সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সেঞ্চুরি সাব্বিরের উচ্ছ্বাস মুশফিকের

মেজবাহ্-উল-হক

সেঞ্চুরি সাব্বিরের উচ্ছ্বাস মুশফিকের

৬১ বলে ১২২ করে বিপিএলে নতুন রেকর্ড গড়েন সাব্বির রহমান। তবু রাজশাহীকে জেতাতে না পারায় হতাশ এই তরুণ ব্যাটসম্যান — রোহেত রাজীব

সাব্বির রহমান কি ‘ট্রাজিক হিরো’ নাকি ‘মহানায়ক’! হয়তো দুই-ই। এমন এক ইনিংস খেললেন যা বিপিএলের চার আসর মিলে সর্বোচ্চ। অথচ এই দিনে কিনা সতীর্থদের ব্যর্থতায় দল হেরে গেল। ১২২ রানের ‘রেকর্ডময়’ ইনিংসটা সাব্বিরকে গোলাপের সুবাস দিলেও দলের পরাজয়টা কাঁটা হয়ে বিঁধছে। চার রানের হারটা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। রেকর্ডময় সেঞ্চুরির পরও তাই সাব্বিরের কণ্ঠে হতাশার সুর!

১৯৩ রানের পাহাড়সম টার্গেট তাড়া করে যে দলটি ১৯ ওভারে ১৮৪ রান তুলে ফেলল, সেই দলটি কিনা হাতে ৪ উইকেট থাকার পরও শেষ ওভারে জয়ের মাত্র ৯ রান করতে পারল না। শেষ ওভারটি যেন রাজশাহী কিংসের জন্য ট্র্যাজেডি হয়ে থাকল। এবারের আসরের প্রথম ম্যাচেও রাজশাহী শেষ ওভারের বিড়ম্বনায় পড়েছিল। খুলনা টাইটানসের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে মাত্র ৭ রান করতে পারেনি। মাহমুদুল্লাহর ক্যারিশম্যাটিক বোলিংয়ে তিন উইকেট হারিয়ে মাত্র তিন করেছিল। যেন জেতা ম্যাচটা হেরেছিল। গতকাল বরিশাল বুলসের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে রচিত হলো আরেকটি ট্র্যাজেডি। কিংসের দুই ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান ও আবুল হাসান রাজু মিলে ৪ রানের বেশি করতে পারেনি।

দুই ম্যাচে শেষ ওভারে ম্যাচের ভাগ্য বদলে যাওয়ায় যেন মহাবিরক্ত সাব্বির, ‘৪০ ওভারের মধ্যে আমরা ৩৯ ওভার ভালো খেলি, কিন্তু শেষ ১ ওভারেই কি যেন হয়ে যায়। এর কারণ খুঁজতে হবে।’

এর আগে বিপিএলে আরও আটটি সেঞ্চুরি হয়েছে। ক্যারিবীয় সাইক্লোন ক্রিস গেইল একাই তিন সেঞ্চুরির মালিক। কিন্তু তারও সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ১১৬। ক্যারিবীয় দুই তারকা ডোয়াইন স্মিথ ও এভিন লুইসেরও একটি করে সেঞ্চুরি রয়েছে। পাক ওপেনার আহমেদ শাহজাদও সেঞ্চুরি করেছেন। শতক আছে বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফিস ও মোহাম্মদ আশরাফুলেরও। তবে কাল সবাইকে টপকে বিপিএলের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছেন সাব্বির রহমান। খেলেছেন মাত্র ৬১ বলে ১২২ রানের স্বপ্নিল এক ইনিংস। সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন মাত্র ৫৩ বলে।

সাব্বিরের ইনিংসে ৯টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৯টি বিশাল ছক্কা। প্রতিটি মারই ছিল দেখার মতো। গতকাল সাব্বির একটি করে ছক্কা হাঁকাচ্ছিলেন আর মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে শূন্যে ঘুষি ছুঁড়ছিলেন। সেঞ্চুরির সেলিব্রেশন ছিল বাঁধভাঙা। ব্যাট মাঠে ছুড়ে দিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে তাকান গ্যালারির দিকে। সাব্বির সেলিব্রিশনগুলোও ছিল দেখার মতো।

সাব্বির যখন ব্যাট করছিলেন তখন ১৯৩ রানের টার্গেটকে মনে হচ্ছিল সহজ ব্যাপার। প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি হচ্ছিল। সাব্বিরের ব্যাটিং দেখে প্রতিপক্ষ দলের তারকা ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফিসের মনে হচ্ছিল, ম্যাচে বরিশালের স্কোরটা ২২০ কিংবা ২৩০ হলেও রক্ষা ছিল না। রাজশাহী-ই জিতে যেত। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘ও যেভাবে খেলছিল, মনে হচ্ছিল কোনো স্কোরই বড় স্কোর নয়। সে এক অসাধারণ প্রতিভা। এমন চমৎকার ব্যাটিং সব সময় দেখা যায় না। সাব্বির যেভাবে বাউন্ডারি পার করছিল...এটি আমার দেখা সেরা ইনিংসগুলোর একটি। দেশের মাটিতে সেরা ইনিংস।’

কিন্তু সাব্বিরের বিদায়ের পরই সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়। সহজ ম্যাচকে কঠিন বানিয়ে হেরে যায় কিংস। তবে দল হারলেও ম্যাচ সেরার পুরস্কার কিন্তু সাব্বিরের হাতেই উঠেছে।

তবে সাব্বিরের ইনিংসটা যদি ‘চেরি ব্লোজম’ (বিশ্বে সবচেয়ে সুন্দর ফুল) এর সঙ্গে তুলনা করা হয়, মুশফিক ও শাহরিয়ার ইনিংস দুটি নিশ্চয়ই ‘গোপাল’ কিংবা ‘টিউলিপ’। একত্রে ফুলদানিতে রাখলে তা কতই না সুন্দর দেখায়। এক ম্যাচে আট বিদেশি বড় তারকা থাকার পরও সেরা তিনটি ইনিংস বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যানের।

গতকাল মাত্র ২১ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর যেন খাদের কিনারায় গিয়েছিল বরিশাল। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন দুই ব্যাটসম্যান মুশফিক ও শাহরিয়ার। তৃতীয় উইকেট তারা দুজনে গড়েন ১১২ রানের অসাধারণ এক জুটি। এই জুটিই বুলসকে বড় সংগ্রহ এনে দেয়।

মুশফিক ৫২ বলে খেলেন ৮১ রানের হার না মানা ইনিংস। ৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৪টি বিশাল ছক্কা। ৪টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন শাহরিয়ার নাফিসও। তিনি ৪৪ বলে খেলেছেন ৬৩ রানের ইনিংস। তিন ম্যাচে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। মুশফিকেরও দ্বিতীয় অর্ধশতক।

ঘটনা বহুল এই ম্যাচে বরিশালের জয়ের নেপথ্য নায়ক কিন্তু লঙ্কান তারকা থিসেরা পেরেরা। কেননা ব্যাট হাতে মাত্র ১১ বলে ২৪ রান করেছেন। তবে শেষ ওভারের জন্য তাকে আলাদা করে মনে রাখবেন বুলস সমর্থকরা। মাত্র চার রান দিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন।

তবে এই ম্যাচটি রাজশাহী কিংসের অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির জন্য হয়ে থাকবে ভয়ঙ্কর এক দুঃস্বপ্ন। ১৯তম ওভারে ক্যারিবীয় তারকা বাজেভাবে আউট না হলে ম্যাচের কিংসদের পক্ষেই থাকত। কষ্ট মনে সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন সাব্বিরই, ‘আমি এক রান করলেও যদি দল জেতে ভালো লাগে, সেঞ্চুরি করার পরও দল হারলে কি আর ভালো লাগে!’

সব কিছুর পরও এটি পরিতৃপ্তির এক ম্যাচ! খরা কাটিয়ে শেরেবাংলায় ছক্কা-চারের ফুলঝুড়ি। শেষ বলেও ম্যাচের ভাগ্য দুলতে থাকে সরল দোলকের মতো। উদযাপনের পর উৎকণ্ঠা। জয়-পরাজয় ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে রুদ্ধশ্বাস লড়াই। টি-২০-র এক আদর্শ ম্যাচ। রাজশাহী কিংস ও বরিশাল বুলসের ম্যাচটিকে টি-২০র সেরা বিজ্ঞাপনও বলা যায়! 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বরিশাল বুলস : ১৯২/৪, রাজশাহী কিংস : ১৮৮/৬, ফল : বরিশাল বুলস ৪ রানে জয়ী

খুলনা টাইটানস : ১৪৪/৯, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস : ১৩১/৯, ফল : খুলনা ১৩ রানে জয়ী

সর্বশেষ খবর