সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন আবিষ্কার ‘টু এম’

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন আবিষ্কার ‘টু এম’

মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ

নব্বই দশকে বিশ্ব ক্রিকেটকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের দুই খ্যাতনামা পেসার ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুস। তাদের বোলিং থেকে বারুদ বের হতো। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা দাঁড়াতেই পারত না। সামাল দিতে না পেরে অনেকে আহত হতেন। বিশ্বে অনেক বোলার থাকলেও দুজনার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়াসিম ও ওয়াকার ‘টু ডব্লিউ’ খ্যাতি পেয়েছিলেন। সত্যি বলতে কি এক দলে এমন ভয়ঙ্কর দুই পেসারের দেখা মিলেছে খুবই কম। ক্রিকেট থেকে দুজনা অনেক আগেই অবসর নিলেও বিশ্ব ক্রিকেটে তাদের অবদান ভোলার নয়। তারা সরে যাওয়ার পর পাকিস্তানে সেই বোলার এখনো আসেননি।

দুই ডব্লিউর পর বিশ্ব ক্রিকেটে এখন নতুন করে দেখা মিলেছে ‘টু এমের’। তবে পার্থক্য হচ্ছে একজন পেসার আরেকজন স্পিনার। ক্রিকেটে নতুন আবিষ্কার ‘টু এম’। দুজনই আবার বাংলাদেশের। মুস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ওয়াসিম ও ওয়াকার ইংরেজি শব্দটা যেমন ‘ডব্লিউ’ দিয়ে শুরু, মুস্তাফিজ ও মেহেদী ইংরেজি ও বাংলা শব্দটা ‘এম’ দিয়ে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুস্তাফিজের আগমন বেশি দিনের নয়। গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি প্রবেশ করেন। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক ম্যাচেই ঝড়  তোলেন মুস্তাফিজ। তিন সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল। প্রথম ম্যাচে ৫, দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ ও শেষ ম্যাচে ২ উইকেট নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন চমক সৃষ্টি করেন। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে। প্রথম ম্যাচে উইকেট শূন্য থাকলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ ও তৃতীয় ম্যাচে  ২ উইকেট পান কাটার মাস্টার খ্যাত মুস্তাফিজ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৯ ম্যাচে মুস্তাফিজের উইকেট সংখ্যা ২৬টি। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন। টি-২০তেও পারদর্শিতার ছাপ রাখছেন।  ইনজুরির কারণে বিশ্ব কাঁপানো এই বোলার মাঠের বাইরে। তার অনুপস্থিতি ভালোভাবে টের পাওয়া গেছে এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। বাংলাদেশ ১-২ ব্যবধানে সিরিজ হেরে যায়। কিন্তু দুই টেস্ট সিরিজে মুস্তাফিজের অভাব ভালোভাবে পুষিয়ে দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অথচ তার টেস্ট অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। চট্টগ্রাম অভিষেক টেস্টেই এর দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন। চট্টগ্রাম টেস্টে পেসাররা ভূমিকা রাখতে না পারলেও মেহেদী ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে একাই ৬ উইকেট নেন। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য উইকেট সংখ্যা ১টি। মেহেদীর এমন পারফরম্যান্সের পরও প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ দুর্ভাগ্যক্রমে ২২ রানে হেরে যায়। ঢাকায় দ্বিতীয় শেষ টেস্টে ফের মেহেদীর ম্যাজিক প্রদর্শন। এখানেও প্রথম ইনিংসে তিনি নেন ৬ উইকেট।

ম্যাচ জেতার জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২৭৩ রানের। মেহেদী আছে বলেই অনেকে আশা করেছিলেন এই টার্গেটে পৌঁছাতে পারবে না ইংলিশরা। কিন্তু উদ্বোধনী জুটিতে অধিনায়ক কুক ও ডাসকেট বিনা উইকেটে শতরান তুললে মনে হচ্ছিল সিরিজ জেতাটা ইংল্যান্ডের সময়ের ব্যাপার। মেহেদী, সাকিব, তাইজুল বা শুভাগত হোমরা বোলিংয়ে কেউ সুবিধা করতে পারছেন না। কিন্তু চা বিরতির পর মেহেদী তার ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।

প্রথম বলেই ডাসকেটকে সাজঘরে ফেরত পাঠান। এরপরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ইংল্যান্ডের ইনিংস। বিনা উইকেট যেখানে ১০০  সেখানে কিনা ১৬৪ রানে অল আউট। কী অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। একে একে মেহেদী তুলে নেন আরও ৫ উইকেট। যারা বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে নাক ছিঁটকিয়ে ছিল, তাদেরকে তিন দিনে হারিয়ে দিল। ক্রিকেটে বাংলাদেশের বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? ম্যাচসেরা ও সিরিজসেরা দুটোই পুরস্কার পেয়েছে মেহেদী। কি দুর্দান্ত শুরু ২ টেস্টে ১৯ উইকেট যা বিশ্ব ক্রিকেটকে নতুনভাবে কাঁপিয়ে দিল। যেমনটি কাঁপিয়ে ছিল মুস্তাফিজ। ক্রিকেটে নতুন ঝড়ের নাম ‘টু এম’। যাদের বোলিংয়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা।

সর্বশেষ খবর