শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

তিন অধিনায়কের তিন মত

টাইগারদের ব্যর্থতার নেপথ্যে...

মেজবাহ্-উল-হক

তিন অধিনায়কের তিন মত

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ সিরিজ জিতবে—সবচেয়ে আবেগপ্রবণ সমর্থকও হয়তো এমন দিবা-স্বপ্ন দেখার সাহস করেনি! কিন্তু টাইগাররা সমানতালে লড়াই করবে এটা কাম্যই ছিল। গত দুই বছরে বাংলাদেশ যেভাবে ক্রিকেটবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সে কারণেই প্রত্যাশার ফানুসটা বড় হয়েছে। কিউইদের মাটিতে টাইগারদের দাপুটে পারফরম্যান্স আশা করাটা দোষের নয়! কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট যেন এক যুগ পিছিয়ে গেছে।

যে দলটিকে ঘরের মাঠে দুই সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে সেই দলটির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারছেন না মাশরাফিরা। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পরও প্রথম টি-২০তেও অনায়াসে হেরে গেছে। কিন্তু হারের দৃশ্যগুলো ছিল খুবই দৃষ্টিকটু! টাইগারদের ইনিংসে পরিষ্কার দেখা গেছে, অপরিপক্বতার ছাপ! এমন ক্রিকেট দেখা যেত এক যুগ আগে, যখন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা খুবই কম ছিল। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের এমন হতাশাজনক হারের কারণ খুঁজতে গিয়ে সাবেক তিন অধিনায়ক তিন ধরনের মতামত উপস্থাপন করেছেন।

রকিবুল হাসান বলেন, ‘ক্রিকেটারদের মানসিকতা আমার কাছে ভালো লেগেছে। তবে আমাদের ফিনিশিংটা ভালো হচ্ছে না। ওরাও বিপদে পড়েছে, আবার ভালো ব্যাটিং করে জয় তুলে নিয়েছে। বিশেষ করে ধন্যবাদ দিতে হবে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে। দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে কী দারুণ জয় এনে দিয়েছে। আর আমরা লড়াই তৈরি করতে পারলেও ফিনিশিংয়ের অভাবে জিততে পারছি না।’

 

 

সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘কন্ডিশন অবশ্যই একটা কারণ। তা ছাড়া আমাদের বেশ কয়েকজন প্রধান ক্রিকেটার ফর্মে নেই। কম্বিনেশনের কারণেও খারাপ হতে পারে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে আরও চিন্তা করা উচিত ছিল। আমি মনে করি নিউজিল্যান্ডের মতো জায়গায় নবাগতদের জন্য ভালো করা কঠিন। তাই আমার মনে হয় নতুন ছেলেদের সুযোগ না দিয়ে পুরনোদেরই বেশি সুযোগ দেওয়া উচিত।’

সাবেক অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলটের মতে সমস্যা অন্য জায়গায়। তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের উইকেটের কথা ভেবে যে ভীতি তৈরি হয়েছিল সেখানকার উইকেট কিন্তু ততটা কঠিন নয়। ওরা স্পোর্টিং উইকেটই বানিয়েছে। এতে আমাদের ভালো করার কথা। আমরা ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারছি না। তবে বোলিং কিন্তু ভালোই হচ্ছে। আমাদের ব্যাটসম্যানরা ‘ইমপ্লিমেন্টেশন’ করতে পারছেন না। এটা কোনো মানসিক সমস্যাও নয়, আবার স্কিলের ঘাটতিও নয়।’

দুই দলের মধ্যে পার্থক্য করতে গিয়ে পাইলট বলেন, ‘উইকেটে গিয়ে সবাই কেমন যেন টিকতে পারছেন না। দ্বিতীয় ওয়ানডের কথা ভেবে দেখুন। দুই উইকেট হারানো পর্যন্ত আমাদের সব কিছুই ঠিক ছিল। রানরেট, উইকেট সবই ঠিক ছিল। কিন্তু তারপরও দ্রুত উইকেট পড়তে থাকায় হারতে হয়েছে। অথচ নিউজিল্যান্ডও কিন্তু তিন ওয়ানডেতেই ব্যাটিংয়ে সমস্যায় পড়েছিল। কিন্তু ওরা ঠিকই ম্যাচ বের করে নিয়েছে। এভাবেই তো খেলতে হবে।’

নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ায় দুই সপ্তাহের অনুশীলন ক্যাম্প করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরও নিউজিল্যান্ডের উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না ক্রিকেটাররা। রকিবুলের দাবি, ‘কন্ডিশন তো প্রতিকূলেই। কন্ডিশন একটা আপেক্ষিক শব্দ। কন্ডিশন বলতে আবহাওয়া বোঝায়, বাতাস বোঝায়, সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ওখানকার পিচ কি কথা বলে? ওখানে খুব ভালো লাইনলেন্থে বোলিং করলে ব্যাটসম্যানকে আটকে রাখা যায়, এটা এখনো পুরোপুরি আয়ত্ত করতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। মাঠের কোন দিক থেকে কোন বোলার ভালো করবে এগুলোও আমাদের জানা নেই।’ তারপরও মাশরাফিদের এই পারফরম্যান্সকেও খারাপ বলতে চান না সাবেক এই অধিনায়ক। তার মতে, ‘বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডে যে পারফরম্যান্স করেছে একে খুব খারাপ বলা যাবে না। ফলাফলের দিক দিয়ে হয়তো ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে কিন্তু পারফরম্যান্সের কথা চিন্তা করলে বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে পেরেছিল। বাংলাদেশের ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে সমন্বয় নেই। একটি দলের জয়ের জন্য এ তিনটা জিনিসই লাগে। কিন্তু এক ম্যাচে এই তিনটার সমন্বয় হচ্ছে না। ব্যাটিং ভালো হচ্ছে তো বোলিং খারাপ, বোলিং ভালো হচ্ছে তো ফিল্ডিং হচ্ছে না।’

কন্ডিশনের সমস্যা থাকলেও বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ডে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি। যে কারণে এখন পর্যন্ত জয়ের দেখাও পায়নি। চার ম্যাচের চারটিতেই হার। ফারুক বলেন, ‘এবার স্পোর্টিং উইকেট করেছে ওরা। এতে স্বাগতিক হিসেবে নিউজিল্যান্ড অবশ্যই বাড়তি সুবিধা পাবে। তারপরও আমি মনে করব, যখন সুযোগ আসবে তা হাতছাড়া করা যাবে না। যেমন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আমাদের একটা সুযোগ এসেছিল। আমরা যদি ওই ম্যাচটা জিততে পারতাম তাহলে সিরিজে ২-১ ব্যবধান হয়ে যেত। তখন আমাদের আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যেত।’

তা ছাড়া কোচের বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার বিষয়টিকেও হারের একটা কারণ হিসেবে মনে করেন ফারুক, ‘কোচ একটু বেশি অ্যাক্সপেরিমেন্ট করতে চান। এটা না করে পুররোদের ওপর বেশি ভরসা করা উচিত। তা ছাড়া নতুন একজন ক্রিকেটারকে যখন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তখন দেখতে হবে কার বিরুদ্ধে তার অভিষেক হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের মতো কঠিন কন্ডিশনে শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সুযোগ দিয়ে তার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা তো ঠিক হবে না। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তা করা উচিত।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর