মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ব্যাটিংয়ে স্থানীয়দের আধিপত্য

মেজবাহ্-উল-হক

ব্যাটিংয়ে স্থানীয়দের আধিপত্য

আফ্রিদী-সৌম্যদের এ উচ্ছ্বাস ম্যাচ শেষে আর ছিল না —রোহেত রাজীব

কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, শহীদ আফ্রিদি, মারলন স্যামুয়েলস, ড্যারেন সামি, শোয়েব মালিক—বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) এবার বিদেশি তারকার ছড়াছড়ি। এসেছেন টি-২০র সম্রাট ক্রিস গেইলও। ছক্কা-চারের ফুলঝুড়িতে জমজমাট বিপিএল। কিন্তু সুখের বিষয়, সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সেরা পাঁচে নেই বিদেশি তারকার কেউ। পাঁচ ব্যাটসম্যানই বাংলাদেশের। এমনকি সেরা দশেও স্থানীয়দের আধিপত্য। শীর্ষ দশের নয়জনই বাংলাদেশের। বিপিএলের শীর্ষ দশে রয়েছেন মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মেহেদী মারুফ, মোহাম্মদ মিথুন, সাব্বির রহমান, শাহরিয়ার নাফিস, মোসাদ্দেক হোসেন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুমিনুল হক। কেবলমাত্র আফগান তারকা মোহাম্মদ শাহজাদ রয়েছেন আট নম্বরে।

সামনেই নিউজিল্যান্ড সফর। কঠিন সিরিজের আগে ভালোই হচ্ছে টাইগারদের অনুশীলন। তবে বিসিবির নির্বাচকদের খানিকটা ভুল প্রমাণ করে সেরা দশে এমন তিন ব্যাটসম্যান জায়গা পেয়েছেন যাদের নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে অস্ট্রেলিয়ায় অনুশীলনের জন্য ঘোষিত ২২ সদস্যের দলেও রাখেননি নির্বাচকরা। তারা হলেন— মেহেদী মারুফ, মোহাম্মদ মিথুন ও শাহরিয়ার নাফিস।

মুশফিকুর রহিম হচ্ছেন বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং নিউক্লিয়াস! কিন্তু অনেক দিন থেকেই রান খরায় ভুগছিলেন। কঠোর অনুশীলন করার পরও রান পাচ্ছিলেন। কিন্তু এবারের বিপিএল দু’হাত ভরিয়ে দিচ্ছে মুশফিককে। ৯ ম্যাচে ৩০৩ রান করে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। গড় ৫০.৫০, স্টাইকরেট ১৩৮.৩৫। এই মুহূর্তে দেশসেরা ব্যাটসম্যান তামিম। ড্যাসিং ওপেনার অনেকদিন ধরেই ফর্মের তুঙ্গে। টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খুব ভালো না করলেও তামিম ছিলেন সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। বিপিএলেও দারুণ ব্যাটিং করছেন। শুরুতে ধীরগতির হলেও এখন অনেক বেশি আক্রমণাত্মক তামিম। ৩৫.৬২ গড়ে ৯ ম্যাচে করেছেন ২৮৫ রান। হাফ সেঞ্চুরি তিনটি। এবার প্রথম ম্যাচ থেকেই বিস্ময়কর ব্যাটিং করে চলেছেন মেহেদী মারুফ। জাতীয় দলে না খেলা মারুফ তারকা বোলারদের পাড়ার বোলার বানিয়ে ছাড়ছেন। ৩৩.৩৭ গড়ে ৯ ম্যাচে করেছেন ২৬৭ রান এবং স্ট্রাইকরেট ১৪৮.৩৩। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন দুটি। অনেক দিন থেকেই ঘরোয়া লিগে দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন শাহরিয়ার। তারপরও নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য ডাক পাননি। অথচ তিন হাফ সেঞ্চুরিতে তার রান ২৫১। বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্লাসিক ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। অন্যান্য সিরিজের মতো বিপিএলেও তার যথার্থতা প্রদর্শন করে চলেছেন। নয় ম্যাচে করেছেন ২৩৭ রান। তবে এই আসরে মাহমুদুল্লাহ তার আসল ক্যারিশমা দেখাচ্ছেন বোলিংয়ে। দুই দুটি ম্যাচে শেষ ওভারে বল হাতে তুলে নিয়ে প্রায় নিশ্চিত হেরে যাওয়া ম্যাচেও জয় এনে দিয়েছেন তার দলকে। তার নেতৃত্বে সাদামাটা একটি দল নিয়েও বিপিএলের পয়েন্ট তালিকায় আধিপত্য বিস্তার করছে খুলনা টাইটানস।

বরাবরের মতো এবারের বিপিএলেও বিস্ফোরক ব্যাটিং করছেন সাব্বির রহমান। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান রাজশাহী কিংসের পক্ষে ১২২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। বিপিএলের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যা সেরা ইনিংস। অসাধারণ ব্যাটিং করছেন রংপুর রাইডার্সের ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিথুন। জাতীয় দলে সুযোগ না পেলেও বিপিএলে নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন। কালকের ম্যাচের আগে পর্যন্ত তার মোট রান ছিল ২৫৯। তবে মিথুনের গড় রীতিমতো ঈর্ষণীয়। আট ম্যাচে গড় ৮৬.৩৩! ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছেন মোসাদ্দেক হোসেন। ৪৯.৬০ গড়ে করেছেন ২৪৮ রান। মুমিনুল হককে ভাবা হয় টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে। কিন্তু জাতীয় দলের এই তারকাও বিপিএলে দারুণ ব্যাটিং করে চলেছেন। ১২০.৮৩ স্টাইকরেটে রান করেছেন ২৩২। 

এবারের বিপিএলে স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের জয়জয়কার। বিদেশি তারকাদের ছাপিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিজেদের তুলে ধরতে সমর্থ হচ্ছেন। নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে তাই এই টুর্নামেন্ট ক্রিকেটারদের অনুশীলনে বড় ভূমিকা রাখছে বলেই ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

রাজশাহী কিংস : ১২৮/৭ (২০ ওভার) ফরহাদ ৪৪, মিরাজ ৪১, আরাফাত ৩/৩১

রংপুর রাইডার্স : ৭৯/১০ (১৭.৪ ওভার) মিঠুন ২০, নাজমুল ৩/৮

ফল : রাজশাহী ৪৯ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : মেহেদী হাসান মিরাজ।

সর্বশেষ খবর