শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মাশরাফিকে হারালেন মুশফিক

মেজবাহ্-উল-হক

মাশরাফিকে হারালেন মুশফিক

আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি। গতকালও অনবদ্য ব্যাটিং করেন বরিশাল বুলসের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম —বাংলাদেশ প্রতিদিন

মাশরাফি যখন ব্যাট হাতে মাঠে নামেন তখন কুমিল্লার ইনিংসে বাকি ছিল ১০ বল। ভিক্টোরিয়ানসের স্কোর ১১১/৭। ক্যাপ্টেনকে দেখে যেন খাদে পড়ে যাওয়া কুমিল্লার সমর্থকদের মনে আশা সঞ্চারিত হয়। হঠাৎ স্টেডিয়াম ‘মাশরাফি’ ‘মাশরাফি’ স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে। কিন্তু দর্শকরা যে আশা নিয়ে উজ্জীবিত হয়ে ছিলেন তাতে গুড়ে বালি। মাশরাফি ৩ বলে ২ রান করে আউট। ৮ উইকেট হারিয়ে ভিক্টোরিয়ানসের ইনিংস থেমে যায় মাত্র ১২৯ রানে। ১৩০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৬ উইকেটে জিতে যায় মুশফিকুর রহিমের বরিশাল বুলস।

ভিক্টোরিয়ানসের ভাগ্যে পরাজয়টাও লেখা হয়ে যায় প্রথম ইনিংসেই। উইকেটে যতই জুজু থাক না কেন, ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ওভারপ্রতি সাড়ে ৬ করে রান করা বড় কোনো বিষয় নয়। তা ছাড়া ম্যাচ শেষে মাশরাফি তো বলেই দিয়েছেন, এ উইকেটে জিততে হলে অন্তত ১৫০ রান করতে হতো। তার পরও শেষ পর্যন্ত কাল কুমিল্লার রান ১২৯ হয়েছিল পাকিস্তানি তারকা সোহেল তানভীর শেষ ওভারে ২ ছক্কা হাঁকিয়েছেন বলেই।

মজার বিষয় হচ্ছে, ১৩০ রানের সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমেও বিপদে পড়েছিল বরিশাল বুলস। দুই ওপেনার কিছুটা রিল্যাক্স ভঙ্গিতে কচ্ছপের গতিতে রান করতে গিয়ে আস্কিং রেট ৯-এর কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলেন। শামসুর রহমান ২৬ বল খেলে করেন মাত্র ১৬ রান। স্টাইকরেট মাত্র ৬১.৫৩। বুলসের আরেক ওপেনার লঙ্কান তারকা দিলশান মুনাবিরা ৭৮.৯৪ স্টাইকরেটে করেন ১৫ রান। দুই ওপেনারের ধীরগতির ব্যাটিংয়ের পর বরিশালকে উদ্ধার করেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ২৩ বলে ৩৩ রান করে তার দলকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেন। একটু ভুলের কারণে ম্যাচটা শেষ করতে পারেননি তিনি। তবে তার ইনিংসটাই বরিশালকে জয়ের ট্রেনে তুলে দিয়েছিল।

মুশফিক না পারলেও বুলসের লঙ্কান তারকা থিসারা পেরেরা ঠিকই জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছেড়েছেন। ২০ বলে খেলেছেন হার না মানা ৩৪ রানের ইনিংস। তিনটি বাউন্ডারির সঙ্গে একটি বিশাল ছক্কা। তবে চতুর্থ উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে তার ২৯ বলে ৪৯ রানের জুটিটাই বুলসকে শঙ্কামুক্ত করেছে। গতকাল বোলিংও দুর্দান্ত করেছেন পেরেরা। ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে নিয়েছেন ১টি উইকেটও। অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সের জন্য ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে তার লঙ্কান এই তারকার হাতেই।

গতকাল দুই অধিনায়কের লড়াইয়ে জয়টা মুশফিকেরই হলো। টেস্ট অধিনায়কের কাছে হেরে গেলেন জাতীয় দলের ওয়ানডে ও টি-২০ অধিনায়ক মাশরাফি। এ পরাজয় কুমিল্লাকে শঙ্কায় ফেলে দিল। যদিও মাশরাফি এখনো আশাবাদী, ‘সামনে এখনো ১০ ম্যাচ বাকি। সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। হতাশার কিছু নেই। শেষ চারের মধ্যে থাকলেই তো হবে।’

কুমিল্লা হেরেছে তাদের ব্যাটিং ব্যর্থতার জন্য। দুই বিদেশি মারলন স্যামুয়েলস ও সোহেল তানভীর ছাড়া আর কেউই সুবিধা করতে পারেননি। তানভীর ৩ ছক্কায় মাত্র ১৯ বলে খেলেছেন ৩০ রানের ঝড়ো ইনিংস। ক্যারিবীয় তারকা স্যামুয়েলস ৪৮ বলে করেছেন ৪৮। ছক্কা নেই, পাঁচটি বাউন্ডারি। কুমিল্লার ছয় ব্যাটসম্যান কাল দুই অঙ্কের কোঠায় পৌঁছাতে পারেননি। বোলারদের লড়াইয়ের পুঁজিটাই দিতে পারেননি ভিক্টোরিয়ানসের ব্যাটসম্যানরা।

কুমিল্লাকে আটকে দেওয়ার জন্য প্রশংসা পেতে পারেন বরিশালের বোলাররা। পেরেরার মতো বুলসের ক্যারিবীয় পেসার ইমরিটও ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন। আল আমিন হোসেন ও তাইজুল ইসলাম দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। তবে আবু হায়দার রনি একটু বেশি রান দিলেও ২টি উইকেট নিয়ে তা পুষিয়ে দিয়েছেন।

তবে এই ম্যাচে কুমিল্লা জিতলে নিঃসন্দেহে ম্যাচসেরা হতেন সোহেল তানভীর। ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও দেখিয়েছেন ক্যারিশমা। ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। উইকেট না পেলেও ভালো বোলিং করেছেন মাশরাফি। ৪ ওভারে তিনি দিয়েছেন ২১ রান। তবে ঝড়টা গেছে মোহাম্মদ শরীফের ওপর দিয়ে। ভিক্টোরিয়ানসের এই পেসার ওভারপ্রতি ১২ করে রান দিয়েছেন।

বিপিএলের প্রথম তিন দিন গ্যালারি খাঁখাঁ করলেও গতকাল ছুটির দিন হওয়ায় কানায় কানায় পূরণ হয়েছিল স্টেডিয়াম। কিন্তু লো-স্কোরিং ম্যাচ দেখে দর্শকের মনে আশা পূরণ হয়নি। টি-২০-তে তাণ্ডবে ব্যাটিং দেখার জন্যই মাঠে আসেন দর্শকরা। কিন্তু গতকাল দুই ইনিংস মিলে মাত্র ৬টি ছক্কা ও ২০টি চার হয়েছে। বেশির ভাগ বলই ‘ডট’। ঘুমপাড়ানি ব্যাটিং দেখার জন্য তো আর দর্শকরা টিকিট কেটে মাঠে আসেন না! ছক্কা-চারের ফুলঝুরি ছাড়া কি টি-২০ জমে!

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

কুমিল্লা : ১২৯/৮ ২০ ওভার (স্যামুয়েলস ৪৮, সোহেল তানভীর ৩০, শান্ত ১৬, ইমরুল কায়েস ১২, রনি হায়দার ২/৩৪, পেরেরা ১/২০, এমিয়েট ১/২০, আল-আমিন ১/২৪, তাইজুল ১/২৫)

বরিশাল : ১৩০/৪ ১৮.৩ ওভার (পেরেরা ৩৪*, মুশফিক ৩৩, মেলন ২৬, শামসুর রহমান ১৬, নাবিল সামাদ ১/১২, সোহেল তানভীর ১/১৭, শরীফ ১/৩০, ওয়াসিম ১/৩৮)

ফল : বরিশাল বুলস ৬ উইকেটে জয়ী

 

ঢাকা : ১৩৮/৫ ২০ ওভার (মোসাদ্দেক ৫৯, মারুফ ২৫, বোপরা ২০, প্যাটেল ২/২০, মেহেদী ২/২২)

রাজশাহী : ১৩৯/৪ ১৮.১ ওভার (প্যাটেল ৪৪*, সাব্বির ৩১, উমর আকমল ২৭, আবু জায়েদ ১/১৪, সাকিব ১/১৮, শহিদ ১/২৮)

ফল : রাজশাহী ৬ উইকেটে জয়ী

সর্বশেষ খবর