বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জয়ের স্রোতে ভাসছে রংপুর

মেজবাহ্-উল-হক

জয়ের স্রোতে ভাসছে রংপুর

আমাদের দলে সবার সঙ্গে সবার দারুণ সম্পর্ক। খেলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজার সবাই একে অপরকে দারুণ সহযোগিতা করেন। এ কারণে আমরা ভালো করছি। আশা করছি সামনে আরও ভালো করব

মাশরাফি বিন মর্তুজা একটা কথা বার বার বলেছেন, বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টে বড় তারকার চেয়ে বেশি প্রয়োজন দাপুটে পারফরম্যান্স। এই কৌশল দিয়েই আগের আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। বিপিএলের প্রথম দুই আসরেও চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক ছিলেন ম্যাশ। তবে এবার তার দল পয়েন্ট তালিকার তলানিতে। কিন্তু মাশরাফির কৌশল অবলম্বন করেই যেন সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে তর তর করে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে নাঈম ইসলামের রংপুর রাইডার্স।

তবে রংপুরের ধারাবাহিক জয়ের জন্য দলের বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশকেই সামনে নিয়ে আসেন অধিনায়ক। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নাঈম বলেন, ‘আমাদের দলে সবার সঙ্গে সবার দারুণ সম্পর্ক। খেলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজার, মালিক সবাই একে অপরকে দারুণ সহযোগিতা করে। আমরা কেউ কোনো কিছুর অভাববোধ করি না। কেউ খারাপ করলেও তাকে বুঝতে দেই না। আরও উৎসাহ দেই, যাতে পরের ম্যাচেই সে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে। এ কারণে আমরা ভালো করছি।আশা করছি সামনে আরও ভালো করব।’

ছয় ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে উত্তরাঞ্চলের দলটি। নাঈম ইসলামের অসাধারণ নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে রংপুর রাইডার্স। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই দলে একমাত্র শহীদ আফ্রিদি ছাড়া বড় নামের ক্রিকেটার আর আছেন? স্থানীয়দের মধ্যেও জাতীয় দলে খেলে এমন ক্রিকেটার মাত্র একজন। কিন্তু সেই সৌম্য সরকারও ব্যর্থতার চোরাবালিতে। জাতীয় দলের মতো রংপুরের জার্সিতেও তিনি ব্যর্থ। একজন ওপেনার হওয়ার পরও ছয় ম্যাচে তার সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২৩। কিন্তু সৌম্যকেও নিয়েও আশাবাদী নাঈম, ‘আমার বিশ্বাস, ও সামনে এমন কিছু করবে সবাই অবাক হয়ে যাবে। তা ছাড়া ওর আউটগুলো দেখেন, সত্যিই ওর দুর্ভাগ্য। সামনে সৌম্য ভালো করবে।’

রংপুর রাইডার্সে তারকার ছড়াছড়ি নেই তবে তারকাসমৃদ্ধ দলগুলো একের পর এক ম্যাচে উড়িয়ে দিচ্ছে। জাতীয় দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটাররাই রাইডার্সের হয়ে কী দারুণ পারফর্ম করছে। এটা সম্ভব হয়েছে অধিনায়কের বুদ্ধিমত্তা ও টিম ম্যানেজমেন্টের দুর্দান্ত কৌশলের কারণে। কখন কোন ক্রিকেটারকে কীভাবে উৎসাহ দিতে হয় তা খুব ভালো করেই জানেন ক্যাপ্টেন নাঈম।

স্থানীয়দের পাশাপাশি বড় ভূমিকা রাখছেন দুই বিদেশি শহীদ আফ্রিদি ও আফগানিস্তানের মোহাম্মদ শাহজাদ। ওপেনিংয়ে দারুণ ব্যাটিং করছেন আফগান তারকা। আর আফ্রিদি পারফরম্যান্সের পাশাপাশি যেন রংপুর রাইডার্সের মেন্টর হিসেবে কাজ করছেন। নাঈম বলেন, ‘বলতে পারেন আফ্রিদি আমাদের অভিভাবকের মতো। তিনি পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলেন, তাছাড়া এমনিতেই কত বড় তারকা কিন্তু দলে সবার সঙ্গে দারুণ ভাব জমিয়েছেন। মাঠে যদি কখনো ফিল্ডিং সাজাতে এদিক সেদিক আফ্রিদি আমার কাছে এসে বলে, নাঈম ওই ফিল্ডারকে ওইখানে দাও ভালো হবে।’

নাঈম বলেন, ‘আফ্রিদির মতো ক্রিকেটার দলে থাকা মানেই অন্যদের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা। উনি তো ব্যাটিংয়ের তেমন সুযোগই পাচ্ছেন না। আর বোলিংয়ে তার চার ওভার আমার জন্য বিশেষ কিছু।’

মোহাম্মদ মিথুন— রংপুর রাইডার্সের হয়ে ঘটাচ্ছেন এক নীরব বিপ্লব! নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য ঘোষিত প্রাথমিক দলেও তার নাম নেই। অথচ এবার বিপিএলে প্রথম ছয় ম্যাচে তার গড় কত জানেন—৯১.৫০। সত্যিই টি-২০ ক্রিকেটে এটি বিস্ময়কর ঘটনাই বটে। স্টাইকরেটও দারুণ—১১৭.৩০। মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরি করলেও মোট ১৮৩ রান করেছেন। দুর্দান্ত ফিনিসারও বলা যায়। ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নেমেও ছয় ম্যাচের মধ্যে চার ম্যাচেই ছিলেন অপরাজিত। তবে মিথুনের এমন পারফরম্যান্সে অবাক নন নাঈম, ‘মিথুন যে পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে, এর চেয়েও ওর সার্মথ্য অনেক বেশি। ও আরও ভালো করার ক্ষমতা রাখে। আমি মিথুনের এই পারফরম্যান্স দেখে মোটেও অবাক নই। ও এর চেয়েও ভালো করবে।’

সোহাগ গাজীকে তো বাতিলের খাতাতেই অনেকে ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু সেই গাজীই রাইডার্সের জার্সিতে প্রতি ম্যাচেই ক্যারিশম্যাটিক বোলিং করছেন। অধিনায়ক নাঈমের আস্থাভাজনও হয়ে গেছেন। প্রায় ম্যাচেই সোহাগকে দিয়ে বোলিং ওপেন করিয়েছেন। ছয় ম্যাচে ৭ উইকেট পেয়েছেন। তবে রান দেওয়ার ক্ষেত্রেও দেখিয়েছেন কৃপণতা। নাঈম বলেন, ‘অনেক দিন থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছে গাজী। এবার তার পুরস্কার পাচ্ছে।’

জাতীয় দলের জার্সিতে স্পিনার আরাফাত সানি যে ভূমিকা পালন করতেন, রংপুরের জার্সিতেও একই কাজ করছেন— মোক্ষম সময়ে ব্রেকথ্রু! রাইডার্সের ধারাবাহিক জয়ে তার রয়েছে বড় অবদান। খুলনা টাইটানসের বিরুদ্ধে ২.৪ ওভারে কোনো রান না দিয়ে তিন উইকেট বিস্ময়কর এক রেকর্ড করেছেন। সানিকে নিয়ে তাই উচ্ছ্বসিত নাঈম, ‘বোলিং অ্যাকশন পরিবর্তনের পর আরও ধারালো হয়েছে সানি। আগের চেয়ে এখন সে আরও ভয়ঙ্কর। ওর স্পিন খেলা খুবই কঠিন।’

যদি রুবেল হোসেনের সেই আগ্রাসী চেহেরা এখনো বিপিএলে দেখা যায়নি। তারপরেও ছয় ম্যাচে সাত উইকেট নিয়েছেন রুবেল। এই পেসারকে নিয়ে নাঈমের ভাষ্য, ‘জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়ায় কিছুটা হতাশ। তবে সে হতাশাটা মোটেও তার পারফরম্যান্সে ফেলতে দেয়নি। আমি যখন তার হাতে বল তুলে দেই সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ভালো করার।’

দলের অন্যতম সদস্য জিয়াউর রহমান ও মুক্তার আলীকে নিয়েও উচ্ছ্বসিত নাঈম, ‘মুক্তার আমাদের দলের সেরা ফিল্ডার। প্রতিটি ম্যাচে সে অন্তত ৮-১০ রান বাঁচিয়ে দেয়। আর জিয়ার দাপুটে ব্যাটিং দেখার অপেক্ষায় আছি।’

রংপুর রাইডার্সকে নিয়ে শিরোপার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন নাঈম ইসলাম। তবে বাস্তবতাও তার জানা, ‘শিরোপা এখনো অনেক দূর। তবে আমরা এখানে যেভাবে একটা ইউনিট হিসেবে কাজ করছি আশা করছি এভাবে শেষ পর্যন্ত করতে পারলে চূড়ান্ত সাফল্যও অসম্ভব নয়। দেখা যাক কি হয়!’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর