বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মাশরাফিকে হারিয়ে খুশি তামিম

মেজবাহ্-উল-হক

মাশরাফিকে হারিয়ে খুশি তামিম

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের আরও একটি উইকেটের পতন। শিকারি তাসকিনকে ঘিরে উৎসবে মেতে উঠল চিটাগং ভাইকিংসের ক্রিকেটাররা — রোহেত রাজীব

শেষ ওভারের আগেই ম্যাচ শেষ। ক্রিকেট যতই অনিশ্চয়তার খেলা  হোক, তাই বলে ছয় বলে তো আর ৪৮ রান সম্ভব নয়! তাই খানিকটা ফুরফুরে ম্যাজাজেই যেন ইনিংসের  শেষ ওভারটি করার জন্য আসলেন চিটাগং ভাইকিংসের গতিতারকা তাসকিন আহমেদ। কিন্তু সে কি কথা! প্রথম চার বলেই চার বাউন্ডারি! তা আবার এমন এক ব্যাটসম্যান হাঁকালেন এখন যার জাতীয় দলে খেলার সৌভাগ্যই হয়নি।

নাজমুল হাসান শান্তর টানা চার বাউন্ডারি যে ভাইকিংসের জয়ে বাধ  সেধেছে এমন নয়! ঠিকই আসরের প্রথম ম্যাচ থেকে ২৯ রানের জয় তুলে নিয়েছে চিটাগং। তবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের এই তরুণ ব্যাটসম্যানের এক একটি ক্লাসিক শট যেন ইঙ্গিত করছিল স্বপ্নিল ভবিষ্যতকে। শুধু যে তাসকিনের বলেই হাঁকিয়েছেন এমন, বাউন্ডারি  মেরেছেন ভাইকিংসের সবচেয়ে সফল বলার স্পিনার মোহাম্মদ নবীকেও। অথচ এই আফগান  বোলারই গতকাল ভিক্টোরিয়ানসের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন। একে একে লিটন দাস, আশার জাইদি, আল আমিন ও  সোহেল তানভীরে উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন। তবে নবী সুবিধা করতে পারেননি শান্তর কাছে।

ভাইকিংসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বোলার টাইমল মিলস। কাউন্টিতে ইয়র্কশায়ারের হয়ে বাজিমাৎ করে আসা এই পেসার বোলিং করেন ১৫০ কিমি গতিতে। প্রচণ্ড গতির কারণে ভিক্টোরিয়ানসের ব্যাটসম্যানরা যেন চোখে ধাঁ ধাঁ  দেখছিলেন। কিন্তু সেই মিলসকেও দারুণভাবে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন শান্ত। দল হারলেও ভিক্টোরিয়ানসের এই ব্যাটসম্যানের ৪৪ বলে অপরাজিত ৫৪ রানের ইনিংসটা মনে রাখার মতো। যদিও এর মধ্যে ১৮ রানই এসেছে তাসকিনের শেষ ওভার থেকে। শান্তর প্রশংসা করে মাশরাফি বলেন, ‘ও দারুণ ব্যাটিং করেছেন। দ্রুত উইকেট পড়ে না  গেলে আরও ভালোভাবে খেলতে পারতো।’

বিনোদনে ভরপুর ছিল তামিম ইকবালের ব্যাটিং। ৩৮ বলে করেছেন ৫৪ রান। ছয়টি বাউন্ডারির সঙ্গে দুটি বিশাল ছক্কা। বিপিএলের চতুর্থ আসরের প্রথম ম্যাচেই দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি। তবে ড্যাসিং ওপেনারকে আউট হতে হয়েছে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে। দুই নিতে গিয়েই সর্বনাশ! তবে এতে তামিমের কোনো দোষ ছিল না। অপরপ্রান্তের ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয়ের অমনোযোগিতার বলি হতে হয়েছে তাকে। প্রথম রানটি  নেওয়ার পর দ্বিতীয় রানের জন্য  দৌঁড় শুরু করে অপরপ্রান্তে পৌঁছেও যান তামিম, কিন্তু বিজয় তার ক্রিজ  থেকে এক ইঞ্চিও নড়েননি। একপ্রান্তে দুই ব্যাটসম্যান...সহজ রান আউট। রান আউট হওয়ার পরও বিজয়ের ওপর ক্ষেপে গিয়েছিলেন তামিম। হাত নাড়িয়ে হয়তো বকাঝকাও করছিলেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে বিজয়ের সাফাই গাইলেন ভাইকিংস দলপতি। তামিম বলেন, ‘আমার মনে হয় না, বিজয় এটা ইচ্ছা করে করেনি। এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল।’ মজার বিষয় হচ্ছে, তামিমের আউটের পর বিজয়কেও মাঠ ছাড়তে হয়েছে রান আউটের ফাঁদে পড়েই।

তারপরেও মাত্র তিন উইকেট হারিয়ে ১৬১ রান করে চিটাগং। অবশ্য এটা সম্ভব হয়েছে চতুর্থ উইকেটে জহুরুল ইসলাম অমি ও  শোয়েব মালিকের অপরাজিত ৬০ রানের জুটির সৌজন্যে। মালিক ২৮ বলে খেলেছেন হার না মানা ৪২ রানের ইনিংস। অমি করেছেন অপরাজিত ২৯ রান।

বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শুরুটা  মোটেও ভালো হয়নি। দলীয় নয় রানেই ইমরুল কায়েসের বিদায়। ৩৬ রানে ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান ক্যারিবীয় তারকা মারলন স্যামুয়েলসও সাজঘরে চলে যায়। তারপর কুমিল্লার ব্যাটসম্যানরা যেন আসা-যাওয়ার মিছিলে নেমে পড়েন। তবে নাজমুল হাসান শান্ত একপ্রান্ত আগলে ধরে না রাখলে অলআউটই হয়ে যেত ভিক্টোরিয়ানসরা। তবে শান্তর বীরত্বের পরও ৮ উইকেটে ১৩২ রানের বেশি করতে পারেনি কুমিল্লা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

চিটাগং ভাইকিংস : ১৬১/৩ ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস : ১৩২/৮

ফল : চিটাগং ২৯ রানে জয়ী; ম্যাচ সেরা : মোহাম্মদ নবী।

বরিশাল বুলস : ১৪৮/৬ ও ঢাকা ডায়নামাইটস : ১৪৯/২

ফল : ঢাকা ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা : মেহেদী মারুফ।

সর্বশেষ খবর