শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দেশি স্ট্রাইকারদের স্ট্রেংথ কম

ক্রীড়া প্রতিবেদক

দেশি স্ট্রাইকারদের স্ট্রেংথ কম

সাখাওয়াত হোসেন রনি —ফাইল ফটো

শেখ জামালের বিপক্ষে বদলি ফুটবলার হিসেবে নাবিব নেওয়াজ জীবন যখন মাঠে নামেন, তখন নির্ধারিত সময়ের বাকি এক মিনিট। মানিয়ে নিতেই যেখানে ৫-১০ মিনিট সময় লাগার কথা, তখন জীবন দুই মিনিটে দুই গোল করে শুধু আবাহনীকে জয়ই উপহার দেননি, ধানমন্ডি পাড়ার দলটিকে একেবারে কাছাকাছি নিয়ে গেছেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) বিদেশি স্কোরারদের ভিড়ে জীবনের দুই গোল এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের স্ট্রাইকারদের প্রাণ বায়ু হিসেবেই কাজ করছে। বাংলাদেশের একজন স্কোরার দুই মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করার রেকর্ড এবারের বিপিএলে এই প্রথম। কারণ, বিপিএলে এখন পর্যন্ত গোলদাতাদের তালিকায় বিদেশি ফুটবলারদের অবস্থান একচেটিয়া। দেশি স্ট্রাইকারদের মধ্যে মোহামেডানের সবুজ ৭ গোল করে তালিকায় রয়েছেন ৯ নম্বরে। ১৮ গোল করে সবার উপরে আবাহনীর সানডে চিজোবা। পরের ছয়জনও বিদেশি। এতে করেই ফুটে উঠেছে দেশি স্ট্রাইকারদের দৈন্যতা। অবশ্য জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম দেশি স্ট্রাইকারদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে নারাজ। মামুনুলের চোখে দেশি ও বিদেশি স্ট্রাইকারদের মূল পার্থক্য স্ট্রেংথ। সামর্থ্য নয়।

কাজী সালাউদ্দিন, এনায়েত, নওশেরুজ্জামান, শেখ মোহাম্মদ আসলাম, সালাম মুর্শেদী,  আলফাজ, নকিব, জাহিদ হোসেন এমিলিদের মতো স্ট্রাইকাররা মাঠ মাতিয়েছেন। এসব স্ট্রাইকার সমানতালে পাল্লা দিয়েছেন বিজেন তাহিরি, নালজেগার, প্রেমলালদের সঙ্গে। অথচ গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের স্ট্রাইকারদের গোল করার সামর্থ্য এমন পর্যায়ে এসে থেমেছে যে, বাংলাদেশের ফুটবল ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা। এই দৈন্যতা ও সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে বাফুফে এক সময় বিদেশি ফুটবলারদের নাগরিকত্ব দিয়ে খেলাতে চেয়েছিল। কিন্তু নানান জটিলতায় সেটা হয়নি। এখনো অনেকেই দেশের ফুটবলের কথা চিন্তা করে ফের বিদেশি ফুটবলারদের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্তির কথা বলছেন। মামুনুল এভাবে সমস্যার সমাধান দেখছেন না, ‘আমাদের ফুটবলের এখন অধোগতি। আমরা ভালো খেলতে পারছি না। এই পারি না বিষয়টি উঠে এসেছে ভুটানের সঙ্গে হারের পর। এক-দুটি ম্যাচ দিয়ে বিচার করা উচিত নয়। বিদেশি ফুটবলার দিয়ে খেললেই পারফরম্যান্সের গ্রাফ ওপরে উঠবে, এটা ঠিক নয়। গ্রাফ ওপরে উঠাতে হবে আমাদের নিজেদের। এজন্য আমাদের পরিকল্পিত ফুটবল খেলতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’ নিজেদের প্রমাণের কথা বললেও গত তিন-চার বছর ধরে বিদেশি স্টাইকারদের পারফরম্যান্সের কাছে স্থানীয়দের খুঁজতে হয়েছে আতশি কাচ দিয়ে। গত কয়েক বছর ধরে দেশের একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে পারফরম্যান্স করছেন এমিলি। মাঝে মাঝে জ্বলে উঠতেন এনামুলরা।

বিপিএলের ২০ রাউন্ডের খেলা প্রায় শেষ। দুই রাউন্ড বাকি। এ পর্যন্ত ১৮ গোল করে সবার উপরে রয়েছেন আবাহনীর সানডে চিজোবা। ১৪ গোল করে দ্বিতীয় স্থানে ব্রাদার্স ইউনিয়নের এনকোচা কিংসলে, ১২ গোল করে তৃতীয় টিম বিজেএমসির ইলিয়াস,  চার নম্বরে থাকা ব্রাদার্সের ওয়েডসন আলসেলমের গোল ৯টি। ৯ গোল করেছেন আবাহনীর ইংলিশ ফুটবলার লি টাক। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের পল ডার্লিংটনের গোল ৭টি। সাত গোল করে দেশের ফুটবলারদের মধ্যে সবার উপরে মোহামেডানের সবুজ। সবুজের ওপর ভরসা রেখেই মামুনুল বলেন, ‘প্রথম পর্বে সবুজ অসুস্থ ছিলেন। দ্বিতীয় পর্বে এসে গোল করছেন। সবগুলো খেলতে পারলে সবুজের গোলসংখ্যাও বাড়ত নিশ্চিত করে। তাহলে আমাদের স্ট্রাইকারদের সামর্থ্য নেই, এটা বলি কীভাবে? এটা সত্যি, বিদেশি স্ট্রাইকারদের সঙ্গে আমাদের মূল পার্থক্যটা শারীরিক শক্তিতে। দেখুন ভুটানের স্ট্রাইকার চেঞ্চো আমাদের দেশের রক্ষণভাগের সঙ্গে পেড়ে উঠলেও বিদেশিদের সঙ্গে পারছেন না। কারণ শক্তির পার্থক্য। আমাদের স্ট্রাইকারদের গোল স্কোরিং বাড়াতে অবশ্য দেশের বাইরে খেলতে হবে।’

দেশের স্ট্রাইকারদের গোল করার সামর্থ্য নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠছে, কিংবা বিদেশি ফুটবলারদের সংযোজনের কথা যখন উঠছে, তখন মামুনুল বলছেন, ‘এসব সমস্যার সমাধান করতে ক্লাবগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের ক্লাবগুলোর নিজস্ব মাঠ নেই। হাতে গোনা ঢাকা আবাহনী, শেখ রাসেল, শেখ জামাল, রহমতগঞ্জ ছাড়া কয়টি দলের নিজস্ব মাঠ আছে? কয়টি ক্লাবে ট্রেনার আছেন? এসব সুযোগ বাড়াতে হবে। তাহলেই স্ট্রাইকার বলেন, মিডফিল্ডার বলেন, সব সমস্যার সমাধান হবে।’

বাংলাদেশের ফুটবলের গ্রাফ ইতিহাসের সর্বনিম্নে। এখান থেকে বাঁচার জন্য শুধু ফুটবলার নয়, এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। বিশেষ করে বাফুফেকে বর্ষপঞ্জিকা করে বসে না থেকে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং তৃণমূল থেকে তুলে আনতে হবে ভবিষ্যতের ফুটবলার। তাহলেই সব সমস্যার সমাধান।

সর্বশেষ খবর