সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সংকটাপন্ন লক্ষ্মীপুর ক্রীড়াঙ্গন

সাইদুল ইসলাম পাবেল, লক্ষ্মীপুর

সংকটাপন্ন লক্ষ্মীপুর ক্রীড়াঙ্গন

মাঠ দখল করে ভবন তৈরি হচ্ছে। এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে লক্ষ্মীপুরের খেলার মাঠ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

জেলার শিশু-কিশোরসহ প্রায় ১৬ লাখ জনগোষ্ঠীর বিনোদনের জন্য একমাত্র খেলার মাঠ হিসেবে ১৯৯৬ সালে ১১ একর জমির ওপর লক্ষ্মীপুর জেলা স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে জেলার মানুষ নিজ নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত স্কুল-কলেজ মাঠে বিকালে খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। পাড়ায় পাড়ায় ক্লাব ছিল। খেলাধুলা চলত বিভিন্ন ধরনের। কেউ খেলতেন গোল্লাছুট, কেউ হা-ডু-ডু, কানামাছি, কেউবা দাবা, হ্যান্ডবল, আবার কেউ ব্যাডমিন্টন, লাঠিখেলাসহ হৈচৈ করে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। বর্তমানে এখন আর আগের মতো এসব খেলা হয় না। গ্রামে গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবগুলো এখন প্রায় বিলুপ্ত, হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠগুলো।

জেলার স্টেডিয়ামটি ছাড়া পাড়া-মহল্লার অনেক মাঠ এখন খালি নেই, সম্প্রসারিত একাডেমিক ভবন নির্মাণ, বাউন্ডারি না থাকা ও তদারকির অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে এসব মাঠ।

সরেজমিন, সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়নের টুমচর আসাদ একাডেমি উচ্চবিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বিদ্যালয়টির সামনে একটি বড় খেলার মাঠ ছিল। ওই এলাকার ক্রীড়ামোদী মানুষসহ সবার কাছে চিরচেনা ছিল ওই স্কুল মাঠ। কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ হলেও ওই মাঠকেই বেছে নিতেন রাজনীতিকরা। আর বর্ষাকালে প্রতিদিন ফুটবল খেলা হতো ওই মাঠে। কখনো টুর্নামেন্ট বা কখনো স্থানীয় যুবকরা খেলায় মেতে উঠতেন। প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতেন বিবাহিত ও অবিবাহিতরাও। শীতের মৌসুমে ক্রিকেট খেলত ছাত্র ও যুব সমাজ। খেলার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন বিভিন্ন এলাকার খেলোয়াড়রা।

বর্তমানে ওই মাঠের ওপর একটি কলেজ স্থাপন করা হয়। এতে খেলার মাঠটি সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। একইভাবে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন শাকচর মদিন উল্লাহ চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, শহরের কলেজিয়েট উচ্চবিদ্যালয় মাঠেরও একই অবস্থা। ওই মাঠগুলোতে এখন সম্প্রসারিত ভবনের কাছ চলছে। এভাবে জেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ হারিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ মাঠ, দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজ ও এন কে উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, রামগতির আ স ম আবদুর রব কলেজ মাঠ, রায়পুরের এল এম পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, চন্দ্রগঞ্জের কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ মাঠ ও প্রতাপগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ, কমলনগরের হাজিরহাট মিল্লাত একাডেমি মাঠ, উপকূল কলেজ মাঠ এখন সংস্কারের অভাবে খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বর্তমান সময়ে এসেও পরিপূর্ণতা পায়নি জেলার স্টেডিয়ামটি। যেখানে নেই পরিপূর্ণ গ্যালারি, গড়ে ওঠেনি ইনডোর স্টেডিয়াম, সুইমিংপুল, জিমনেশিয়াম। 

এতে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও গড়ে উঠছে না জাতীয় মানের খেলোয়াড়, আর আগ্রহ হারাচ্ছে তরুণ সমাজ। শিশু-কিশোররা খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। খেলার জন্য মাঠ না পেয়ে শিশুদের বাড়ির ছাদ, উঠানে কিংবা বারান্দাতেই খেলতে হচ্ছে। অনেক শিশু, কিশোর ও যুব সমাজ টিভি-কম্পিউটার, ভিডিও গেমসনির্ভর হয়ে পড়ছে, আবার অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

সর্বশেষ খবর