সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

গেইলের ঝড় তামিমের তাণ্ডব

মেজবাহ্-উল-হক

গেইলের ঝড় তামিমের তাণ্ডব

গেইলকে আউট করার পর আফ্রিদিকে ঘিরে রংপুর উৎসবে মেতে উঠল। তবে ম্যাচ শেষে জয়ের উৎসব করেছে চিটাগং ভাইকিংস —রোহেত রাজীব

ভাইকিংসের অন্য ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসে চা পান করছিলেন ক্রিস গেইল। খেলা দেখছিলেন, মাঝেমধ্যে হাসছিলেনও। হাস্যোজ্জ্বল গেইলকে দেখে পেছনের গ্যালারির দর্শকরাও যেন ভীষণ মজা পাচ্ছিলেন। গেইল গেইল বলে গর্জনও উঠছিল। যদিও তখন মাঠে চলছি সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটস ও মুশফিকের বরিশাল বুলসের মধ্যকার খেলা। কিন্তু শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ডের দর্শকদের দৃষ্টি যেন তখন সামনে বসা গেইলের দিকেই নিবদ্ধ ছিল। ক্যারিবীয় তারকাও দর্শকের উচ্ছ্বাস দেখে মাঝেমধ্যে হাত উঁচু করে অভিবাদন জানাচ্ছিলেন।

ছুটির দিন নয়, তারপরেও গতকাল ছিল শেরেবাংলার গ্যালারি ভর্তি। গেইল-ম্যানিয়া বলে কথা! কিন্তু রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক নাঈম ইসলাম টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যেন গ্যালারিতে তৈরি হয় থমথমে পরিস্থিতি। গেইল-ঝড় দেখার অপেক্ষাটা যেন বেড়ে যায়। তাছাড়া রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিংয়েও আগের মতো আগ্রাসী ভাবটা ছিল না গতকাল। ছক্কার ফুলঝুড়ি দেখতে আসা দর্শকরা প্রথম ইনিংসে যেন উচ্ছ্বাস প্রকাশের উপলক্ষই পায়নি। তবে দ্বিতীয় ইনিংসের সপ্তম ওভারে গর্জে ওঠে গোটা স্টেডিয়াম। সোহাগ গাজীর করা ওভারের শেষ দুই বলে লং অন দিয়ে বিশাল দুটি ছক্কা হাঁকান গেইল। এই ছক্কা দেখার জন্যই কাল ভর্তি হয়েছিল স্টেডিয়াম। আফ্রিদির ওভারেও পর পর দুই বলে দুই ছক্কা। টানা তৃতীয় ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই বিপদে পড়ে যান গেইল। বল সোজা উপরে উঠে যায়। সহজ ক্যাচ। ২৬ বলে ৪০ রান করে ড্রেসিংরুমে ফেরেন ক্যারিবীয় ঝড়। আর গেইল ফেরার পর পরই শেরেবাংলার গ্যালারিও ফাঁকা হয়ে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত তারা গ্যালারিতে ছিলেন, যাদের কাছে দলের জয়ই ছিল বড় কথা। রাইডার্সের সমর্থকরা হতাশ হলেও ভাইকিংসের ভক্তরা জয় দেখেই স্টেডিয়াম ছাড়েন।

অবশ্য ভাইকিংসকে জয়ের ভিতটা গড়ে দিয়ে ছিলেন গেইলই। তারপর আনুষ্ঠানিতাটুকুই কেবল বাকি ছিল। তবে তামিমের ইনিংসের গুরুত্বও আলাদা। ৪৮ বলে অপরাজিত ৬২ রান। গেইল ঝড়ের পর রাইডার্সের বোলারদের ওপর রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন তামিম ইকবাল। তাদের দাপুটে ব্যাটিংয়েই ২৪ বল আগেই জিতে যায় চিটাগং ভাইকিং। ৯ উইকেটের এই জয়ে রংপুরকে টপকে পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে গেল তামিমের দল।

চিটাগংয়ের টানা চতুর্থ জয়, রংপুরের টানা দ্বিতীয় হার। আগের ম্যাচেও রাজশাহী কিংসের বিরুদ্ধে হেরেছিল নাঈমরা। সে ম্যাচে দলের বড় তারকা আফ্রিদি ছিলেন না। কিন্তু গতকাল পাকিস্তানি তারকা ফেরার পরও তাদের ভাগ্য ফেরেনি। প্রথম ব্যাট করে মাত্র ১২৪ রান করার পরই যেন রাইডার্সের পরাজয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। রংপুরের ব্যাটসম্যানরা ভাইকিংসের বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি। সর্বোচ্চ ২৬ রান করেছেন সৌম্য সরকার। রাইডার্সের ব্যাটসম্যানকে কাল টি-২০র পরিবর্তে টেস্টের মেজাজে ব্যাটিং করতে বাধ্য করেছিলেন চিটাগংয়ের বোলাররা। তাই তো দেখা যায়, রাইডার্সের ৫ ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইকরেটই একশর নিচে। তারপরেও শেষ পর্যন্ত ১২৪ রান হয়েছিল সাত নম্বরে ব্যাট করতে নামা আনোয়ার আলী ১৩ বলে ২০ রান করেছিল বলেই।

এবার আসরে প্রথম থেকেই রংপুরের ব্যাটসম্যানরা এতো চমৎকার ব্যাটিং করছিলেন যে আফ্রিদি ব্যাট হাতে তেমন সুযোগই পাচ্ছিলেন না। কিন্তু কাল সুযোগ পেলেন ঠিকই তবে আটকে গেলেন অপয়া-১৩তে। আফগান তারকা মোহাম্মদ শাহজাদ ২১ রান করেছেন বটে, তবে খেলেছেন ২৮ বল। টি-২০তে প্রথম ইনিংসে ৭৫ স্টাইকরেটে ব্যাটিং করাটা অপরাধের মতো! রংপুরের ব্যাটিং স্তম্ভ মোহাম্মদ মিথুন দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার পরই যেন দুর্ভাগ্য লেখা হয়ে যায় রংপুরের ললাটেও। শেষ পর্যন্ত আর বড় স্কোর করতে পারেনি রাইডার্স। গেইল-তামিমদের বিরুদ্ধে ১২৫ রানের টার্গেট কি আর ধোপে টেকে! তাই তো চার ওভার আগেই খেলা শেষ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বরিশাল বুলস : ১৩২/৬ (২০ ওভার) মুশফিক ৩৬, যায়েদ ১/১২

ঢাকা ডায়নামাইটস : ১৩৫/৬ (১৯.২ ওভার) নাসির ৩৪, তাইজুল ২/১৯

ফলাফল : ঢাকা ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা : সাকিব আল হাসান।

রংপুর রাইডার্স : ১২৪/৬, (২০ ওভার) শাহজাদ ২১, তাসকিন ২/২৫

চিটাগং ভাইকিংস : ১২৮/১, (১৬ ওভার) তামিম ৬২, আফ্রিদি ১/২৫

ফলাফল : চিটাগং ৯ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা : তামিম ইকবাল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর