শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ফিরে দেখা ২০১৬ বাংলাদেশের ক্রিকেট

বছরটা মুস্তাফিজেরই

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বছরটা মুস্তাফিজেরই

ইনজুরিতেই মুস্তাফিজুর রহমানের কেটে গেল বছরের বেশির ভাগ সময়। ২০১৬ সালে তিনি কোনো টেস্ট ম্যাচ খেলেননি। ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র একটি। সেটাও দিন কয়েক আগে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তবে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ মিলে মোট ৮টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। উইকেট পেয়েছেন ১৬টি। তারপরেও ২০১৬ সালটা মুস্তাফিজেরই। কেননা ২০১৬ সালেই ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় পুরস্কারটা পেয়েছেন কাটার মাস্টার—আইসিসির সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসেও এটা ছিল অনেক বড় অর্জন। এর আগে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার এই পুরস্কার জিততে পারেননি। তবে মুস্তাফিজ চলতি বছরে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন ভারতীয় সেলিব্রেটি ক্রিকেট লিগ-আইপিএলে। অসাধারণ বোলিং করে সাদামাটা দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন।

মুস্তাফিজের ক্যারিশমা দেখে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব অবাক। কাটার, স্লোয়ার, ইয়র্কার— কী অসাধারণ! মুস্তাফিজের ডেলিভারির ধরন দেখে ব্যাটসম্যানরা বুঝতেই পারেন না তিনি কোন বলটা স্লো করবেন, আর কোনটিতে গতি দেবেন। আর কাটার কিংবা ইয়র্কার দিলে তো কথাই নেই। ব্যাটসম্যান পুরোপুরি বোকা বনে যান। কিন্তু ইনজুরির কারণে বছরের বেশির ভাগ সময় মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছে মুস্তাফিজকে। তারপরেও বছর শেষে আইসিসি সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কারটি মুস্তাফিজের হাতে তুলে দিয়ে ম্যাজিকম্যানকে বিরল সম্মান জানিয়েছে।

বিশ্ব রেকর্ড গড়ে বছরটা নিজের করে নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজও। ২০১৬ সালে ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মিরাজের আগুন ঝরা বোলিং। দুই টেস্টে ১৯ উইকেট নিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন খুলনার এই বিস্ময় বালক। মিরাজের দাপুটে পারফরম্যান্সে ইংল্যান্ডের মতো দলের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে ১-১ ব্যবধানে ড্র করে বাংলাদেশ। বলতেই হবে ক্রিকেটে ২০১৬ সালে সবচেয়ে বড় অর্জন এটি। দুই ম্যাচের সিরিজে প্রথমটিতে ইংল্যান্ড জয় পাওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে তিন দিনেই ইংলিশদের হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। তবে প্রথম ম্যাচেও জয়ের ভালো সম্ভাবনা ছিল। তারপরেও টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল এটিই।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ভাবনা খুব একটা জায়গা করে নিতে পারেনি টি-২০ ক্রিকেট। তবে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে ওয়ানডে খেলা না থাকায় ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ। তার পুরস্কারটাও পেয়েছে হাতেনাতে। টি-২০ বিশ্বকাপের পূর্বে শুরু হয়েছিল এশিয়া কাপ। এবারই প্রথমবারের মতো এশিয়ার ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর ওয়ানডের পরিবর্তে হয়েছিল টি-২০ ফরম্যাটে। এই আসরে বাজিমাত করে বাংলাদেশ। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী দলকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালের টিকিট পেয়ে যান টাইগাররা। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলেছে বাংলাদেশ। 

টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল টুর্নামেন্টের মূল পর্ব তথা দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করা। সে চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েছে বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে যায়।

প্রথম পর্বে টাইগারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখে যেন বিশ্ব অবাক হয়ে যায়। সে কারণেই কিনা ক্রিকেটারদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য দলের দুই ক্রিকেটার পেসার তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার আরাফাত সানিকে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করে নিষেধাজ্ঞার জাল ছিঁড়ে বেরিয়েও আসেন তাসকিন ও সানি।

তারপরেও দু-দুটি ম্যাচে বাংলাদেশের জয় হাতছাড়া হয়ে গেছে একটুখানি ভুলের কারণে। ভারতের বিরুদ্ধে যেন জেতা ম্যাচে শেষ বলে হেরে যায় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও অনেক নিশ্চিত ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে গেছে। তারপরেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের কথা ভাবলে বড় স্বস্তি যে, ওই আসরে সর্বোচ্চ রান করেছেন বাংলাদেশের তামিম ইকবাল। ড্যাসিং ওপেনার ৬ ম্যাচে করেছেন ২৯৫ রান। একটি সেঞ্চুরিও ছিল। ইনজুরির কারণে সব ম্যাচ খেলতে না পারলেও শেষ দিকে দারুণ বোলিং করেছেন মুস্তাফিজ। আসরের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র ২২ রানে ৫ উইকেট নেন কাটার মাস্টার। সেটিই ছিল ২০১৬ সালে মুস্তাফিজের শেষ টি-২০ ম্যাচ। তারপর আইসিসির সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার পাওয়ায় তো পুরো বছরটাই যেন নিজের করে নিয়েছেন মুস্তাফিজ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর