বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নেলসনে টাইগারদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নেলসনে টাইগারদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়

নেলসনে পাঁচতারা হোটেল ট্রেইলওয়েজে বিশ্রাম নিচ্ছেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি, তামিম ও মাহমুদুল্লাহ —সংগৃহীত

‘পর্যটন শহর’ নেলসনের আরেক নাম ‘দক্ষিণের দুয়ার’। নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরটির জনসংখ্যা ৫০ হাজারের সামান্য উপরে। তাসমানিয়ান সাগরের তীরবর্তী শহরটির রূপসৌন্দর্যে প্রেমে পড়ে যাবেন যে কেউ। সেই শহরে এখন মাশরাফি, সাকিব, তামিমরা। অবশ্য অনিন্দ্য সুন্দর শহরটিতে এই প্রথম আসেননি মাশরাফিরা। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে মাশরাফিরা প্রথমবার পা রেখেছিলেন শহরটিতে। ‘শান্তির দেশ’ নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্য এই নেলসনেই। এবারও বাংলাদেশ সাফল্য চায় এখানে। সেজন্য ক্রাইষ্টচার্চের হ্যাগলি ওভালের ভুলগুলো পুনরায় করতে রাজি নন তামিমরা। ৭৭ রানে হেরে যাওয়া প্রথম ওয়ানডের ভুলগুলো শুধরে আগামীকাল তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয়টি খেলতে চায় মাশরাফিবাহিনী। সিরিজের শেষ ম্যাচও এই নেলসনের স্যাকসন ওভালে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডেতে ভালো খেলতে, ভালো করতে মরিয়া তামিমদের আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১৮ রান তাড়া করে ৬ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়টি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড এই স্যাকসন ওভালেই। তাই আত্মবিশ্বাসী হতেই পারেন মাশরাফিরা! হ্যাগলি ওভালের বাদামি রংয়ের উইকেটে বাউন্স ছিল। ছিল মুভমেন্টও। স্বাগতিক পেসার ও ব্যাটসম্যানরা উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে রেকর্ড ৩৪১ রান করেন। অথচ একই উইকেটে অপরিকল্পিত ক্রিকেট খেলে ২৬৪ রান তুলে হেরে যায় টাইগাররা। একটু পরিকল্পিত ক্রিকেট খেললে ম্যাচের চিত্র পাল্টে যেতে পারতো! সেটা হয়নি বোলারদের অযাচিত বাউন্সার ও প্রতিপক্ষের বোলারদের শর্ট বলে ব্যাটসম্যানরা অহেতুক স্ট্রোক খেলার মানসিকতায়। বোলারদের শর্ট বোলিং, বাজে ফিল্ডিং ও ব্যাটসম্যানদের তাড়াহুড়াকে দোষারোপ করেন টাইগার অধিনায়ক। গতকাল স্থানীয় সময় দুপুরে নেলসনে পা রাখেন মাশরাফিরা। এবার উঠেছেন পাঁচতারকা হোটেল ট্রেইলওয়েজে। প্রথম ম্যাচ হারলেও ছবির মতো ছিমছাম শহরটিতে পৌঁছে চনমনে ক্রিকেটাররা। সবাই মিলে আড্ডায় ব্যস্ত। খুনসুটিতে মেতেছিলেন প্রায় সারাটা সময়। এরই মধ্যে মিডিয়ার মুখোমুখিতে কথা বলেন ড্যাসিং ওপেনার তামিম। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে মাত্র ৫ রানের আক্ষেপে পুড়েছিলেন তিনি। স্কটিশদের ৩১৮ রান তাড়া করতে যেয়ে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েছিলেন তামিম। কিন্তু সাজঘরে ফিরেছিলেন নার্ভাস নাইনটিজের শিকার হয়ে। সেই ইনিংসটির কথা এখনো জ্বলজ্বলে তামিমের হৃদয়ে। সেই ইনিংসটাকে আত্মবিশ্বাসের টনিক ধরে কাল মিডিয়ার মুখোমুখিতে তামিম বলেন, ‘এখানে আগে একটি ওয়ানডে খেলেছিলাম। বিশ্বকাপের ওই ম্যাচটি আমরা জিতেছিলাম।’ সেবার বড় স্কোর তাড়া করে ম্যাচ জিতেছিল টাইগাররা। এবার উইকেটের চেহারা অনেকটাই বদলে গেছে। উইকেটের রং বাদামিই রয়েছে। কিন্তু বাউন্স আগের চেয়ে বেশিই বলে মনে করেন তামিম, ‘গতবার যে উইকেট পেয়েছিলাম, এবার আমার ধারণা উইকেটের চরিত্র অনেকটাই আলাদা। এছাড়া নিউজিল্যান্ড ঘরের মাঠে যথেষ্ট শক্তিশালী দল। তারপরও আমার বিশ্বাস বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা আমাদের সহায়তা করবে। জিততে হলে প্রতিপক্ষকে ২৮০-৩০০ রানের মধ্যে আটকে রাখতে হবে। তাহলে জেতা সম্ভব।’

নেলসন পরিচিত ভেন্যু। কিন্তু প্রতিপক্ষ শক্তিশালী স্বাগতিক দল। হ্যাগলি ওভালের ম্যাচের প্রভাব পড়লে সমস্যায় পড়তে হবে টাইগারদের। ড্যাসিং ওপেনার  তামিম বললেন আগের ম্যাচের ভুলগুলো শুধরে নিতে পারলেও জয় সম্ভব বলেন তামিম, ‘হ্যাগলি ওভালে আমরা ভালো খেলিনি। ওই ম্যাচে আমরা অনেক ভুল করেছিলাম। এখানে যদি সেসব ভুল না করি, তাহলে ম্যাচ জেতা সম্ভব। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ম্যাচ শেষে দলের সবাই নিজেদের ভুলগুলো শনাক্ত করেছেন। টিম মিটিংয়ে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হলেই সমাধান হয়ে যাবে।’

৩০০ রানের ওপরে তাড়া করে ম্যাচ জেতার রেকর্ড খুব বেশি নেই বাংলাদেশের। সে হিসাবে ৩৪২ রান একটু কঠিনই বৈকি! তারপরও তামিম মনে করেন এসব রান তাড়া করা সম্ভব, যদি অভ্যাস থাকে, ‘পৃথিবীব্যাপী ৩৪০ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতছে দলগুলো। এজন্য অবশ্য অভ্যাস থাকতে হবে। আমাদের সেরকম অভ্যাস নেই। তিনশ’র ওপরে রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার অভ্যাস আমাদের করতে হবে।’ 

নেলসনের আগামীকালের ম্যাচে যদি জয় পায় বাংলাদেশ, তাহলে টিকে থাকবে সিরিজে। না হলে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ব্যর্থতার বৃত্তেই ঘুরপাক খেতে হবে বাংলাদেশকে।    

সর্বশেষ খবর