বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সংকটাপন্ন ঢাকা মোহামেডান

ক্ষুব্ধ দুই পরিচালক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সংকটাপন্ন ঢাকা মোহামেডান

আনোয়ারুল হক হেলাল - খন্দকার জামিল উদ্দিন

ফুটবলে ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ঢাকা মোহামেডান কত যে ট্রফি জিতেছে হিসাব মেলান মুশকিল। কত ইতিহাস, কত রেকর্ড তা লিখেও শেষ করা যাবে না। অথচ সেই মোহামেডানের কি করুণ হাল। ২০০২ সালের পর লিগ শিরোপা জিততে পারছে না। এখন তো সংকটাপন্ন অবস্থা। বলা যায় লাইফ সাপোর্টে বেঁচে আছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। ১৯৭৪ সালে নবম ও ১৯৭৭ সালে লিগে মোহামেডানের অবস্থান ছিল সপ্তমে। অর্থাত্ এবারের মতো খারাপ অবস্থা কখনো হয়নি। শিরোপার বদলে মোহামেডান রেলিগেশনে ফাইট দেবে তা স্বপ্নেও ভাবা যায়নি।

মোহামেডানের এ বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ সাবেক ফুটবলাররা। তারা এ জন্য ক্লাব পরিচালকদের দায়ী করেছেন। শুধু কি খেলোয়াড়, সংকটাপন্ন অবস্থা মেনে নিতে পারছেন না স্বয়ং পরিচালকরাও। ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক হেলাল ও খন্দকার জামিল উদ্দিন মানতে পারছেন না ক্লাবের এই বিপর্যয়। অভিজ্ঞ সংগঠক আনোয়ারুল হক হেলাল দীর্ঘদিন মোহামেডানের সঙ্গে জড়িত। তিনি ফুটবল কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব থাকা অবস্থায় মোহামেডান অপরাজিত হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের রেকর্ড গড়ে। ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। লিমিটেড কোম্পানি হওয়ার পর নির্বাচনে মাধ্যমে যে কমিটি গঠন হয় সেই কমিটির হেলাল পরিচালক হন। কমিটিতে আছেন এরপরও তিনি দারুণ ক্ষুব্ধ। বললেন, ‘ফুটবলে এমন অবস্থা হবে ভাবতেই পারিনি।  যোগ্য ও ত্যাগী কর্মকর্তার অভাবে ক্লাবের বিপর্যয় নেমে এসেছে। দুরবস্থায় পরিবর্তন আনতে হলে অবশ্যই নতুন কমিটি গড়তে হবে। ক্লাবের পরিবেশের কারণে অনেক যোগ্য সংগঠকই ক্লাবে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের কাজে লাগাতে হবে। মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী দল রেলিগেশনে ফাইট দিয়েছে। কতটা ভয়াবহ অবস্থা এতেই বোঝা যায়। ফান্ড সম্পর্কে বলেন, দলের এই পরিবেশে কে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসবেন? ঢাকা আবাহনীর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সাফল্য আসছে বলে তাদের ফান্ডেরও সমস্যা হচ্ছে না। মোহামেডানের অচলাবস্থা কাটাতে অবশ্যই যোগ্যদের নিয়ে কমিটি গড়তে হবে। ক্লাব পরিচালনার জন্য যোগ্য সংগঠকের বিকল্প নেই। উচিত হবে আর দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

ক্রীড়াঙ্গনে পরিচিত মুখ খন্দকার জামিল উদ্দিন। তিনি আক্ষেপ করে বললেন, ‘হতে পারি পরিচালক। কিন্তু কোনো অবস্থায় মোহামেডানের দুরবস্থা মেনে নিতে পারছি না। ক্লাবের উন্নয়নের জন্য লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করা হয়। কিন্তু এখন তো দেখছি উন্নতি নয়, ক্লাবে চরম অবনতি নেমে এসেছে। ছোট বেলা থেকে মোহামেডানের সমর্থক। দলের সাফল্যে মন জুড়িয়ে যেত। এখন পরিচালকের চেয়ারে বসে প্রিয় মোহামেডানের অধঃপতন দেখছি। শিরোপার বদলে রেলিগেশনের ফাইট। লজ্জায় আমি বন্ধুদের সামনে মুখ দেখাতে পারছি না। মোহামেডানের এই হাল স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। কষ্ট লাগে এমন অবস্থায় কমিটি নীরব। ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান ভাইয়ের উচিত ছিল বিষয়টি নিয়ে বসা। ফুটবল কেন, সব খেলাতেই তো মোহামেডানের রুগ্ন দশা। ফান্ডের কথা বলা হচ্ছে, মোহামেডানের মতো দলে ফান্ড সমস্যা হবে কেন? যারা টাকা দিতে বা আনতে পারছেন না তাদের পরিচালক পর্ষদে রাখা হয়েছে কেন? ফান্ডের জন্য তো ঢাকা আবাহনীর পরিচালকরাই যথেষ্ট। একের পর এক সাফল্য পেয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছি।’

জামিল বলেন, ‘ক্লাবের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে ক্লাবের কোটি কোটি সমর্থক এ অবস্থায় আমরা নীরব হয়ে বসে আছি। অবস্থানের পরিবর্তনে এখন নতুন কমিটি গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। নির্বাচন নিয়ে জটিলতার কথা বলা হয়। কিন্তু একটা কমিটি আর কত দিন থাকবে? যারা ক্লাবের জন্য নিবেদিত ও যোগ্য তাদের নিয়েই নতুন কমিটি গড়তে হবে। তা না হলে এই বিপর্যয় থেকে বের হওয়া যাবে না।’

সর্বশেষ খবর