সোমবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিজেদের বাইলজ ভাঙল বাফুফে!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নিজেদের বাইলজ ভাঙল বাফুফে!

রেফারি অপেক্ষা করার পরও প্লে অফ ম্যাচে মাঠে নামেনি উত্তর বারিধারা ও ফেনী সকার

বাইলজ অনেকটা সংবিধানের মতো। নিয়ম মানতেই হবে। পেশাদার ফুটবল লিগে নিজস্ব একটি বাইলজ বা নিয়ম-কানুন আছে। যা বাধ্যতামূলকভাবে ক্লাবগুলোকে মানতে হবে। ১৯৮৭ সালে লিগের কথা মনে আছে? শেষ ম্যাচে মোহামেডান ৩-২ গোলে পরাজিত করেছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে। এর ফলে শীর্ষে থাকা দুই দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যায়। বাইলজ ছিল যদি শীর্ষে থাকা দুই দলের সমান হয় তাহলে শিরোপা নিষ্পত্তি করতে তাদের প্লে-অফ ম্যাচ খেলতে হবে। কিন্তু বাইলজ উপেক্ষা করে সেই ম্যাচে দুই দল নিজেদের যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে। আইন ভাঙার কারণে দুই ক্লাবের শাস্তি না হলেও মোহামেডানের অধিনায়ক রনজিত ও আবাহনীর আসলামকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। পরে আবার প্লে অফ ম্যাচ আয়োজন হয়। দুই দলই অংশগ্রহণ করে।

বাইলজ মানতেই হবে। এখানে কোনো ছাড় নেই। এবার লিগ কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল সর্বনিম্ন পয়েন্টে থাকা দল নিচে নেমে যাবে। কিন্তু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে নিচে থাকা দুই দলের পয়েন্ট সমান হওয়ায়। ২২ ম্যাচে ফেনী সকার ও উত্তর বারিধারা সমানভাবে ১৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করে। বাইলজে আছে পয়েন্ট সমান হলে প্লে অফে নিষ্পত্তি হবে কারা নামবে। সে হিসেবে বাফুফে দুটি প্লে অফ ম্যাচের আয়োজন করে। ফেনী অবশ্য প্রথমে আপত্তি জানিয়ে বলেছিল গোল পার্থক্যে তারা এগিয়ে। এমনিতেই অবনমন রক্ষা হয়েছে। লিগ কমিটি তা মানেনি, তাদের একটাই কথা বাইলজ অনুসরণ করতে হবে। ৪ ও ৭ জানুয়ারি দুটো প্লে অফ ম্যাচের তারিখ নির্ধারণ করে। কিন্তু লিগ কমিটির আইনকে তারা পাত্তাই দেয়নি। ম্যাচের আগে দুই দল বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কাছে চিঠি দেয় পেশাদার লিগে টিকিয়ে রাখতে। এই চিঠিকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। লিগ কমিটির একটাই কথা প্লে অফ খেলতেই হবে। তা না হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ৪ জানুয়ারি প্রথম প্লে অফ ম্যাচে উত্তর বারিধারা ও ফেনী সকার মাঠেই আসেনি। রেফারি নিয়ম অনুযায়ী ১৫ মিনিট বাঁশি নিয়ে মাঠে অপেক্ষা করেন। না আসায় তিনি বাঁশি বাজিয়ে মাঠ ছাড়েন। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম ম্যাচ প্রত্যাখ্যান করার পর দ্বিতীয় ম্যাচের আয়োজনের প্রশ্নই ওঠে না। বাইলজ অনুযায়ী দুই দলেরই ক্রাশ অর্থাৎ নিচে নেমে যাওয়ার কথা। এরপরও লিগ কমিটি কোন আইনে দ্বিতীয় প্লে অফ ম্যাচের আয়োজন করলো? শাস্তি দেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ বলে বাফুফে কি নিরাপদে থাকতে চেয়েছিল। যদি দুই দল দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামে তাহলে একটা দলতো নামবেই। কিন্তু বাফুফেতো এ ক্ষেত্রে নিজেদের গড়া আইন নিজেরাই ভেঙে ফেললো। প্রথম ম্যাচ না খেলার অপরাধে দুই দলতো এমনিতেই নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সেখানে বাফুফে কেন তাদের সুযোগ দিল। এ ব্যাপারে লিগ কমিটির কেউ স্পষ্ট করে কিছুই বলছে না। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেছেন, বাইলজে যা আছে তাই হবে। এখানে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না?

কথা হচ্ছে বাফুফে কি তাদের সিদ্ধান্তের প্রতি অটল থাকবে কিনা! কারণ কেউ কেউ বলছেন কোনো বিতর্কে না গিয়ে বাফুফে সামনে পেশাদার লিগে দল বাড়াতে দুই দলকে রেখেও দিতে পারে। এ ধরনের আলোচনা নাকি লিগ কমিটির ভিতরে ভিতরে চলছিল। বিশেষ করে ঢাকা মোহামেডান যদি সবার নিচে থাকত তাহলে তাদের নামানো হতো কিনা এই নিয়ে সংশয় ছিল। সত্তর দশকে ওয়ান্ডারার্স লিগে সবার নিচে থাকলেও নামানো হয়নি। ঐতিহ্যবাহী দল বলে তাদের প্রথম বিভাগে রেখে দেওয়া হয়। এবার মোহাডোনের ক্ষেত্রে সেই অজুহাত দাঁড় করাত বাফুফে। যাক ১০ নম্বরে থাকায় লিগ কমিটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। কিন্তু উত্তর বারিধারা ও ফেনী সকারের ব্যাপারে কী করবে? বাইলজ তো শুধু দুই দল ভাঙেনি, দ্বিতীয় প্লে অফ ম্যাচের আয়োজন করে বিতর্ক তৈরি করেছে বাফুফেও।

সর্বশেষ খবর