শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাশরাফিদের সেই একই চিত্রনাট্য

মেজবাহ্-উল-হক

মাশরাফিদের সেই একই চিত্রনাট্য

ম্যাচের প্রথম বলেই লুক রঞ্চিকে আউট করার পর উচ্ছ্বসিত মাশরাফি বাহিনী। দিন শেষে মাউন্ট মানগুনাইয়ের বে ওভালে এ উল্লাস আর থাকেনি —বিসিবি

গরিবের ছেঁড়া কাঁথা— মাথা ঢাকতে গেলে পা বেরিয়ে যায়, পা ঢাকতে গেলে মাথা বের হয়। রাত পোহায় কিন্তু শীত ছাড়ে না! নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবস্থাও তাই! বোলিং ভালো হয় তো ব্যাটিং খারাপ, ব্যাটিং ভালো হয় তো ফিল্ডিং-বোলিং যাচ্ছেতাই! সিরিজই শেষ হয়ে যাচ্ছে, কাঙ্ক্ষিত জয়ের দেখা নেই।

ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— তিন বিভাগেই গতকাল নিউজিল্যান্ডের সামনে বাংলাদেশ ছিল অসহায়! ফলও যথারীতি আগের মতোই— ৪৭ রানের বড় ব্যবধানে পরাজয়। ওয়ানডে সিরিজের মতো টি-২০ সিরিজটাও হাতছাড়া হয়ে গেল। এখন পরের ম্যাচে হারলে তো হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় পড়তে হবে। অবশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যেভাবে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন, ওয়ানডের মতো এখন টি-২০ সিরিজটা ৩-০ হওয়া যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র!

পরাজিত হলেও প্রতিটি ম্যাচেই ইতিবাচক ‘কিছু’ থাকে, তবে কালকের ম্যাচে সৌম্য ও সাব্বিরের ৬৮ রানের জুটি ছাড়া বলার মতো কোনো কিছু নেই। বরং গতকাল ১৮.১ ওভারে অলআউট হওয়াটা আরও বেশি দৃষ্টিকটু লেগেছে।

মানগুনাইয়ের উইকেটে কোনো জু জু ছিল না। উপমহাদেশের মতো ফ্লাট উইকেটই বানিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। বোলারদের জন্য করার কিছু ছিল না এমন উইকেটে, কেবল লাইনলেন্থে বল করা ছাড়া। নিউজিল্যান্ডের বোলাররা সে কাজটা করেই যথাযথ সুবিধা আদায় করে নিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। সে কারণে ব্লাক ক্যাপসরা যেখানে ১৯৫ রান করে সেখানে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৪৮ রানে।

মানগুনাইয়ে সবচেয়ে বেশি ঝড় গেছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ওপর দিয়ে। বল হাতে এক ওভারে দিয়েছেন ২৮ রান। মাহমুদুল্লাহ এমনিতেই এখন বল হাতে নিয়মিত নন। খুব বিপদে পড়লে তার হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক। গতকালও তাই করেছিলেন। নিউজিল্যান্ড মাত্র ৮ ওভারে ৭০ রান করে ফেললে মাশরাফি বোলিংয়ে নিয়ে আসেন মাহমুদুল্লাহকে। প্রথম ওভারে চার রান দিয়েছেন মাত্র। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারেই সেই দুঃস্বপ্ন!

অবশ্য শুধু মাহমুদুল্লাহকে দোষ দিয়ে আর কী লাভ! সাকিবের মতো পরীক্ষিত বোলারও তো এক ওভারে ১৫ রান দিয়েছেন। মোসাদ্দেকও এক ওভারে ১৫ রান দিয়েছেন। দুই কিউই ব্যাটসম্যান কলিন মুনরো ও টম ব্রস যেভাবে মারকাটারি ব্যাটিং করছিলেন তাতে কি-ই করার ছিল। অথচ ৪৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে খানিকটা ব্যাকফুটেই চলে গিয়েছিল কিউইরা। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে মুনরো ও ব্রস মিলে মাত্র ৬৭ বলে করেন ১২৩ রানের জুটি। এই এক জুটিতেই পাহাড়সম স্কোর পায় নিউজিল্যান্ড।

টি-২০ ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান মুনরো। আউট হওয়ার আগে মাত্র ৫৪ বলে খেলেছেন ১০১ রানেই সাইক্লোন ইনিংস। ৭টি করে ছক্কা ও চার। আরেক ব্যাটসম্যান ব্রস টি-২০ ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। ৩৯ বলে খেলেছেন ৫৯ রানের হার না মানা ইনিংস।

শেষের দুই ওভারে দারুণ বোলিং করেছেন পেসার রুবেল হোসেন। ১৩ রান দিয়ে নিয়েছেন তিন উইকেট। একটি রান আউটও করেছেন তিনি। তবে বাংলাদেশের এই গতি তারকা প্রথম দুই ওভারেই দিয়েছেন ২৪ রান। শেষ দিকে রুবেল লাগাম টেনে না ধরলে কিউইদের স্কোর নিশ্চিতভাবেই ২০০ পেরিয়ে যেত! বাংলাদেশের অন্য বোলারদের স্কোর কার্ড ব্যাখ্যা করার মতো নয়! কিউই ব্যাটসম্যানদের সামনে কেউ-ই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেননি।

রানের পাহাড় টপকাতে যেভাবে শুরু করতে হয় সেভাবে শুরু হয়নি টাইগারদের। পাওয়ার প্লের মধ্যেই তিন উইকেট হারিয়ে দিকভ্রান্ত বাংলাদেশ। হাস্যকরভাবে আউট হয়ে যান তিন ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস, তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। ইমরুল ও সাকিবকে কাটগড়ায় দাঁড় করানো গেলেও তামিমকে তার আউটের জন্য দোষ দেওয়ার উপায় নেই। সাব্বিরের ভুলের কারণেই তাকে রান আউট হতে হয়েছে।

তবে নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যই কিনা জ্বলে ওঠেন সাব্বির। চতুর্থ উইকেটে সৌম্যকে নিয়ে কিউই বোলারদের নাস্তানাবুদ করতে থাকেন। ধারাবাহিক ব্যর্থতার গল্প ভুলে এ দিন যেন দেখা গেল আগের সৌম্যকে। কী দুর্দান্ত ব্যাটিং স্টাইল! দুই ছক্কা ও তিনটি চারে ২৫ বলেই করেন ৩৯ রান। সাব্বির ও সৌম্য এমনভাবে ব্যাট করছিলেন যেন জয়টা বাংলাদেশের জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। জুটিতে ৬৮ রান আসে মাত্র ৪০ বলে।

কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন। আগ্রাসী সৌম্য এক ‘আনাড়ি’ ব্যাটসম্যানের মতো ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নিলেন। তারপর সাব্বির রহমান যে আশার আলোটা প্রজ্বলিত করে রেখেছিলেন তা নিজেই যেন নিভিয়ে দিলেন। ৩২ বলে ৪৮ রান করে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরলেন। সাব্বিরের আউটের পর মাহমুদুল্লাহ, নুরুল হাসানরা কেবল হারের ব্যবধানটা একটুখানি কমিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙা আর হলো না।

বরং যতই দিন যাচ্ছে, টাইগারদের ব্যর্থতার তালিকাটা আরও      লম্বা হচ্ছে। অভিজ্ঞতা বাড়ছে কিন্তু ফলাফলে পরিবর্তন                  নেই। ক্রাইস্টচার্চ, নেলসন, নেপিয়ারের মতো মঙ্গানুইয়েও সেই একই চিত্রনাট্য!

সর্বশেষ খবর