শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

টাইটানসের রোমাঞ্চকর জয়

মেজবাহ্-উল-হক

টাইটানসের রোমাঞ্চকর জয়

ব্যাট ও বলে দারুণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে খুলনাকে জিতিয়ে দেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ম্যাচসেরা পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

এখন জাতীয় দলের জার্সিতে পারটাইম  বোলার হিসেবেও খুব একটা দেখা যায় না মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। অথচ ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে। এখন পুরাদস্তুর ব্যাটসম্যান। দলের ব্যাটিং  মেরুদণ্ডই বলা যায়। কিন্তু সেই মাহমুদুল্লাহ কাল মিরপুরে আবার তার বোলিং দিয়েই খুলনা টাইটানসকে এনে দিয়েছেন রোমাঞ্চকর এক জয়।

 শেষ ওভারে রাজশাহী কিংসের দরকার ছিল মাত্র সাত রান। হাতে ছিল তিন উইকেট। ছয় বলে ছয় রান করলেও স্কোর লেবেল হবে। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বল হাতে নিয়েই বদলে দিলেন ম্যাচের চিত্র। তার প্রথম বলে দিলেন এক রান। দ্বিতীয় বল থেকে একটি বাই রান। তৃতীয় বল ওয়াইড। অর্থাৎ চার বলে তখন জয়ের জন্য রাজশাহীর দরকার চার রান। এমন পরিস্থিতির পরও  খুলনাকে ৩ রানের নাটকীয় জয় এনে দিয়েছেন। শেষ চার বলেই নিয়েছেন তিন উইকেট। 

ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে আবুল হাসান ও সামিকে আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন টাইটানস ক্যাপ্টেন রিয়াদ। তবে শেষ পর্যন্ত হ্যাটট্রিক না হলেও দলকে ঠিকই লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছেন। রুদ্ধশ্বাস এই ম্যাচে শেষ বল পর্যন্ত জয়ের সম্ভাবনা ছিল রাজশাহীর। এক বলে চার রান কঠিন কিছু নয়! কিন্তু মাহমুদুল্লাহ?র বুদ্ধিমত্তার কাছেই যেন  হেরে গেছেন কিংসরা।

রিয়াদ জানতেন, স্টাইকিং প্রান্তে থাকা ব্যাটসম্যান নাজমুল ইসলাম অপু দুর্দান্ত রিভার্স সুইপ খেলেন। তাকে আউট করতে হলে বল দিতে হবে স্ট্যাম্পের বাইরে। তবে অপু কি শর্ট খেলবেন তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য  শেষ বলটি করার আগে ঠিক ল্যান্ডিংয়ের পর পরই আটকে গেলেন। নিশ্চিত হওয়ার নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী স্ট্যাম্পের বাইরে বল করে অপুকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠে। ম্যাচ শেষ মুহূর্তটির কথা বর্ণনা করতে গিয়ে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা ছিল স্ট্যাম্পের বাইরে বল করবো। অপু রিভার্স সুইপে ভালো। আমি দেখার জন্য এ কারণেই  শেষের আগের বলে ইচ্ছা করেই একটু থেমে ছিলাম। দেখবো ও কি করতে চায় বা কি করে। দেখি যে অপু রিভার্স সুইপ করতেই গিয়েছিল। পরে আমি আমার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বল করেছি স্ট্যাম্পের বাইরে। ও মিস করেছে। আমরা জিতেছি।’

কাল হয়তো রিয়াদের মনে পড়েছিল গত টি-২০ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ভারতের কাছে হারের সেই মুহূর্তটি। মাহমুদুল্লাহ খুব কাছে থেকে দেখেছেন ক্যাপ্টেনকুল মহেন্দ্র সিং ধোনির বুদ্ধিমত্তার কাছে তারা কীভাবে হেরে গিয়েছিলেন শেষ মুহূর্তে। সেই হার থেকেই নেওয়া শিক্ষাই  যেন গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অ্যাপ্লাই করলেন।

এমন সহজ ম্যাচে হারের পর সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাওয়ার কথা কিংসের পেসার আবুল হাসান রাজুর। পুরাদস্তুর ব্যাটিং উইকেটে কি অসাধারণ বোলিংই না করলেন! ২৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। যে উইকেটে ১৬০ কিংবা ১৭০ রান হওয়ার কথা সেখানে টাইটানসকে আটকে দিয়েছিলেন মাত্র ১৩৩ রানেই। তারপরেও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় জয়টা হাতছাড়া হয়ে গেল। ১৩০ রানে অলআউট। অবশ্য ব্যাটিংয়ে আবুল হাসানের নিজের দায়ও আছে কিছুটা। শেষ মুহূর্তে যদি একটা ছক্কা হাঁকাতে পারতেন! কষ্টের এই পরাজয়ের পরও টি-২০তে এমন নাটকীয় পরিস্থিতির পর হেরে যাওয়াকে স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে আবুল হাসানের, ‘টি-২০ এমন  খেলা এখানে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। কীভাবে এখান থেকে ভালো করা যায় পরের ম্যাচ থেকে সে চিন্তাই করবো।’

কষ্টটা মুমিনুল হকেরও কম নয়! একপ্রান্ত আগলে রেখে ৬৪ রান করলেন। কিন্তু ম্যাচটা  শেষ করে আসতে পারলেন না। অধিনায়ক ড্যারেন স্যামিতো ২৩ বলে ৩২ রান করে ম্যাচটা হাতের মুঠোতেই নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু শফিউল ইসলামের করা একটি শট বলে  বোল্ড হয়ে গেলেন। অথচ যে বলটি ভালোভাবে খেলতে পারলে গ্যালারিতে গিয়ে পড়তো। স্যামির ক্যাপ্টেসি নিয়েও কথা উঠতে পারে!  কেন না যে মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিত তাকে কেন ১০ নম্বরে নামানো হলো। শেষ পর্যন্ত মিরাজ  কোনো বলই ফেস করতে পারলেন না।  মেহেদীকে ১০ নম্বরে নামাতে দেখে অবাক হয়েছেন প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহও। তিনি বলেন, ‘আমি  ভেবেছিলাম মেহেদীকে আরও আগে ব্যাটিংয়ে নামানো হবে। ও দারুণ ব্যাটিং করে। ভালো ব্যাটিং করার সামর্থ্য আছে।’ সব কিছুর পরও দিনটা আসলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদেরই ছিল। ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ২১ বলে ৩২ রান করার পর বল হাতে দুই ওভারে মাত্র ৬ রানে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়ে গেলেন। তবে কাল ঘুরে ফিরে আলোচনা হচ্ছিল ক্যারিশম্যাটিক শেষ ওভার নিয়ে। বোলিং অপসন না থাকায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও বল হাতে তুল নিয়ে করলেন বাজিমাৎ। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

খুলনা টাইটান্স : ১৩৩/৮। রাজশাহী কিংস: ১৩০/১০।

চিটাগং ভাইকিংস : ১২৪/১০। রংপুর রাইডার্স : ১২৫/১।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর