শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাফল্যের পতাকা নারীদের হাতে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সাফল্যের পতাকা নারীদের হাতে

ক্রিকেট ছাড়া পুরুষরা ক্রীড়াঙ্গনে তেমন সাফল্য এনে দিতে পারছে না। অন্য খেলায় শুধু হতাশারই দেখা মিলছে। সেই তুলনায় বরং নারী ক্রীড়াবিদরা এগিয়ে যাচ্ছে। এক সময় বলা হতো ছেলেরাই যেখানে দাঁড়াতে পারছে না সেখানে মেয়েদের দিয়ে কি ভালো কিছু আশা করা যায়। সত্যি বলতে কি ফেডারেশনগুলোর কাছে নারী ক্রীড়াবিদরা ততটা গুরুত্ব পেত না। দৃষ্টি দেওয়া হতো পুরুষদের দিকেই। এখনো যে সেই অবস্থা কেটে গেছে তাও বলা যাবে না। কিন্তু সাফল্যের দিক দিয়ে তুলনামূলকভাবে নারীরাই এগিয়ে।

গেল এসএ গেমসের কথা ধরা যাক। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত গেমসে বাংলাদেশ ১৭টি সোনা জিতে নতুন রেকর্ড গড়েছিল। অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের বক্তব্য ছিল ভারতে তা ছাড়িয়ে যাবে। কিসের কি? সোনা এসেছে মাত্র তিনটি। এসএ গেমস ইতিহাসে এই ফল চরম বিপর্যয়ই বলা যায়। তিন সোনার মধ্যে দুটোই এসেছে নারীদের কৃতিত্বে। মাহফুজা খাতুন সাঁতারে দুই সোনা আর ভারোত্তোলনে এক সোনা জেতেন মারিয়া আক্তার সীমান্ত। পুরুষদের মান বাঁচিয়েছেন জুয়েল। তিনি শুটিংয়ে সোনা জেতেন। অন্যান্য পদকপ্রাপ্তির দিক দিয়ে মেয়েরাই ছিল এগিয়ে। অথচ এসএ গেমসে কোনো ইভেন্ট থেকে মেয়েরা সোনা জিতবে তা নাকি গণনার মধ্যেও ছিল না। বিশেষ করে মাহফুজা খাতুন দেখিয়ে দিয়েছেন। একাই দুই সোনা জিতে গেমসে বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড গড়েছেন। আর সীমান্তকে ভারোত্তোলনে টিকে থাকতে সংগ্রাম করতে হয়েছে। তিনিও দেখিয়ে দিয়েছেন। সোনা জেতার পর তার কান্না ভোলার নয়। এক গেমসে সোনা জিতেই দেশে আলোড়ন তোলেন দুই নারী ক্রীড়াবিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের শুধু অভিনন্দনই জানাননি, মাহফুজা ও সীমান্তের দেখাশোনার দায়িত্বও নিয়েছেন।

আসা যাক দলীয় খেলা ফুটবলে। পুরুষ জাতীয় দল চরম হতাশার পরিচয় দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। মালদ্বীপের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে। যে ভুটান মাঠে নামা মানে গোলের বন্যায় ভেসে যেত তারাই এখন বাংলাদেশকে নিয়ে ছেলেখেলা খেলছে। এশিয়ান কাপ প্রাক বাছাইপর্ব অ্যাওয়ে ম্যাচে ভুটান ৩-১ গোলে বাংলাদেশকে হারিয়েছে। যা কখনো স্বপ্নেও ভাবা যায়নি। সেই হতাশা বাস্তবে রূপ দিয়েছেন মামুনুলরা। এ নিয়ে দেশবাসী দারুণ ক্ষুব্ধ।

পুরুষ দলের ভরাডুবি ঘটছে। কিন্তু নারী ফুটবলাররা দেশকে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কিছুদিন আগেও মেয়েদের ফুটবল নিয়ে সমালোচনার শেষ ছিল না। কোনো কোনো মহল মেয়েদের ফুটবল নিষিদ্ধের দাবিও তুলেছিল। সেই নারীরা এখন ফুটবলে দেশকে সাফল্য এনে দিচ্ছে। ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে বাংলাদেশের কিশোরীরা অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে। প্রতিপক্ষদের দাঁড়াতেই দেয়নি। গোলের বন্যায় ভাসিয়ে বিজয়ের উৎসব করেছে। নেপালে অনূর্ধ্ব ১৪ ফুটবলেও বাংলাদেশের মেয়েরা শিরোপা জিতেছে। নতুন আশার আলো জেগেছে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা পেলে ফুটবলে আরও বড় সাফল্য বয়ে আনতে পারবে মেয়েরা এ নিয়ে কারও সংশয় নেই।

জাতীয় খেলা কাবাডিতে পুরুষ দলও ব্যর্থ। পদক জেতাটা  যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় নিয়েছে। সেই তুলনায় কাবাডিতে বরং নারীরাই এগিয়ে। পারফরম্যান্সই তা বলে দিচ্ছে। হ্যান্ডবলেও পিছিয়ে নেই। ঢাকায় আইএইচএফ ট্রফিতে শক্তিশালী প্রতিপক্ষদের পেছনে ফেলে ফাইনালে উঠেছিল মেয়েরা। শেষ পর্যন্ত ট্রফি জেতা হয়নি ভারতের কাছে হেরে। ক্রিকেটে টাইগাররা অপ্রতিরোধ্য। ওয়ানডে ক্রিকেটে সব দেশকে হারানোর কৃতিত্ব রয়েছে। টেস্ট ও টি-২০-তেও পারদর্শিতার ছাপ রাখছে। কিন্তু মেয়েরাও খারাপ খেলছে না। ওয়ানডে বা টি-২০-তে শক্তিশালী প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে জেতার কৃতিত্ব রয়েছে। ব্যাডমিন্টনে সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন কামরুন নাহার ডানা এখন মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদিকা। তিনি বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েদের আরও গুরুত্ব দিতে হবে। আমার বিশ্বাস, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মেয়েরা আরও বড় ধরনের সাফল্য আনতে পারবে।’

সর্বশেষ খবর