বুধবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইতিহাসের অপেক্ষায় সাবিনারা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ইতিহাসের অপেক্ষায় সাবিনারা

ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সাফ মহিলা ফুটবল ফাইনাল আজ। মাঠে নামার আগে শিলিগুড়িতে গতকাল নিজেদের গা গরম করে নিচ্ছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা

নতুন বছরে ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। আজ ভারতকে হারালেই মহিলা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হবে বাংলাদেশ। কিন্তু ঐতিহাসিক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারবেন কি সাবিনা, স্বপ্নারা? আগের তিন আসরে ট্রফি গেছে ভারতের কাছে। ভারতের মাটিতে ভারতকে হারানো চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু বাংলাদেশ যে নৈপুণ্য প্রদর্শন করছে তাতে দেশবাসী প্রত্যাশা করছে সাফে ঠিকই বিজয়ের পতাকা উড়াবেন সাবিনারা। পুরুষ ফুটবলাররা ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে কোনোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ইতিহাসে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এখন শিরোপা নয়, সাফে সেমিফাইনাল খেলাটা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। গত দুই আসরে ফেবারিট হয়েও বাংলাদেশকে গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় নিতে হয়েছে।

পুরুষের বদলে মহিলা ফুটবলাররা এখন দেশবাসীর মন জয় করছে। ২০১৬ সালে এএফসি কাপ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে বাছাইপর্বে বাংলাদেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্তপর্বে উঠেছে। প্রতিপক্ষদের গোলের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছিল মাবিয়ারা। এই সাফল্য মূল দলকে উজ্জীবিত করেছে। আগে ফল সন্তোষজনক না হলেও শিলিগুড়িতে এবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ অসাধারণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করছে।

গ্রুপে স্বাগতিক ভারত ছাড়া আফগানিস্তান থাকায় অনেকে সাবিনাদের সেমিফাইনাল নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। তবে ঢাকা ছাড়ার আগে অধিনায়ক সাবিনা দৃঢ় কণ্ঠে বলে যান প্রথম ম্যাচেই আফগানিস্তানকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করব। যেমন কথা তেমন কাজ। পুরুষরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে কুলিয়ে উঠতে না পারলেও মেয়েরা তাদের নিয়ে ছেলেখেলা খেলেছে। ৬-০ গোলে আফগানদের বিধ্বস্ত করেছে। যার মধ্য সাবিনা একাই করেন পাঁচ গোল। পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ড্র করায় গোল পার্থক্য বাংলাদেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়। সেমিতে প্রতিপক্ষ মালদ্বীপ হওয়ায় অনেকে নিশ্চিত হয়ে যান সাবিনারা ফাইনালে খেলবেন। তারপরও টেনশনের ম্যাচে কি ঘটে বলা যায় না। না, মালদ্বীপকে দাঁড়াতেই দেয়নি। স্বপ্নার হ্যাটট্রিকে স্বপ্নের ফাইনালে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ৬-০ গোলে জয়ে, স্বপ্না ছাড়া সাবিনা ২ ও নার্গিস ১টি গোল করেন। পুরুষ ফুটবলে কিছুদিন আগেও প্রীতিম্যাচে মালদ্বীপের কাছে গোলের বন্যায় ভেসে যায় মামুনুলরা। সেখানে কিনা মেয়েরা ছেলেখেলা খেলল। এতেই প্রমাণ মিলে মহিলা ফুটবলে অগ্রগতি।

ভারতের মাটিতে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ট্রফি জেতার রেকর্ড নেই বাংলাদেশের। এবার সুযোগটা কাজে লাগাতে চায় সাবিনারা। সত্যি কথা বলতে কি গ্রুপ পর্বে ড্র করলেও আজকের ফাইনালে ফেবারিট ভারতই। টানা তিন আসরেই চ্যাম্পিয়ন। সেমিফাইনালে শক্তিশালী নেপালকে পরাজিত করেছে তারা। তাহলে কি প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে বাংলাদেশকে রানার্সআপে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। গড়া হবে না নতুন ইতিহাস? না, এবার সাবিনারা সত্যিই ভয়ঙ্কর। এবার পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছে ট্রফি জেতার সামর্থ্য রয়েছে সাবিনাদের।

বাংলাদেশে কোনো মহিলা ফুটবলার তারকারখ্যাতি পাবেন তা ভাবাই যায়নি। সাবিনা এখন রীতিমতো তারকা। ২০১৪ সালে ঘরোয়া ফুটবলে একাই শত গোল করেন। ইতিমধ্যে তিনি মহিলা ফুটবলে ‘মেসি’খ্যাতি পেয়েছেন। তিনিই একমাত্র মহিলা ফুটবলার যিনি দেশের বাইরে লিগ খেলেন। মালদ্বীপ পুলিশ ক্লাবের পক্ষে এক ম্যাচে ১৬ গোল করার রেকর্ড আছে তার। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে তাকেই বাংলাদেশের মূল ভরসা ধরা হয়েছিল। কিন্তু মাঠে খেলছে টিম বাংলাদেশ। প্রতিটি খেলোয়াড়ই উজ্জীবিত। সাবিনার পর স্বপ্না হ্যাটট্রিক করেছেন। কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই। অফেন্স, ডিফেন্স বা মিডফিল্ডে প্রতিটি পজিশনে যার যার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছেন। ফাইনালে ভারত শক্তিশালী প্রতিপক্ষ এনিয়ে কারও সংশয় নেই। কিন্তু বাংলাদেশতো আর আফগানিস্তান বা মালদ্বীপ নয় যে চেয়ে চেয়ে গোল খাবে। ঠিকমতো খেলতে পারলে বা সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে স্বপ্নের ট্রফি উপহার দিতে পারবে দেশকে। অধিনায়ক সাবিনা খাতুন দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন আমরা শিরোপা জিততে চাই। ভারতকে হারাতে আমরা জানপ্রাণ দিয়ে লড়বো। পুরো দেশ চেয়ে থাকত ক্রিকেটারদের দিকে। আজ চোখ থাকবে সাবিনাদের দিকে। নতুন বছরে ফুটবল নতুন ইতিহাস গড়তে পারবে কিনা সেটার জন্যই অপেক্ষায় থাকতে হবে।

সর্বশেষ খবর