বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হঠাৎ অশান্ত ক্রীড়াঙ্গন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রীড়াঙ্গনে হঠাৎ অশান্ত পরিবেশ। ফেডারেশনে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। কিন্তু খেলোয়াড়দের প্রাণনাশের হুমকির ঘটনা কখনো ঘটেনি। তাও আবার এমন একজনকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে যিনি দেশের পরিচিত মুখ। মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। এস এ গেমসে ভারোত্তোলনে সোনা জিতে তিনি দেশের সুনাম কুড়িয়েছেন। সোনার পদক গ্রহণের পর মঞ্চে মাবিয়ার কান্না এখনো চোখে ভাসে দেশবাসীর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোনাজয়ী মাবিয়াকে শুধু অভিনন্দনই জানাননি, দরিদ্র এই মহিলা ক্রীড়াবিদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর নির্দেশও দিয়েছেন। এস এ গেমসে সোনা জিতে মাবিয়া থেমে থাকেননি। কাতারে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সোনা জেতেন তিনি। আরেক মহিলা ভারোত্তোলক রেশমাও সোনা জেতেন।

দেশের সুনাম বাড়িয়েছেন তারা। স্বাভাবিকভাবে ফেডারেশন থেকে সংবর্ধনা পাওয়ার কথা। উল্টো মাবিয়াকে নাকি প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মাবিয়া নিজেই বলেছেন টেলিফোনে হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে ফেডারেশনের অনুমতি ছাড়া কাতারে খেলতে নিয়ম ভঙ্গ করেছ। এ জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু তাই নয় গুলিস্তান এলাকায় দেখা গেলে মাবিয়াকে দেখে নেওয়া হবে। মাবিয়া বলেছেন কারা হুমকি দিয়েছেন তাদের তিনি ভালোমতো চেনেন। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি থাকায় কারও নাম প্রকাশ করবেন না। প্রশ্ন উঠেছে মাবিয়াকে যদি সত্যিই হুমকি দেওয়া হয় তাহলে তাদের নাম প্রকাশ করতে বাধা কোথায়? তিনি তো দেশের স্বনামধন্য ক্রীড়াবিদ। সরকারই তার নিরাপত্তা দেবে। এক্ষেত্রে হুমকিদাতাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে ভারোত্তোলন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজল দত্ত মিডিয়াকে জানিয়েছেন হুমকি তো দূরের কথা মাবিয়ারা যে কাতারে খেলতে গেছেন তা তিনি জানেনই না। মাবিয়ারা নাকি ফেডারেশনের অনুমতিও নিয়ে যাননি। কথা হচ্ছে মাবিয়ারা যদি ফেডারেশনের অনুমতি না নিয়ে থাকেন তাহলে তারা কাতারে প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন কীভাবে? এই প্রতিযোগিতা কি উন্মুক্ত ছিল, যে কেউ অংশ নিতে পারত। আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলন ফেডারেশনের স্বীকৃতি এই টুর্নামেন্ট। সুতরাং প্রতিযোগীরা দেশের ফেডারেশনের অনুমতি ছাড়া অংশ নিতে পারেন কিনা সেটাই প্রশ্ন। আর ফেডারেশনের নীরবতায় নিজ উদ্যোগে যদি মাবিয়ারা কাতারে খেলে থাকেন তাহলে তো তাদের প্রশংসা করা উচিত। কেননা দেশকে উপহার দিয়েছেন সোনা।

সভাপতি মনজুর কাদের কোরাইশি অবশ্য এমন মন্তব্য করেননি। তিনি কাতারে সোনা জয়ীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং মাবিয়ার প্রাণনাশের হুমকি সম্পর্কে বলেছেন, ও লিখিতভাবে অভিযোগ করুক, অবশ্যই ফেডারেশন ব্যবস্থা নেবে। ভারোত্তোলন ফেডারেশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেওয়ার পরই এ ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে। কিন্তু খেলোয়াড়দের প্রাণনাশের হুমকি যখন উঠেছে তখন তো নীরব বসে থাকা যায় না। বিষয়টি অবশ্যই ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর দেখা উচিত।

জাতীয় খেলা কাবাডিতেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের শুরুর দিন ফেডারেশনের গেটে তালা ঝুলিয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। জানা গেছে, কজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ফেডারেশন সভাপতি এসব কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ। অনেক খেলোয়াড়ই বলেছেন, শুধু জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ স্থগিত করলে চলবে না, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তা না হলে কাবাডির বেহাল দশা কাটবে না। ব্যাডমিন্টনেও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল। ফেডারেশনে সভাপতির হস্তক্ষেপে আপাতত পরিস্থিতি শান্ত।

ফুটবল ফেডারেশনে অবশ্য এ ধরনের অস্থিরতা নেই। তবে একটি ঘটনা ক্রীড়ামোদীদের বিস্মিত করে তুলেছে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে চ্যাম্পিয়ন নেপাল দলকে বাফুফে এখনো প্রাইজমানি দিতে পারেনি। জাতির জনকের নামে টুর্নামেন্ট। এরপরও এখানে বাফুফে বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না কেন? নেপাল যদি ফিফার কাছে নালিশ করে তখন দেশের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বাফুফে কি ভেবে দেখেছে?

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেছেন, ফান্ডের কারণে প্রাইজমানি আটকে আছে। ফান্ডের প্রসঙ্গ এখানে আসবে কেন তা বোঝা যাচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহযোগিতা করেছে। প্রশ্ন উঠেছে তা হলে এই অর্থ গেল কোথায়? ৯ মাস পার হওয়ার পরও নেপালের প্রাইজমানি না দেওয়াটা সত্যিই লজ্জার। কী কারণে বাফুফে পারছে না তা তো ক্রীড়াঙ্গনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখা উচিত। এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বা ক্রীড়া পরিষদ এতদিন নিশ্চুপ কেন তা নিয়েও কথা উঠেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর