মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কোচ যখন বদলি গোলরক্ষক!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

কোচ যখন বদলি গোলরক্ষক!

কোচের কাজ খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেওয়া। কিন্তু কোচ বদলি গোলরক্ষক হিসেবে মাঠে নেমেছেন এই ঘটনা কি কারও জানা আছে?’ পৃথিবীর আর কোনো আসরে এমন ঘটনা না ঘটলেও বাংলাদেশে ঘটেছে। ১৯৮৭ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানে খেলতে উড়ে আসেন ইরানের নাসের হেজাজি, নালজেগার ও বোরহান জাদে। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে হেজাজি ইরানের গোলরক্ষক ছিলেন। ঢাকায় আসার পর মোহামেডান গোলরক্ষক হিসেবে তার নাম রেজিস্ট্রেশন করে। সেই মৌসুমে মোহামেডানে নিয়মিত প্রশিক্ষক ছিলেন না। আগের মৌসুমে আলী ইমামের প্রশিক্ষণে মোহামেডান তিন বছর পর লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। তারপরও ক্লাবের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ১৯৮৭ সালে আলী ইমামকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

ভালো মানের কোচ খুঁজে পাচ্ছিল না মোহামেডান। হেজাজি আসার পর তাকে অফার দেওয়া হয় কোচ কাম গোলরক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে। হেজাজি রাজিও হয়ে যান। সেই মৌসুমে মোহামেডানের নিয়মিত গোলরক্ষক ছিলেন ছাইদ হাছান কানন। তাই মাঠে নামার প্রয়োজন পড়ত না হেজাজির। তবুও বদলি গোলরক্ষক হিসেবে মাঠে নামতে হয়। লিগের শেষ ম্যাচে চির প্রতিন্দ্বন্দ্বী মোহামেডান-আবাহনী মুখোমুখি। ৩ পয়েন্টে এগিয়ে থাকায় ম্যাচ ড্র করলেই আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। গ্যালারি ভরা দর্শক। ম্যাচে টান টান উত্তেজনা। প্রথমে গোল করে এগিয়ে যায় মোহামেডান। পরে আবাহনী ২-১ গোলে এগিয়ে। এই অবস্থায় পেনাল্টি থেকে ম্যাচে সমতা ফেরান মোহামেডানের নাইজেরিয়ান ফুটবলার এমেকা।

২-২ গোলে ড্র চলছিল। আবাহনী ম্যাচ শেষ হতে খুব একটা বাকি নেই। আবাহনীর সমর্থকরা ধরেই নিয়েছিলেন তাদের প্রিয় দল শিরোপা জিততে যাচ্ছে। উৎসব শুরু হয়ে যায়। অন্যদিকে মোহামেডানের গ্যালারি একেবারে নীরব। ম্যাচ তখন মিনিট সাতেক বাকি। তখুনি ঘটে দুর্ঘটনা। আবাহনীর ইরাকি তারকা করিম মোহাম্মদের হেড রক্ষা করতে গিয়ে হাতে ব্যথা পান গোলরক্ষক কানন। আঘাত এতটা গুরুতর ছিল যে কাননকে শুধু মাঠ ত্যাগ করতে হয়নি। হাসপাতালেও নেওয়া হয়। কালো প্যান্ট আর আর সাদা টি-শার্ট পরে কোচের দায়িত্ব পালন করছিলেন হেজাজি। মাঠেই ড্রেস পরিবর্তন করে বদলি গোলরক্ষক হিসেবে নেমে পড়েন হেজাজি।

গোলরক্ষক অথচ হেজাজি ডি-বক্সের বাইরে এসে বার বার শিষ্যদের দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এমন সময় আবাহনী বিপজ্জনক আক্রমণ করলেও হেজাজি দৃঢ়তার সঙ্গে রুখে দেন। বল ধরেই তিনি উড়িয়ে মারেন অধিনায়ক রণজিতের কাছে। রণজিত দেরি না করে বল ঠেলে দেন খোরশেদ বাবুলের কাছে। বাবুল বাঁ দিক থেকে কোণাকুণি শটে গোলরক্ষক মহসিনকে পরাস্ত করলে ওই ম্যাচে মোহামেডান ৩-২ গোলে জিতে যায়। দুই দলের পয়েন্ট সমান হওয়ায় আর্মি স্টেডিয়ামে প্লে অফ ম্যাচের ব্যবস্থা করা হয়। ২-০ গোলে জিতে মোহামেডানই চ্যাম্পিয়ন হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর