মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ক্রিকেট কতটা নিরাপদ অস্ট্রেলিয়ায়!

এমন ঘটনায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ক্রিকেটাররা। হাশিম আমলার টুইট, ‘খুবই হতাশাজনক...। রিপোর্টারের আক্রমণাত্মক আচরণে হতাশ হয়েছি।’

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে দুঃসংবাদটা ছিল যেন প্রিয়জন হারানোর চেয়েও কষ্টের! বিনা কারণে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর স্থগিত! গত বছরের ১ অক্টোবর খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর যেন অনেকে ভেঙেই পড়েছিলেন। ভেঙে পড়ার কথাও! অস্ট্রেলিয়া না আসার পেছনে কারণ দেখিয়েছেন— নিরাপত্তা হুমকি! যে নিরাপত্তার কারণে পাকিস্তানে ক্রিকেট নির্বাসিত। তাই ক্রিকেটপ্রেমীদের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণও ছিল।

বাংলাদেশ নাকি ক্রিকেট খেলার জন্য অনিরাপদ! তাই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান জেমস সাদারল্যান্ড দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছিলেন, ‘বিস্তারিত আলোচনা এবং গবেষণার পর বাংলাদেশ সফর স্থগিত করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ ছিল না।’ অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র  এবং বাণিজ্য বিষয়ক দফতর নাকি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে এ বিষয়ে ‘নির্ভরযোগ্য তথ্য’ও দিয়েছিল। অথচ বাংলাদেশ তখন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলকে এমন এক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছিল, যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে আফগানিস্তানে গিয়েও ক্রিকেট খেলা সম্ভব।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মন গলেনি। তারা অনুমানের ওপর নির্ভর করে সফর স্থগিত করে। তাদের এই অনুমানের ওপর নেওয়া সিদ্ধান্ত যে একটা ক্রিকেটপাগল দেশকে পিছিয়ে দিতে পারেন সেটা কি একবারও ভাবেনি! হয়তো ভেবেছিল, জেনে বুঝেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের ঊর্ধ্বমুখী যাত্রাকে রোধ করতে চেয়েছিল।

নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছিল। গুলশানে হলি আর্টিজান হোটেলে হামলার পরও ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে বাংলাদেশে এনে সফল সিরিজ আয়োজন করেছিল। এতে একদিকে যেমন ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে তেমনি সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার নাটকের পর অনেকে বাংলাদেশ নিয়ে যে জুজুর ভয় করেছিল সে ভয়ও কেটে গেছে।

কিন্তু যে অস্ট্রেলিয়া নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফর স্থগিত করেছে এবং অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তাদের দল পাঠায়নি সেই অস্ট্রেলিয়াতেই ক্রিকেট কতটা নিরাপদ?

অস্ট্রেলিয়া সফররত দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল অ্যাডিলেড বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হয়েছে। ‘মিডিয়া প্রটোকল’কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে স্থানীয় টিভি ‘চ্যানেল নাইনে’র রিপোর্টার হয়রানি করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিসকে। প্রোটিয়া দলপতিকে নানাভাবে হয়রানি করেছে। এক পর‌্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা কর্মকর্তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি পর্যন্ত হয়েছে টিভি রিপোর্টারের। এমন ঘটনায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ক্রিকেটাররা।

হাশিম আমলার টুইট, ‘খুবই হতাশাজনক...। রিপোর্টারের আক্রমণাত্মক আচরণে হতাশ হয়েছি।’ রিপোর্টারের উদ্দেশ্যে পরের লাইনেই আমলা লিখেছেন, ‘সৌজন্যতাবোধ বজায় রেখে বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্ন করুন, তাহলে অবশ্যই সাড়া পাবেন।’

ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানবন্দরের মতো সংরক্ষিত জায়গা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা যখন হাঁটছিলেন তখন ক্রিকেট দলের একজনকে ধাক্কা নিয়ে রিপোর্টার ডু প্লেসিসের সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছিলেন না। এক ক্রিকেটারকেও ধাক্কা দিয়েছেন ওই রিপোর্টার। ভিডিওটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

হোবার্ট টেস্ট চলাকালীন ডু প্লেসিসের বিরুদ্ধে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ এনেছে আইসিসি। বিষয়টি নিয়ে এখনো শুনানি হয়নি। তাই প্লেসিসকে দোষী সাব্যস্ত করার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়ায় প্লেসিসকে রীতিমতো ভিলেন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। সে কারণেই চ্যানেল নাইনের রিপোর্টার জোর জবরদস্তি করে নিরাপত্তাকে তোয়াক্কা না করে প্লেসিসের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন।

ঘটনাটি বিপজ্জনক হতে পারত। রিপোর্টার না হয়ে কোনো দুষ্কৃতকারীও তো হতে পারতেন। কেন না ওই রিপোর্টারের গলায় কোনো অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডও ছিল না। অস্ট্রেলিয়া কি এমন নিরাপত্তা দিল যে একজন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ছাড়াই দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের কাছে চলে গেলেন? ভাগ্য ভালো বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারপরেও যা ঘটেছে সেটাই বা কম কিসে!

ক্রিকেটারদের সঙ্গে এমন অসৌজন্যমূলক আচরণ আগের কখনো কোথায় দেখা যায়নি। যে অস্ট্রেলিয়া নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশ সফর স্থগিত করেছে তাদের দেশে এ কেমন নিরাপত্তা! যদি এমন পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়া দল পড়তো সঙ্গে সঙ্গে সফর বাতিল করে দেশে ফিরে যেত। এখন দেখার বিষয়, ক্রিকেট মোড়ল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা-আইসিসি কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে!

সর্বশেষ খবর