রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কষ্ট পেয়েছি কিছু বলার নেই

একান্ত সাক্ষাৎকারে রুবেল হোসেন

মেজবাহ্-উল-হক

কষ্ট পেয়েছি কিছু বলার নেই

স্বপ্নটা ফিকে হয়ে গেছে আগের রাতেই। ২২ সদস্যের প্রাথমিক স্কোয়াডেও নাম নেই পেসার রুবেল হোসেনের। এটা যেন তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না, নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেটে খেলবে বাংলাদেশ দল আর দলে নেই তিনি। চূড়ান্ত দল তো পরের কথা, অস্ট্রেলিয়ায় অনুশীলনের জন্য যে প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে সেখানেই জায়গা হয়নি। রাখা হয়েছে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে। অথচ এই রুবেল হোসেনের ক্যারিশমাটিক এক স্পেলের জন্যই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেটে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেই রুবেল হোসেনই এখন উপেক্ষিত।

অনেক দিন ইনজুরিতে পড়ে ছিলেন বাংলাদেশের এই ইয়র্কার মাস্টার। নিউজিল্যান্ড সিরিজের কথা মাথায় রেখে কঠোর অনুশীলন করে ফিরেও এসেছেন। কিন্তু লাভ কী হলো? বরং উল্টো নির্বাচকদের উপেক্ষার শিকার হলেন! গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে রুবেল ভারাক্রান্ত মনে বলেন, ‘কষ্ট পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। এটা আপনিও ভালো বুঝবেন। নিউজিল্যান্ডের উইকেটে বাউন্স থাকে। পেস বোলারদের জন্য সহায়ক। এ ধরনের উইকেটে খেলতে না পারাটা খুবই কষ্টের বিষয়। নির্বাচকরা বা ম্যানেজমেন্ট হয়তো অনেক কিছু চিন্তা করেছেন। তারা হয়তো আমার থেকে ভালো বোলার পেয়েছেন, সে কারণেই আমাকে রাখেননি। এটা সম্পূর্ণ তাদের ইচ্ছা। এখানে করার কিছু নেই। আমি কষ্ট পেয়েছি, কিছু বলার নেই।’

বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সোনায় মোড়ানো সেই শেষ স্পেল! ৩ বলে নেন ২ উইকেট। অথচ ওই সময়ে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ১২ বলে ১৬ রান। রুবেল প্রথম বলে ১৪২ কিমি গতি দিয়ে ইংলিশ ব্যাটসম্যান স্টুয়ার্ট ব্রডের উইকেট উড়িয়ে দিলেন। তৃতীয় বলে দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে ভেঙে দিলেন জেমস অ্যান্ডারসনের স্টাম্প। রুবেলের হাত ধরে স্বপ্নিল এক জয় পায় বাংলাদেশ। প্রথমবারের স্বপ্নের শেষ আটে ওঠেন টাইগাররা। বিজয়ের সেই নায়ক রুবেল এখন প্রাথমিক স্কোয়াডেও ব্রাত্য!

যেন কষ্টে, অভিমানে সেই স্মৃতি আজ আর মনে করতে চান না রুবেল, ‘ওই স্মৃতি মনে করে তো লাভ নেই। মনে হলে কষ্ট লাগে। খারাপ লাগছে। খুবই খারাপ লাগছে। আমি অনেক আশা করেছিলাম যে নিউজিল্যান্ড ট্যুরে খেলব। অস্ট্রেলিয়ায় অনুশীলনের জন্য দলে থাকব। তাই মন খারাপ থাকাটা তো স্বাভাবিক। যেহেতু আমি একজন ক্রিকেটার। আমাকে বিষয়টা কষ্ট দেবেই।’

নিজের ফিটনেস সম্পর্কে রুবেল বলেন, ‘আমার ফিটনেস অনেক ভালো আছে। আমি ইনজুরি থেকে ফিরতে অনেক পরিশ্রম করেছি। এখন সুস্থ। আমি ফিট বলেই তো বিপিএলে খেলছি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে দলেও ছিলাম। দুই ম্যাচ খেলেছি।’

ক্রিকেট রুবেলকে অর্থ-বিত্ত, সম্মান সবই দিয়েছে। তবে ভক্তদের ভালোবাসাকেই ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করেন। তাই ভক্তদের কথা চিন্তা করেই আরও অনেক দিন ক্রিকেট খেলতে চান রুবেল, ‘দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়ে আমি মুগ্ধ। আমি আরও অনেক দিন খেলতে চাই। এখন যেমন কষ্ট করছি, সামনেও কষ্ট করেই যাব। আমি যে ক’বছর খেলব কষ্ট করব। বিপিএলে আমার আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে ভালো করার। পরবর্তীতে যদি কখনো সুযোগ পাই চেষ্টা করব ভালো করার। আমি দেশের জন্যই ভালো খেলতে চাই।’

প্রাথমিক দলে সুযোগ না পাওয়ায় কষ্ট লাগলেও তা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই রুবেলের। বরং নিজেকে নতুন করে চেনাতে তিনি কাজ করে যাবেন। রুবেল বলেন, ‘টিম ম্যানেজমেন্ট যা ভালো মনে করেছেন তা করেছেন। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। তাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগও নেই। তারা আমাকে ২২ জনের স্কোয়াডে রাখেননি, এতে যে আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার বাধাগ্রস্ত হবে তা বলব না। এখন তো বিপিএল চলছে, তা নিয়েই আমি ব্যস্ত আছি। চেষ্টা থাকবে এখানে ভালো করেই ফেরার। এখানে ভালো করতে পারলে হয়তো নির্বাচকদের চোখে আসবে। তখন তারা আমাকে একটা সুযোগও দিতে পারেন।’

এবারের বিপিএলে রুবেল রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলছেন। এখানেই নতুন করে নিজেকে চেনাতে চান। সে কারণেই নতুন বোলিং অ্যাকশন ‘বাটারফ্লাই’ নিয়ে বেশ কাজ করছেন। রুবেল বলেন, ‘বাটারফ্লাই নিয়ে নতুন করে কাজ করছি। নতুন করে অ্যাপ্লাই করছি। বিপিএলে এবার বাটারফ্লাই ব্যবহার করব।’

নিজে সুযোগ না পেলেও যারা দলে জায়গা পেয়েছেন তাদের শুভ কামনা জানিয়েছেন রুবেল, ‘ভালো বলেই তো তাদের জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আশা করি তারা অনেক ভালো করবে। ওদের জন্য আমার শুভ কামনা রইল।’

তবে এখন খারাপ লাগলেও রুবেল মনে করেন গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে স্পেলটি তার ক্যারিয়ারেই সেরা। ক্রিকেট ছাড়ার পর সেটিই হবে তার সবচেয়ে মধুর স্মৃতি, ‘ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওই স্পেল ব্যাখ্যা করার মতো নয়। অসাধারণ। আমি তো ক্রিকেট বেশি দিন খেলব না। যখন ক্রিকেট ছাড়ব তখন বলতে পারব ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে দারুণ এক স্পেল বোলিং করেছিলাম। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। এটা আমার কাছে অনেক বড় একটা বিষয়। একটা গৌরবের বিষয়। এটা সারা জীবন আমার সেরা স্মৃতি হয়ে থাকবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর