বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাজশাহী না খুলনা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

রাজশাহী না খুলনা

মাত্র ৮৬ রানে অলআউট খুলনা টাইটানস। বিপিএলে ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার পর উৎসবে মেতেছেন ঢাকা ডায়নামাইটসের ক্রিকেটাররা —রোহেত রাজীব

বিপিএলের প্রথমার্ধে ছয় ম্যাচের দুটিতে জয় চারটিতে পরাজয়। রাজশাহী কিংসের ভবিষ্যত্টা ভক্তদের কাছে যেন দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার ছিল। কিন্তু বিপিএলের দ্বিতীয়ার্ধেই পট পরিবর্তন হয়ে যায় পুরোপুরি! পরের ছয় ম্যাচে চারটা জয়! মোট ছয় জয়ে ১২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে রাজশাহী কিংস স্থান করে নেয় সেরা চারে। এর অর্থই হলো, কিংসদের সামনে দারুণ সুযোগ বিপিএলের নতুন কিং হওয়ার! সুযোগের সদ্ব্যবহারই করলেন ড্যারেন স্যামিরা। গতকাল এলিমিনেটর ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসকে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ৩ উইকেটে হারিয়ে ফাইনাল খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখল রাজশাহী কিংস।  এদিকে ঢাকা ডায়নামাইটস্ ৫৪ রানে  খুলনা টাইটান্সকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে গেছে। তবে খুলনার আশা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আজ তারা মুখোমুখি হবে রাজশাহীর বিপক্ষে। যারা জিতবে তারাই ৯ ডিসেম্বর ফাইনালে লড়বে ঢাকার বিপক্ষে।

চিটাগং ভাইকিংসকে নিয়ে ভয় ছিল রাজশাহীর। তামিম ঝড়ের শঙ্কা তো ছিলই, পাশাপাশি ক্রিস গেইল মূর্তিমান আতঙ্ক। শঙ্কাকে সত্যি করেই গেইল করেছিলেন ৩০ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। দর্শকরা দেখতে পেল ৫টি দর্শনীয় ছক্কার মার। গেইলের পাশাপাশি ছিল তামিম ঝড়ও। ৪৬ বলে ৫১ রানের ইনিংসে তামিম কোনো ছক্কা না হাঁকালেও মেরেছেন ৬টি চার। কাঙ্ক্ষিত দুই দুটি ঝড়ের পরও চিটাগং ভাইকিংসের রান ১৪২’র বেশি উঠেনি। এর প্রধান কারণ রাজশাহী কিংসের ক্যারিবীয় ‘কৃপণ’ বোলার উইলিয়ামস। তিনি চার ওভার বোলিং করে মাত্র ১১ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন! অবশ্য কৃপণ বোলার হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছেন ড্যারেন স্যামি এবং ফরহাদ রেজাও। স্যামি ৩ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ২০ রান। আর ফরহাদ রেজা ৪ ওভার বোলিং করে ২৬ রান দিয়ে শিকার করেছেন ২ উইকেট। স্যামিদের কৃপণতা কিন্তু ব্যাট হাতে দেখা যায়নি। উইকেটে নেমে উদার হস্তে রান তুলে নিয়েছেন তারা। ৯ বল হাতে রেখেই ১৪৩ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় রাজশাহী কিংস! স্যামিদের বোলিং যেমন ভালো হয়েছে চিটাগং ভাইকিংসের ব্যাটিং ততোটাই খারাপ হয়েছে। তামিম তো বলেই দিলেন, ‘স্থানীয়রা আরেকটু ভালো করলে আমাদের ফলাফলটা ভিন্নও হতে পারতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘অন্য দলগুলোর দিকে দেখুন। ঢাকা, রাজশাহী আর খুলনায় কিন্তু স্থানীয়রা পারফর্ম করেই চলেছে।’ গেইলকে পেয়ে দারুণ খুশি ছিলেন তামিম। ‘ওর সঙ্গে খেলা সত্যিই ভিন্ন অভিজ্ঞতা। যে বলগুলো অন্য ব্যাটসম্যানরা এক কিংবা দুই রান করে সেখানে গেইল ছয় মেরে দেয়।’ গেইল নাকি মন-প্রাণ উজাড় করে খেলেছেন। কিন্তু বাকিদের উপর সন্তুষ্ট নন তামিম। ক্রিকেটটা এক/দুই জনে হয় নাকি! এখানে এগার জনকেই সমান্তরালে কিংবা প্রায় সমান্তরালে থেকে পারফর্ম

করতে হয়। চিটাগং ভাইকিংসের পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করেন শোয়েব মালিক (১৪!)।

জবাব দিতে নেমে রাজশাহী কিংসের অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। একের পর এক উইকেটের পতন এক সময় কিংসদের পরাজয়টাই স্পষ্ট করে তুলছিল। কিন্তু রুখে দাঁড়ান অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। তার সঙ্গে লড়াই করেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান নুরুল হাসানও। ৩৪ রান করে নুরুল আউট হলেও উইকেটে টিকে থাকেন স্যামি। তার ২৭ বলে করা ৫৫ রানের ইনিংসই জয় উপহার দেয় রাজশাহী কিংসকে। এর মধ্যে তিনি ২টা ছক্কা ছাড়াও ৭টা চার হাঁকান। শেষদিকে ফরহাদ রেজার ১১ বলে করা ১৯ রানও দলকে জেতাতে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। তবে দুরন্ত হাফ সেঞ্চুরি করে ম্যাচসেরার পুরস্কার বগলদাবা করেন ড্যারেন স্যামিই। প্রথমবারের মতো বিপিএলের ফাইনাল হাতছানি দিচ্ছে রাজশাহী কিংসকে। গতকাল খুলনা হেরে যাওয়ায় আজকের ম্যাচে মরণ কামড় দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অন্যদিকে উজ্জীবিত রাজশাহী। দেখা যাক ফাইনালে সাকিবের প্রতিপক্ষ হয়ে খেলবেন কে— স্যামি না মাহমুদুল্লাহ? ৯ ডিসেম্বর শিরোপার লড়াই জমে উঠবে, এ প্রত্যাশা ক্রিকেটপ্রেমীদের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

চিটাগং ভাইকিংস : ১৪২/৮, ২০ ওভার (তামিম ৫১, গেইল ৪৪, সোয়েব মালিক ১৪, জহুরুল ইসলাম ১১; উইলিয়ামস্ ৪/১১, ফরহাদ রেজা ২/২৬)

রাজশাহী কিংস : ১৪৩/৭ ১৮.৩ ওভার (স্যামি* ৫৫, নুরুল হাসান ৩৪; সাকলাইন সজীব ২/২৪, শুভাশিস রায় ২/২৮) ফল : রাজশাহী ৩ উইকেটে জয়ী।

ঢাকা ডায়নামাইটস্ : ১৪০/৮, ২০ ওভার (রাসেল ৪৬, ব্রাভো* ২৩; জুনায়েদ ৪/২৪, ফ্লেচার ২/২২)

খুলনা টাইটান্স : ৮৬/১০, ১৬.২ ওভার (ফ্লেচার ২৮, আরিফুল ১৪, ব্রাভো ৩/১০, রাসেল ৩/১৬) ফল : ঢাকা ৫৪ রানে জয়ী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর