৃত্বে কিংসটাউন ও সেন্ট জর্জে টানা দুই ম্যাচ জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার গৌরব অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচ জিতেছিল ৯৫ রানে। দ্বিতীয়টা ৪ উইকেটে। এরপর ২০১৩ সালের এপ্রিলে, ২০১৪ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে আরও চারটা টেস্ট ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। সবগুলোই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। টাইগাররা ১৪৩, ৩ উইকেট, ১৬২ ও ১৮৬ রানে জয় করেছিল ম্যাচগুলো। গতকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতল ১০৮ রানে। ৮ টেস্টের ১টি বাশার, ২টি সাকিব ও ৫টি মুশফিকের নেতৃত্বে জিতেছে বাংলাদেশ।
এতদিন বাংলাদেশের টেস্ট জয় জিম্বাবুয়ে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বৃত্তেই আটকে ছিল। এই বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে এল টাইগাররা। এবার ব্যাঘ্র থাবায় কুপোকাত ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরনো সারথি ইংল্যান্ড। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে দুর্দান্ত দাপটে তৃতীয় দিনেই টাইগাররা ব্রিটিশ রাজের পরিসমাপ্তি ঘটায়। চট্টগ্রামে একটুর জন্য যা হয়নি, তা ঢাকায় বেশ ভালোভাবেই হলো। মেহেদী হাসান মিরাজের দুরন্ত বোলিংয়ে মাত্র এক সেশনেই ইংল্যান্ডের ১০ উইকেট নিয়ে এক বিরল দৃষ্টান্তও স্থাপন করল বাংলাদেশ। একটা টেস্ট সিরিজে কত প্রাপ্তিই না ধরা দিল। বাংলাদেশ খুঁজে পেল টেস্ট ক্রিকেটের গতিপথ। মেহেদী হাসান গড়লেন বিশ্ব রেকর্ড। প্রথম বোলার হিসেবে নিজের প্রথম দুই টেস্টের তিন ইনিংসে কমপক্ষে পাঁচটি করে উইকেট শিকারের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি। দুই টেস্টের সিরিজে শিকার করলেন ১৯ উইকেট! ইংল্যান্ডের সঙ্গে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ড্র হলো। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে তো বাংলাদেশের জন্য জয়ই! এর আগে বাংলাদেশ তিনটা টেস্ট সিরিজ জিতেছে। দুইটা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। একটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ড্র করেছে মোট ৫টা সিরিজে। ইংল্যান্ডের আগে ড্রয়ের তালিকায় জিম্বাবুয়ে ছাড়াও আছে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ২ ম্যাচের সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র করেছিল টাইগাররা। এরপর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে একই বছর ২ ম্যাচের সিরিজ ড্র করে ০-০ ব্যবধানে। ভারতের সঙ্গে একমাত্র টেস্টের সিরিজে ড্র করেন মুশফিকরা গত বছর। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ০-০ ব্যবধানে ড্র করে টাইগাররা গত বছরেই।