শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ফিরে দেখা ২০১৬ বাংলাদেশের ফুটবল

পুরুষদের হতাশা, মেয়েদের উচ্ছ্বাস

ক্রীড়া প্রতিবেদক

পুরুষদের হতাশা, মেয়েদের উচ্ছ্বাস

আরও একটা বছর শেষ হতে চলেছে। ক্রীড়াঙ্গনে বছরটা কেমন গেল তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ২০১৬ সাল ফুটবলটা কেমন গেল? উত্তরে একটাই কথা উচ্চারিত হবে হতাশা আর হতাশা। হতাশা তো গত কয়েক বছর ধরে চলছে। বাংলাদেশের ফুটবলের এবার ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে সময় কেটেছে বলা যায়। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে যে পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে তাতে দেশবাসী ক্ষুব্ধ। অনেকেই বলছেন যেখানে শুধু দেশের সম্মানহানি হচ্ছে সেখানে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে লাভ নেই। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ গত বছর ডিসেম্বরে শুরু হলেও শেষ হয় জানুয়ারিতে। অন্যবারের তুলনায় প্রস্তুতি ভালো হলেও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভরাডুবি ঘটেছে। গ্রুপ পর্ব খেলেই দেশে ফিরে আসতে হয়েছে মামুনুলদের। সান্ত্বনা ছিল গ্রুপের শেষ ম্যাচে ভুটানকে হারানো। শিরোপা নয়, সাফে এখন সেমিফাইনাল খেলাটাই স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ব্যর্থতার জন্য অধিনায়ক মামুনুলের পাশাপাশি বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন জাতির কাছে ক্ষমাও চান। ব্যর্থতার দায়ভার স্বীকার করে কোচ মারুফুল পদত্যাগও করেন।

সাফে ব্যর্থতার পর সালাউদ্দিন বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু কাপে দেশবাসীকে ট্রফি উপহার দেওয়ার। ২০১৫ সালে টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার দুর্বল বিদেশি দলগুলো অংশ নেওয়ার পরও ফাইনালে উঠতে পারেনি। ব্যর্থতার জন্য তদন্ত কমিটিও গঠন হয়। শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগে অধিনায়ক মামুনুলসহ চার ফুটবলারকে বিভিন্ন মেয়াদে নিষিদ্ধ করা হয়। পরে তাদের শাস্তি মওকুফও করা হয়। বছরে আলোচিত ঘটনা ছিল হঠাৎ করে জাতীয় দল থেকে মামুনুলের অবসরের ঘোষণা। তিনি সাংবাদিকদের দৃঢ়ভাবে জানিয়েছিলেন কোনো অবস্থায় জাতীয় দলে ফিরবেন না। অথচ বাফুফের ডাকে ঠিকই ফিরে এসেছিলেন। অনেক নাটক হয়েছে। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে এশিয়া কাপ বাছাইপর্ব প্লে-অফ ম্যাচে ভুটানের কাছে হার। প্রস্তুতি ম্যাচে মালদ্বীপের কাছে গোলের বন্যায় ভেসে গেলেও এনিয়ে ততটা সমালোচনা হয়নি। কেননা গত কয়েক বছর মালদ্বীপের বিপক্ষে পেরে উঠছে না বাংলাদেশ। কিন্তু থিম্পুতে ভুটানের কাছে শোচনীয় হারে পুরো দেশ অবাক হয়ে গেছে। হোম ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করার থিম্মুতে ভুটানের সামনে বাংলাদেশ দাঁড়াতেই পারেনি। ১-৪ গোলে হেরে দেশকে লজ্জায় ডুবিয়েছে মামুনুলরা। ফুটবলে ভুটানের বিপক্ষে হারের রেকর্ড ছিল না। এবারই হতাশার ইতিহাস গড়ল। এনিয়ে সমালোচনায় ভাসছে বাফুফে। কর্মকর্তাদের অযোগ্য ঘোষণা করে কেউ কেউ বাফুফের কমিটি ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সালাউদ্দিন বলছেন এমন হারে তিনি বিস্মিত কিন্তু ফুটবলে এমন অঘটন ঘটতেই পারে।

পুরুষরা হতাশায় বন্দি থাকলেও ফুটবলে মহিলারা আশার আলো জাগিয়েছে। বলা যেতে পারে কিছুটা হলেও দেশের মান রক্ষা করেছে মহিলারাই। ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ মহিলা ফুটবল বাছাইপর্বে বাংলাদেশ অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। প্রতিপক্ষকে গোলের বন্যায় ভাসিয়েছে। চূড়ান্ত পর্বেও জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ঘরোয়া ফুটবলে বছরটা ঢাকা আবাহনীরই ছিল বলা যায়। ফেডারেশন কাপ ও পেশাদার লিগে ট্রফি জিতেছে তারা। রানার্সআপ হয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। অবশ্য মৌসুমের প্রথম ট্রফি স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় বন্দরনগরীর দলটি। শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র শক্তিশালী দল গড়েও কোনো ট্রফি ঘরে তুলতে পারেনি। ২০০৩ সালে সাফজয়ী অধিনায়ক রজনীকান্ত বর্মন খেলোয়াড়ি জীবনের অবসান টেনেছেন।

ব্যর্থতা ভরপুর হলেও বছরে আলোচিত বিষয় ছিল বাফুফের নির্বাচন। এবারের মতো উত্তেজনা কখনো দেখা যায়নি। দুই প্যানেলে বিভক্ত হয়ে নির্বাচন হয়। বিপুল ভোটে জিতে টানা তৃতীয়বার বাফুফের সভাপতি নির্বাচন হন কাজী সালাউদ্দিন। ফুটবল উন্নয়নে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে  সালাউদ্দিন নির্বাচনে অংশ নেন। চার বছরে ক্যালেন্ডারও ঘোষণা করেছেন। এখন কথা ও তার কাজের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায় কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

সর্বশেষ খবর