রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সেই শেষ ওভারেই খুলনার স্বস্তি

রাশেদুর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে

সেই শেষ ওভারেই খুলনার স্বস্তি

ফেবারিট ঢাকা ডায়নামাইটসের উইকেট পতনের পর খুলনার টাইটানস ক্রিকেটারদের উল্লাস। ম্যাচে তারা ৯ রানে জয়ী হয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

শেষ ওভারে টানটান উত্তেজনায় ম্যাচ জেতা খুলনার একটা ‘মুদ্রাদোষ’ই হয়ে গেল! প্রতিপক্ষ ভাবছে, জয়ের লক্ষ্যটা ওই তো স্পর্শ করা যায়। ঠিক এ সময়টাতেই খুলনা টাইটানসের লক্ষ্যভেদী নির্মম আঘাত! রাজশাহী কিংস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস আর চিটাগং ভাইকিংসের পর এবার খুলনার ‘লাস্ট ওভার ম্যাজিকে’র শিকার ঢাকা ডায়নামাইটস। গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মাহমুদুল্লাহদের জয়টাকে ঠিক ‘লাস্ট ওভার ম্যাজিক’ বলা যাবে না। শেষ ওভারে ১০ রান প্রয়োজন ছিল ঢাকার। খুলনার প্রয়োজন ছিল ১ উইকেট। প্রথম বলে সেই উইকেটটা শিকার করে খুলনা টাইটানসকে ৯ রানের দারুণ এক জয় উপহার দেন কেভন কুপারস।

শেষ ওভারে ম্যাচ জয়ের ধারা থেকে বেরিয়ে আসার তীব্র ইচ্ছাটা আছে খুলনা টাইটানসের। মোশাররফ হোসেন রুবেল গতকাল যেমন বললেন, ‘আমরা আরও ভালোভাবে জিততে চাই। শেষ ওভারে ম্যাচটা আসলে ফিফটি-ফিফটি হয়ে যায়।’ গতকালের ম্যাচ তো ঝুঁকে পড়েছিল ঢাকা ডায়নামাইটসের দিকেই। প্রসন্নর ২২ বলে ৫৩ রানের ইনিংসটা কাঁপন ধরিয়েছিল খুলনা শিবিরে। মাত্র ১৮ বলে চলতি বিপিএলের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ঢাকা ডায়নামাইটসের এই ব্যাটসম্যান। তার পরও সাকিবরা জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলেন না। এমনকি খুলনার কয়েকটা ক্যাচ মিসের পরও। ক্যাচ অবশ্য মিস করেছিল ঢাকাও। অধিনায়ক সাকিব এই পরাজয়ের কারণ হিসেবে প্রথম দিকে উইকেট হারানোকে দায়ী করেছেন। খুলনা টাইটানসের ছুড়ে দেওয়া ১৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে ঢাকা ডায়নামাইটস ৩০ রান তুলতেই গুরুত্বপূর্ণ ৪টি উইকেট (মেহেদি মারুফ, সাঙ্গাকারা, নাসির হোসেন ও ম্যাথু কোলস) হারিয়ে বসে। অবশ্য এর পরও ব্যাটসম্যানদের দীর্ঘ লাইন থাকায় ম্যাচটা ছিল ঢাকা ডায়নামাইটসের পক্ষেই। কিন্তু শুরুতেই খুলনার এই এগিয়ে যাওয়াটা আর রুখতে পারেননি সাকিবরা। শেষ দিকে প্রসন্নর ঝড়ো গতির ব্যাটিংয়েও (২২ বলে ৫৩; ৭টি ছক্কা) শেষ রক্ষা হয়নি ঢাকা ডায়নামাইটসের। প্রথম ১০ ওভারে ঢাকার সংগ্রহ যেখানে ৬৮/৫, সেখানে পরের ৯.১ ওভারে সংগ্রহ ছিল ৮০/৫! উইকেট থাকলে এই ম্যাচে ঢাকার জয় ছিল নিশ্চিত। তবে শেষ ওভারের চাপকে জয় করে আরও একবার প্রতিপক্ষকে হতাশ করল খুলনা টাইটানস। খুলনা টাইটানস ছয় দিনের দীর্ঘ একটা বিরতি পেয়েছে বিপিএলে। এমন বিরতি আর কোনো দল পায়নি। বিপিএলের মতো আসরের জন্য দলটাকে গুছিয়ে নিতে পর্যাপ্ত সময়ই বলতে হবে। ফিটনেস সমস্যা কাটানোর পাশাপাশি মাহমুদুল্লাহদের সামনে সুযোগ ছিল কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ারও। ম্যাচের আগের দিন এ কথা স্বীকার করেছিলেন মোশাররফ হোসেন রুবেল। দীর্ঘ বিরতিটা যে সত্যিই কাজে লাগিয়েছে খুলনা টাইটানস, গতকাল ঢাকার মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে যেন তারই প্রমাণ দিল তারা।

গতকাল ঢাকা-খুলনা ম্যাচে দারুণ একটা দৃশ্য দেখার সুযোগ পেয়েছেন ভক্তরা। খুলনা ইনিংসে তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে সাকিবকে বাতাসে উড়িয়ে দেন ফ্লেচার। বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে ক্যাচ ধরেন নাসির। ভারসাম্য ঠিক করে ক্যাচটা নিশ্চিত করতে তিনি দুবার বল বাতাসে উড়িয়ে বাউন্ডারির ভিতরে আসার চেষ্টা করেন। তবে তার হাতে বল থাকা অবস্থায় পা বাউন্ডারি লাইনে থাকায় ছক্কা হয়ে যায় ক্যাচটা। ক্যাচটা না হলেও ভক্তরা দারুণ এক দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকলেন। নাসির অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই ফ্লেচারকে তালুবন্দী করেন সানজামুলের বলে। ঢাকা-খুলনা ম্যাচের এসব দারুণ ঘটনা প্রত্যক্ষ করার জন্য অবশ্য গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তেমন দর্শক ছিল না। শুক্রবার যেমন কানায় কানায় পূর্ণ দর্শকের সমর্থন পেয়েছিলেন তামিমরা, গতকাল ওটা কেউই পাননি। গ্যালারির অর্ধেকেরও বেশি ছিল শূন্য!

ঢাকা ডায়নামাইটস পরাজিত হয়েও বিপিএলের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রাখল। ছয় ম্যাচে চার জয়ে ৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে তারা। অবশ্য এক ম্যাচ কম খেলে সমান পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে রংপুর রাইডার্স ও খুলনা টাইটানসও। আজ মুশফিকের বরিশালের বিপক্ষে জিতলেই শীর্ষে ওঠার সুযোগ পাবে মাহমুদুল্লাহর খুলনা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

খুলনা টাইটানস : ১৫৭/৫, ঢাকা ডায়নামাইটস : ১৪৮/১০

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস : ১৫২/৫, রাজশাহী কিংস : ১২০/১০

সর্বশেষ খবর