বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কাঁদছে ব্রাজিল, কাঁদছে ফুটবল

ক্রীড়া ডেস্ক

কাঁদছে ব্রাজিল, কাঁদছে ফুটবল

চ্যাপকোয়েনস দলের মাঠ কোন্ডা অ্যারিনায় মোমবাতি জ্বেলে নিহত ফুটবলারদের স্মরণ করছেন ভক্তরা —এএফপি

সান্তা ক্যাটারিনার চ্যাপকোয়েনসের স্টেডিয়াম কোন্ডা অ্যারিনা। রাতের অন্ধকারে এখানে হাজারো প্রদীপ জ্বাললেন ভক্তরা। কিন্তু যে দুর্ঘটনা ১৯ জন সম্ভাবনাময় ফুটবলারের তরুণ প্রাণ-প্রদীপ নিভিয়েছে তার ক্ষতিপূরণ কী আদৌ সম্ভব! ভক্তদের ভালোবাসা অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ছে কোন্ডা অ্যারিনার সবুজ জমিনে। আর পরিবার-বন্ধু জনদের আহাজারি ব্রাজিলের আকাশে মাতম তুলেছে। শোকাহত ব্রাজিল। শোকাহত ফুটবল দুনিয়া। কলম্বিয়ায় কোপা সাউদামেরিকানার ফাইনাল খেলতে যাওয়া চ্যাপকোয়েনসের দলটা বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গেই যেন বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ক্লাবের গায়ে লেগে আছে নিহতদের রক্তাক্ত শরীরের ঘ্রাণ।

 

 

সব ভেস্তে গেল। যে দলটা ভক্তদের উৎসবে ভাসিয়ে দিতে কলম্বিয়া যাত্রা করেছিল, তারা লাশ হয়ে ফিরে এসেছে। কিন্তু এমন মৃত্যূ কেই বা চেয়েছিল! নিয়তির লিখন অবশ্য না চাইলেও খন্ডানো যায়নি। তবে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে ফুটবল দুনিয়ার। ব্রাজিলিয়ানদেরও। এমনকি কোপা সাউদামেরিকানার ফাইনাল প্রতিপক্ষ কলম্বিয়ান ক্লাব অ্যাটলেটিকো ন্যাশনালেরও। তারা তো এরই মধ্যে চ্যাপকোয়েনসেকে চ্যাম্পিয়নই ঘোষণা করে দিয়েছে। কম্বেলের কাছে বিনীত আবেদন জানিয়েছে, খেলার প্রয়োজন নেই এবার। চ্যাপকোয়েনসেকে বিজয়ী ঘোষণা করে নিহতদের পরিবারকে চ্যাম্পিয়নের প্রাইজমানি দিয়ে দেওয়া হোক। অন্তত কিছুটা হলেও যদি লাঘব হয় দুঃখভার! কেবল ব্রাজিল কিংবা কলম্বিয়াতেই নয়, এই মাতম চলছে বিশ্ব জুড়ে। লিওনেল মেসি আর নেইমারদের মতো তারকা ফুটবলার ছাড়াও অনেকেই নিহতদের পরিবারের প্রতি জানিয়েছেন গভীর সমবেদনা। আর্জেন্টাইন ফুটবল এসোসিয়েশন তো এরই মধ্যে চ্যাপকোয়েনসেকে বিনা মূল্যে ফুটবলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি শনিবারের ‘এল ক্ল্যাসিকো’তেও এর প্রভাব পরতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নিহত ফুটবলারদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হবে এল ক্ল্যাসিকো শুরুর আগে। লিওনেল মেসি দিন কয়েক আগেও বিমানটা ব্যবহার করেছেন। লামিয়া বলিভিয়ার সিএ চার্টার ফ্লাইটটি ব্রাজিলের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলতে যাওয়ার সময়ই ব্যবহার করেছিলেন মেসিরা। সেবার যদি এই দুর্ঘটনা ঘটতো! মেসিরাও হয়তো অতীত হয়ে যেতেন! এমনকি যে অ্যাটলেটিকো ন্যাশনালের বিপক্ষে ফাইনাল খেলতে গিয়েছিল চ্যাপকোয়েনস সেই দলও নাকি বেশ কয়েকবার এই বিমান ব্যবহার করেছিল। মেসিদের মতো তারকা ফুটবলাররা বেঁচে গেলেও ব্রাজিল হারাল বেশ কয়েকজন উঠতি তরুণ ফুটবলারকে। যারা হতে পারতেন আগামী দিনের নেইমার। বার্সেলোনার এ ব্রাজিলিয়ান তারকার কণ্ঠচিরে তার বার বারই বেরিয়ে আসছে, ‘এটা কিভাবে মেনে নেওয়া যায়। এটা অসম্ভব!’ কিন্তু নিয়তিকে রুখবার সাধ্য নেই নেইমারেরও।

৮১ জন যাত্রী নিয়ে বিমান কলম্বিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্র করেছিল। মেডেলিনের কাছে গিয়ে বিধ্বস্ত বিমানের ৭৬ জন যাত্রীই মৃত্যূবরণ করেছেন। জীবীত পাঁচ জনের অবস্থাও সঙ্গীন। এর মধ্যে তিন জন ফুটবলারও রয়েছেন। তারা বেঁচে থাকলেও বাকি জীবনটা কাটাতে হবে ভয়াবহ এক বিভীষিকার মধ্যেই। বন্ধু হারানোর দুঃখ বয়ে বেড়াতে হবে সারাটা জীবন!

এদিকে এক বিবৃতিতে চ্যাপকোয়েনসের ফাইনাল প্রতিপক্ষ অ্যাটলেটিকো ন্যাশনাল ল্যাটিন ফুটবলেল সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ কম্বেলের কাছে আবেদন জানিয়েছে, চ্যাপকোয়েনসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হোক। ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘এই ব্যথা আমাদের হৃদয় ঘ্রাস করেছে। শোকে আচ্ছন্ন করেছে আমাদেরকে। এমনটা আমরা শুনতে চাইনি। এটা সত্যিই দূর্ভাগ্যজনক।’ তারা বলেছে, ‘চ্যাপকোয়েনস ২০১৬ সালের কোপা সাউদামেরিকানার চ্যাম্পিয়ন। সারা জীবনের জন্য চ্যাম্পিয়ন তারা।’ কম্বেল অবশ্য এই আহ্বান কতটা আমলে নিবে বলা মুশকীল। অবশ্য এরই মধ্যে প্রথম লেগের খেলা (আজ) পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয় লেগের খেলাও কবে হবে বলা যাচ্ছে না। যে যাই হোক, চলে যাওয়া ফুটবলারদের আর ফিরে পাওয়া যাবে না। নিষ্ঠুর এ সত্যকে মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে ফুটবল প্রাঙ্গনকে!

সর্বশেষ খবর