বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হলো না ইতিহাস গড়া

ক্রীড়া প্রতিবেদক

হলো না ইতিহাস গড়া

তীরে এসে তরী ডুবল বাংলাদেশের। গতকাল স্বপ্নের সাফ ফুটবল ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়নের বদলে রানার্স-আপের ট্রফি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় সাবিনা-স্বপ্নাদের —ছবি ইন্টারনেট

সাফ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতই চ্যাম্পিয়ন হলো। ইতিহাস গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে সাবিনারা গতকাল ৩-১ গোলে হেরে যান। আগের তিন আসরে বাংলাদেশের বড় প্রাপ্তি ছিল দুবার সেমিফাইনাল খেলা। এবার শুরুতেই সাবিনা-স্বপ্নারা জ্বলে ওঠেন। প্রথম ম্যাচেই আফগানিস্তানকে বিধ্বস্ত করে বাংলাদেশ বুঝিয়ে দেয় শিলিগুড়ি থেকে খালি হাতে ফিরবে না। পরের ম্যাচে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভারতের সঙ্গে ড্র করলে বাংলাদেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে ওঠে।

আগের তিন আসরে ফাইনাল খেলে ভারত ও নেপাল। এবার তার ব্যতিক্রম ঘটে। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে মালদ্বীপকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেয়। উদ্বোধনী ম্যাচে সাবিনা, সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক করেন স্বপ্না। অন্যদিকে ভারত ৩-১ গোলে নেপালকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয়। ক্রীড়ামোদীদের চোখ পড়ে ছিল ক্রিকেটের দিকে। এবার মেয়েদের ফুটবল নিয়ে আগ্রহের কমতি ছিল না। বাংলাদেশে কোনো স্যাটেলাইট চ্যানেলে ম্যাচ দেখা না গেলেও গতকাল শত শত ফুটবলপ্রেমী পত্রিকা অফিসে ফোন করে বার বার ফাইনালের রেজাল্ট জানতে চাচ্ছিলেন। পুরো দেশই অপেক্ষায় ছিল সাবিনারা কখন স্বপ্নের ট্রফি হাতি তুলবেন। তা আর হলো না। বলা যায়, তীরে এসে তরী ডুবে গেল। ভারতের মেয়েরা ফুটবলে যে শক্তিশালী তা সবার জানা ছিল। কিন্তু এবার বাংলাদেশের দাপট ছিল অন্য রকম। ফাইনালে কাল ১২ মিনিটে ড্যাঙ্গামেই গ্রেসের গোলে ভারত এগিয়ে গেলেও সমানতালে লড়েছে বাংলাদেশ। তুলনামূলক বেশি আক্রমণই করেছেন সাবিনারা। ৪০ মিনিটে সেমির নায়ক সিরাজ জাহান স্বপ্নার অসাধারণ গোলে বাংলাদেশ সমতা ফেরায়।

সবার আশা ছিল দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ আরও গতিময় ফুটবল খেলবে। খেলেও ছিল, মাঠে কোনোভাবেই ভারতকে ছেড়ে কথা বলেনি। ৫৫ মিনিটে সুযোগ পেয়েও এগিয়ে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। ভারতীয় খেলোয়াড়রা কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত রেফারির এক সিদ্ধান্তে সর্বনাশ হয়ে যায় সাবিনাদের। ৬০ মিনিটে ভারতের অধিনায়ক বালাদেবী বল নিয়ে ডি-বক্সের ভিতর ঢুকলে বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা স্বাভাবিকভাবেই তাকে চার্জ করেন। অথচ পেনাল্টি সিদ্ধান্ত দিয়ে রেফারি দর্শকদের অবাক করে দেন। সুস্মিতা গোল করলে ভারত ২-১-এ এগিয়ে যায়।

রেফারির ভুল সিদ্ধান্তে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সাবিনারা। ৬৬ মিনিটে ইন্দুমতী গোল করে ভারতের শিরোপা নিশ্চিত করেন। অর্থাৎ এক পেনাল্টিতেই বাংলাদেশের সব আশা শেষ হয়ে যায়। তার পরও বাংলার মেয়েদের প্রশংসা করতে হয়। পুরুষরা যেখানে সাফে গ্রুপ পর্ব খেলে বিদায় নিয়েছেন, সেখানে সাবিনারা রানার্স-আপ। এ ফল সামনে মেয়েদের অবশ্যই প্রেরণা জোগাবে। ফুটবলে পুরুষরা পিছিয়ে পড়লেও মেয়েদের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। গত বছর ঢাকায় এফসি কাপ অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাই পর্বে প্রতিপক্ষদের গোলের বন্যায় ভাসিয়ে বাংলাদেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়। এবার সাফে হলো রানার্স-আপ। ফুটবল ফেডারেশন যদি মহিলা ফুটবলারদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় ধরনের সুনাম অর্জন করা সম্ভব। কথা হচ্ছে, ফুটবল ফেডারেশন তা করবে কিনা? তারা উন্নয়নের জন্য অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু তা কখনো বাস্তবে রূপ নেয় না। সাফ রানার্স-আপের পরও সালাউদ্দিনরা যদি নীরব থাকেন তা হবে দুঃখজনক। যেখানে অন্য দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে কেন?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর