মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিউজিল্যান্ড সফরে দুই অস্ত্র

মেজবাহ্-উল-হক

নিউজিল্যান্ড সফরে দুই অস্ত্র

মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে ২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। অথচ মেহেদীর আগেই তারকা খ্যাতি পেয়ে যান মুস্তাফিজ। ইতিমধ্যে কাটার মাস্টার নিজেকে এমন ভয়ঙ্কররূপে উপস্থাপন করেন যে বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরাও তাকে কুর্ণিশ করছেন।

মেহেদীও কিন্তু নিজেকে আলাদা করে চেনাতে সমর্থ হয়েছেন। বোলিংয়ে নিজের ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। অভিষেক সিরিজে যেন একাই কাঁপিয়ে দিয়েছেন ইংল্যান্ডের মতো প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট পরাশক্তিকে। দুই টেস্টে ১৯ উইকেট নেওয়ার পর মেহেদীও মুস্তাফিজের মতো ‘বিস্ময় বালক’ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পেরেছেন।

এ দুই অস্ত্র নিয়েই নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে বাংলাদেশ। কিউইদের কন্ডিশনে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে মেহেদীকে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সিরিজেই খেলতে হবে বাউন্সি উইকেটে। পেসারদের স্বর্গে তরুণ মেহেদী কতটা ভালো করতে পারবেন, তা নিয়েই এখন ভাবনা!

মুস্তাফিজের জন্য কন্ডিশন কিংবা উইকেট কোনো বিষয়ই নয়। যে কোনো উইকেটে তিনি যে সেরা তা ইতিমধ্যে বুঝিয়েও দিয়েছেন। দেশের মাটিতে দুর্দান্ত পারফর্ম করার পরও মুস্তাফিজ আইপিএল মাতিয়ে দিয়েছেন। কাটার ও স্লোয়ার মাস্টারকে নিয়ে সাদামাটা দল গড়েই শিরোপা জিতেছে সান রাইজার্স হায়দরাবাদ। ভারতের কন্ডিশনে মুস্তাফিজ তার সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন।

ইংল্যান্ডের বাউন্সি উইকেটেও মুস্তাফিজ কতটা ভয়ঙ্কর তার কাউন্টিতে সাসেক্সের হয়ে প্রথম ম্যাচেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। হায়দরাবাদের হয়ে অনেক বেশি ম্যাচ খেলার কারণে ইনজুরিতে ভুগতে হয়েছিল তাকে। সে কারণেই খুব বেশি সময়ের জন্য মুস্তাফিজকে দলে পায়নি সাসেক্স। তারপর আবার দ্বিতীয় ম্যাচেই পড়ে যান ইনজুরিতে। তবে তার আগে প্রথম ম্যাচেই ‘ম্যাচসেরা’ হয়ে নিজের সক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের এই পেস সেনসেশন। মেহেদীকে অবশ্য এখনো খুব বেশি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়নি। দেশের মাটিতে অনুকূল পরিবেশে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দারুণ দাপট দেখিয়েছেন। তবে দেশের বাইরেও মেহেদীকে নিয়ে খুব বেশি সংশয় থাকার কথা নয়। কেননা মেহেদী হচ্ছেন রীতিমতো পরিশ্রমী ক্রিকেটার। কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশ অনুকূলে নিয়ে আসতে হয় তা তিনি খুব ভালো করেই জানেন।

বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফরটা এক মাসের। ২৬ ডিসেম্বর ওয়ানডে দিয়ে শুরু, শিডিউল অনুযায়ী শেষ টেস্টটি শেষ হওয়ার কথা ২৪ জানুয়ারি। তবে এর আগে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সপ্তাহ দুয়েক অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এ সময়ই নিজেকে পরখ করে নেওয়ার একটা বাড়তি সুযোগ পাবেন মেহেদী।

এ সফরে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-২০ এবং দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলবে। এ বছর কিউইদের বিরুদ্ধে ‘বক্সিং ডে’ ওয়ানডে ম্যাচ খেলবেন টাইগাররা। ২৬ ডিসেম্বরের পর দুই ওয়ানডে হবে ২৯ ও ৩১ ডিসেম্বর। প্রথম ওয়ানডে হবে ক্রাইস্টচার্চে। এরপর দুই ওয়ানডে হবে নেলসনের স্যাক্সটন ওভালে।

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-২০ ম্যাচটি হবে ৩ জানুয়ারি নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে। ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচ হবে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে-ওভালে। একই ভেন্যুতে ৮ জানুয়ারি শেষ টি-২০।

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে রাজধানী শহর ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে। তবে এই টেস্টের পর দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে বাংলাদেশ আবার চলে যাবে সেই ক্রাইস্টচার্চে যেখানে প্রথম ওয়ানডে হবে।

এ সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য এখন নতুন চ্যালেঞ্জ। এর আগে ঘরের মাঠে দুবার ওয়ানডেতে কিউইদের হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। এবার নিউজিল্যান্ডে নিজেদের মেলে ধরার সময়।

এ সিরিজের পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলবে বাংলাদেশ। তবে তার আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় একটি সিরিজ রয়েছে। তার মানে এখন বাউন্সি উইকেটেই বাংলাদেশকে নিজেদের সামর্থ্য বুঝিয়ে দিতে হবে।

২০১৫ সালের বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। সেবারও কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে সপ্তাহ দুয়েক আগেই অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। আর এ অভিজ্ঞতাটা মূল আসরে দারুণ কাজ দিয়েছিল। সে কারণেই এবারও আগেই যাবে বাংলাদেশ। তা ছাড়া আগে মুস্তাফিজ ছিলেন না, মেহেদীও নন। এবার সেরা দুই অস্ত্র নিয়েই নিউজিল্যান্ড সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কন্ডিশন যতই প্রতিকূলে থাকুক, দুই অস্ত্র যদি একসঙ্গে কাজ করে বিশ্বের যে কোনো দলকে যে কোনো কন্ডিশনেই বোকা বানানো সম্ভব!

সর্বশেষ খবর