শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ব্রাজিলের স্বপ্ন পূরণ পর্তুগালের চমক

সালতামামি : আন্তর্জাতিক ফুটবল

রাশেদুর রহমান

ব্রাজিলের স্বপ্ন পূরণ পর্তুগালের চমক

অলিম্পিক সোনাজয়ী ব্রাজিল

পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। ফুটবল ইতিহাসে পেলে, সক্রেটিস, গ্যারিঞ্চা, জিকো, রবার্তো কার্লোস, রোনাল্ডো, রোনালদিনহো, বেবেতো আরও কত নামিদামি ফুটবলারের জন্ম দিয়েছে দেশটি। কিন্তু অলিম্পিক ফুটবলে সোনার হরিণ কখনই স্পর্শ করা হয়নি ওদের। অবশেষে এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন তরুণ তারকা নেইমার। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে তারকা বলতে এখন তাকেই বোঝায়। রিও অলিম্পিকে ব্রাজিলিয়ানদের কি সোনার হরিণটা এনে দিতে পারবেন নেইমার! বিস্ময়মাখা এমন প্রশ্ন নিয়ে গত আগস্টের আগে অনেক দিন ধরে আলোচনা করেছেন ব্রাজিলিয়ানরা।

তারপর এলো সেই সময়। বিশ্বকাপে ব্রাজিলিয়ানরা জার্মানির কাছে হেরে ষষ্ঠ শিরোপাবঞ্চিত হয়েছিলেন। সেই জার্মানদের হারিয়েই সোনার হরিণ স্পর্শ করলেন নেইমাররা। মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিলিয়ানরা উপভোগ করলেন দারুণ এক জয়। ২০ আগস্টের ম্যাচটি ১-১ ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে ব্রাজিল জিতেছিল ৫-৪ ব্যবধানে। নেইমারদের সেই জয়ে কী উৎসবই না করেছিল ব্রাজিল। ১৯৫০ সালে এ স্টেডিয়ামেই ব্রাজিলের বুক ভেঙেছিল উরুগুয়ে। সেই মারাকানাতেই জার্মানদের হারিয়ে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ৭-১ ব্যবধানে পরাজয়ের দুঃখটাও ভুলতে পেরেছে তারা। অলিম্পিক ফুটবলের দীর্ঘ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সোনা উপহার দিয়ে নেইমার এরই মধ্যে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে সর্বকালের সেরাদের সারিতে নাম লিখিয়ে নিলেন। এর আগে ব্রাজিল ১৯৮৪, ১৯৮৮ আর ২০১২ সালে অলিম্পিক ফাইনাল খেললেও হেরেছে যথাক্রমে ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন আর মেক্সিকোর কাছে।

পর্তুগাল ইতিহাসে এমন কয়েকজন ফুটবলারের জন্ম দিয়েছে, যাদের নিয়ে সারা বিশ্বই গর্ব করে। ইউসেবিও, লুইস ফিগো ছাড়াও ডেকোরা ফুটবল ইতিহাসে নিজেদের পদচিহ্ন রেখে গেছেন। ইতিহাস তাদের বার বারই মনে করবে। কিন্তু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ব্যাপারটা পুরোপুরিই আলাদা। এত এত কিংবদন্তির থেকে অনেক উঁচুতে তার স্থান। অতীতে পর্তুগালকে কেউই কখনো আন্তর্জাতিক ফুটবলে কোনো ট্রফি উপহার দিতে পারেননি। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোই প্রথমবারের মতো পর্তুগালকে উপহার দেন উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি। দুরন্ত ফরাসিদের তাদের নিজেদেরই মাঠে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জয় করেন পর্তুগিজরা। ফাইনালে রোনালদো অবশ্য পুরোটা সময় খেলতে পারেননি। তবে তার নেতৃত্বেই পর্তুগিজরা প্রথমবারের মতো চমকে দেন ফুটবল দুনিয়াকে। এর আগে ২০০৪ সালে লুইস ফিগোর পর্তুগাল ফাইনাল খেললেও হেরে গিয়েছিল গ্রিক রূপকথার কাছে। তবে এবার ফেবারিট ফ্রান্সও পর্তুগালের জয়রথ থামাতে পারেনি।

বছরটা ফুটবলময় হয়েই ছিল। আলোচনায় ছিলেন লিওনেল মেসি। কোপা আমেরিকায় চিলির কাছে হেরে যাওয়ার পর তার অবসর নিয়ে বেশ নাটকই হয়ে গিয়েছিল। মেসি অবসরে চলে যাওয়ার পর পুরো আর্জেন্টিনা তাকে ফেরানোর জন্য মাঠে নেমেছিল। মিটিং-মিছিলও কম হয়নি। শেষ পর্যন্ত নতুন কোচ বাউজা মেসিকে জাতীয় দলে ফিরিয়ে আনেন। বছরজুড়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোই। তিনি চতুর্থবারের মতো ব্যালন ডি’অর জেতেন। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে জয় করেছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আর ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপও। এ ছাড়া আলোচনায় ছিল ইংলিশ ক্লাব লিস্টার সিটি। প্রথমবারের মতো ক্লাবটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয়ের গৌরব অর্জন করে। তবে ব্রাজিলের অলিম্পিক সোনা জয় আর পর্তুগালের চমক জাগানো ইউরো জয়ই ছিল বছরজুড়ে ফুটবলের প্রধান খবর।

সর্বশেষ খবর