সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ক্যালেন্ডার নিয়ে সারেন্ডারের ভয়!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্যালেন্ডার নিয়ে সারেন্ডারের ভয়!

বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক দূরে এগিয়ে গেছে। টেস্ট, ওয়ানডে বা টি-২০ কোনো ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। টাইগারদের পারফরম্যান্সে বিশ্ব অভিভূত। সাম্প্রতিককালে হকিও প্রশংসিত নৈপুণ্য প্রদর্শন করছে। কিন্তু ফুটবলে বড্ড বেহাল অবস্থা। অথচ এক সময়ে ফুটবলই ছিল দেশের প্রধান জনপ্রিয় খেলা। এতটা খারাপ অবস্থা যে ভুটানের মতো দুর্বল প্রতিপক্ষের কাছে লজ্জাকর হার মানতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ফুটবলকে ঘিরে ক্রীড়ামোদীরা ভালো কিছু আশা করতে পারছে না। মূল সমালোচনা হচ্ছে এক সময়ে মাঠ কাঁপানো ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিনকে ঘিরেই। ২০০৮ সালে তিনি বাফুফে সভাপতি হওয়ার পর ক্রীড়ামোদীদের প্রত্যাশা ছিল নিস্তেজ ফুটবল চাঙ্গা হয়ে উঠবে। অথচ তিন মেয়াদে সালাউদ্দিন অভিভাবকের চেয়ারে বসে থাকলেও উন্নয়নের চেয়ে ফুটবলের অধঃপতনটা হয়েছে বেশি।

এত কিছুর পরও সালাউদ্দিন ফুটবল উন্নয়নে আশাবাদী। তিনি বলেছিলেন, দীর্ঘমেয়াদে কর্মসূচিতে আমি ফুটবলকে একটা পর্যায়ে পৌঁছে দেব আশা রাখি। আসলে বাফুফের নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা ছিল না। যাক শেষ পর্যন্ত চার বছরের পরিকল্পনা অর্থাৎ ক্যালেন্ডার ঘোষণা করেছেন সালাউদ্দিন। শনিবার বাফুফে ভবনে ৭১ পৃষ্ঠার ঘোষিত এই পরিকল্পনায় নতুন কিছু পাওয়া যায়নি। তবে যে ক্যালেন্ডার ঘোষিত হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে ফুটবলে উন্নয়ন ঘটবে এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। ভয় হয় সালাউদ্দিন তো অনেক কিছুই বলেন। বাস্তবে সিকিভাগও তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয় না। ক্লাবগুলোর চাপে সারেন্ডার করে বসে। এবার তার ব্যতিক্রম ঘটবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। বাফুফে সভাপতি অবশ্য বলছেন, কারও চাপে নতিস্বীকার করবেন না। যা বলা হয়েছে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে। গোটা পরিকল্পনা দুই পর্বে ভাগ করে একদিকে রাখা হয়েছে নিয়মিত আয়োজন, অন্যদিকে তৃণমূলের উন্নয়ন। এমন বিশাল পরিকল্পনায় ফান্ড কোথা থেকে আসবে তা পরিষ্কার করে জানাননি বাফুফে সভাপতি। শুধু বলেছেন, সময় এলে সব জানতে পারবেন। চার বছর পরিকল্পনায় যারা এখন ১৬ বছরের তারা হবে ২০ বছরের যুবক। ওরাই এই অঞ্চলের যুব চ্যাম্পিয়নশিপ এনে দেবে। ১৯৯৯ সালে সাফ গেমসে যারা সোনা জিতেছিল তাদের অধিকাংশ ছিল তরুণ ফুটবলার। সালাউদ্দিন বলেছেন, এদের নিয়েই অন্তত সাফের ফাইনালে দেখতে চান তিনি।

২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর পেশাদার লিগের দলবদল হবে এপ্রিলে। দ্বিতীয় স্তরের লিগ চ্যাম্পিয়নশিপেও দলবদল হবে একই সময়ে। দুটি লিগই হবে একসঙ্গে। মে মাসে ফেডারেশন কাপ, জুনে লিগ। পাঁচ মাস ধরে চলবে এই আয়োজন। নভেম্বরে হবে স্বাধীনতা কাপ। ক্লাবগুলোর অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্ট দিয়ে শেষ হবে মৌসুম। চ্যাম্পিয়ন শিপেও যুব টুর্নামেন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চট্টগ্রামে দ্বিতীয় শেখ কামাল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি। গত দুই বছর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ জানুয়ারিতে হলেও এবার মার্চে। তাও হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ বাফুফে আগাম বলে দিয়েছে এই শিডিউলে পরিবর্তনও হতে পারে। ডিসেম্বরে ঢাকায় সাফ টুর্নামেন্ট। পরের বছর সাফ ক্লাব কাপ টুর্নামেন্ট।

তৃণমূল পর্যায়ের উন্নয়নেও বাফুফে জোর দিয়েছে। অনেক দিন পর শেরেবাংলা ও সোহরাওয়ার্দী কাপ মাঠে নামছে। শেরেবাংলা কাপ নাম বদল করে জাতীয় জেলা চ্যাম্পিয়নশিপ ও সোহরাওয়ার্দী কাপের নাম অনূর্ধ্ব-১৮ জেলা যুব চ্যাম্পিয়নশিপ। যুব চ্যাম্পিয়ন ফেব্রুয়ারি ও জেলা চ্যাম্পিয়নশিপ হবে আগামী বছরের শেষের দিকে। অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬, ১৮ ফুটবলারদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হবে। মেয়েদের হবে অনূর্ধ্ব-১৪ ও ১৬ আবাসিক ক্যাম্প। অনূর্ধ্ব-১২ ও ১৪ বিভাগীয় টুর্নামেন্টসহ তৃণমূল কোচেস ট্রেনিং, কোচেস এডুকেশন বেশি গুরুত্ব পাবে। তবে চার বছরের পরিকল্পনায় দেশের রেফারিদের মান উন্নয়ন ও জেলার লিগগুলো নিয়মিত করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ খবর