সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঘোড়দৌড়ে সেরা তাসমিনা

নওগাঁ প্রতিনিধি

ঘোড়দৌড়ে সেরা তাসমিনা

‘দি-হর্স গার্লস’ খ্যাত ঘোড়সওয়ারী তাসমিনা দিন-দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। একের পর এক সেরা পুরস্কার ছিনিয়ে আনছে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার মাঠ থেকে। গতকাল নওগাঁ হানাদারমুক্ত দিবসের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সেখানেও প্রথম ও শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নেয় তাসমিনা আখতার। ২৩টি ঘোড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। দুটি দলে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। পুরুষদের সঙ্গে ‘এ’ গ্রুপে তাসমিনা তার ‘বিজলী’ ঘোড়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। দ্বিতীয় হয় তাসমিনার বাবার ঘোড়া। এতে ঘোড়শোয়ার ছিল ফারুক হোসেন নামের এক কিশোর। ‘বি’ গ্রুপ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে আইনুল হকের ঘোড়া, দ্বিতীয় হয় তোফাজ্জল হোসেনের ঘোড়া এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করে ছয়ের উদ্দিন বাবুর ঘোড়া। তাসমিনার ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে শহরের এটিম মাঠে হাজার মানুষের ঢল নামে।

নওগাঁ হানাদার মুক্ত দিবস পালনের অংশ হিসেবে শহরের এটিম মাঠে এই খেলার আয়োজন করে স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ।  ঘোড়সওয়ারী তাসমিনাকে নিয়ে নির্মিত সিনেমা সম্প্রতি গ্রিসের অলিম্পিয়া ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালে স্থান পাওয়ার পর বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার বীরগ্রাম গ্রামের দরিদ্র ওবায়দুল হকের মেয়ে। এটিম মাঠে গতকাল বিকালে সওয়ারী তাসমিনার  ঘোড়দৌড় দেখতে ভিড় করে হাজারও দর্শক। এদিকে নওগাঁ হানাদারমুক্ত দিবসের নানা কর্মসূচির মধ্যে দিনের শুরুতেই শহরের মুক্তির মোড়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ। এ সময় শহীদদের স্মরণে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে উপস্থিত জনতা এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। বেলা ১১টার দিকে শহরের এটিম মাঠে জাতীয় পতাকা ও ফেস্টুুন উড়িয়ে দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির উদ্বোধন করেন নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক। এরপর সেখান থেকে একটি বিজয় মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে নানা বয়সের মানুষ অংশ নেয়। এর আগে সেখানে একুশে পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সভায় মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মালেক এমপি, পৌর মেয়র নজমুল হক সনি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল আখতার, অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম খান, একুশে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এমএম রাসেল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারী। বিকালে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

প্রতিযোগিতার আয়োজক একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারী বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর নওগাঁ পাকহানাদার মুক্ত হয়। এই আনন্দ সবাই এক সঙ্গে উপভোগ করতে আনন্দ শোভাযাত্রা ও ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে। বিশেষ করে তাসমিনাকে দেখতে মানুষের বিশেষ আগ্রহ দেখা গেছে। মেয়েটি যেভাবে ঘোড়া চালিয়ে প্রথম হলো এটি সত্যিই বিস্ময়কর।’

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর সকালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী সাধারণ জনতা মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় নওগাঁ হানাদার মুক্ত করে। পাক সেনারা আত্মসমর্পণ করে। এর আগে জেলা শহর ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয় মুক্তিযোদ্ধাদের। এতে অনেকেই শহীদ ও হতাহত হোন। দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছর নানা কর্মসূচি পালন করে স্থানীয়রা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর