বুধবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

টাইগারদের টেস্ট পরীক্ষা

মেজবাহ্-উল-হক

টাইগারদের টেস্ট পরীক্ষা

টেস্টে নামার আগে অকল্যান্ডে অনুশীলন সেরে নিলেন বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, তাইজুল ইসলাম ও ইমরুল কায়েস —বিসিবি

ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ। টাইগারদের দুঃস্বপ্নের এক মাঠ। যেখানে আগের দুই ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, ব্যাটসম্যানেরা দুই টেস্টে চার ইনিংসের একটিতেও দেড় শ রান করতে পারেননি। ২০০১ সালে খালেদ মাসুদ পাইলটের বাংলাদেশ দল দুই ইনিংসে করেছিল ১৩২ ও ১৩৫, আর ২০০৮ সালে আশরাফুলের দল করেছিল ১৪৩ ও ১১৩।

অভিশপ্ত এ ভেন্যুতেই সদ্যসমাপ্ত ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজের হতাশা ঝেড়ে ফেলতে আগামীকাল ভোরে ‘টেস্ট’ পরীক্ষা দিতে নামছে বাংলাদেশ! শুধু অতীতের বাজে অভিজ্ঞতাই নয়, বেসিন রিজার্ভে টাইগারদের সামনে আজ বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে উইকেট ও কন্ডিশন। সাগরের প্রচণ্ড বাতাস তো থাকছেই, সঙ্গে উইকেটের বাউন্স ও সুইং যেন উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য মৃত্যুফাঁদ!

সাধারণত দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোয় স্বাগতিক দল ‘উইকেট’ মনের মতো করে তৈরি করে সেখান থেকে পুরো ফায়দা তুলে নেয়। সমশক্তির দুই দলের মধ্যে পার্থক্যটা ‘ফিটটি-ফিটটি’ থেকে হয়ে যায় ‘এইটটি-টোয়েন্টি’! নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজ ৬-০ হওয়ার পেছনে সেটি ছিল একটি বড় কারণ।

ওয়ানডে ও টি-২০-এর জন্য নিউজিল্যান্ড তৈরি করেছিল সম্পূর্ণ ব্যাটিংসহায়ক উইকেট। ব্ল্যাক ক্যাপসরা খুব ভালো করেই জানতেন সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের জন্য তাদের বোলারের চেয়ে বাংলাদেশের বোলাররা কোনো অংশেই কম যান না। তাসকিন, রুবেল, মুস্তাফিজ, মাশরাফি— সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে পেস কন্ডিশনে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং অ্যাটাক! তাই শুধু পেস উইকেট বানিয়ে লাভ নেই।

‘পিঞ্চহিটার’— এ জায়গায় অনেকটা পিছিয়ে বাংলাদেশ। এক সাব্বির রহমান ছাড়া আর কেউ এ তালিকায় পড়েন না। আর সাব্বিরকে যদি দ্রুত বিদায় করা যায় তাহলেই সাফল্য নিশ্চিত। আর কিউই দলে ‘হার্ডহিটার’ ব্যাটসম্যানের অভাব নেই। এ কথা চিন্তা করেই ওয়ানডে ও টি-২০-এর জন্য একদম ‘তক্তা মার্কা’ উইকেট তৈরি করেছিল নিউজিল্যান্ড। তাই সাফল্যও হাতেনাতেই পেয়েছে তারা!

টেস্টের উইকেট যে একেবারে সবুজ ঘাসের হবে তা সহজেই অনুমেয়! মুস্তাফিজ বিশ্রামে। ইনজুরি থেকে ফেরা রুবেল হোসেনের পক্ষে দীর্ঘ সময় বোলিং করা কঠিন। আর তাসকিনের সবে অভিষেক হতে চলেছে। অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে টাইগারদের পেস আক্রমণ যতটা শক্তিধর টেস্টের পেস আক্রমণ ঠিক ততটাই যেন দুর্বল। আর এ সুযোগটাই নেওয়ার চেষ্টা করবে নিউজিল্যান্ড। তার মানে দুই টেস্টের ভেন্যু ওয়েলিংটন ও ক্রাইস্টচার্চে তারা পেসারদের স্বর্গই বানাবে!

ওয়ানডে ও টি-২০তে নিউইজল্যান্ডের উইকেট ছিল পেসারদের মৃত্যুফাঁদ, এখন ঠিক উল্টো। আগের টেস্ট সিরিজেও পাকিস্তানকে পেস-আক্রমণ দিয়েই নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন কিউইরা। একই কৌশল অবলম্বন করে বাংলাদেশকেও নাজেহাল করতে চাইবেন।

টেস্টে ‘ভয়ঙ্কর’ সময় পার করতে হবে ব্যাটসম্যানদের! একটু ভুল করলেই সর্বনাশ। স্পিনারদের কাজটাও কঠিন হয়ে যাবে। স্লো ও লো উইকেট থাকবে না। তাই নিখুঁত লাইনলেন্থই একমাত্র ভরসা। তবে তাসকিন-রুবেলের জন্য অপেক্ষা করছে সুসময়! পেসাররা নির্ধারণ করে দিতে পারেন টেস্টের ভাগ্য।

বেসিন রিজার্ভে খেলা বলে কিছুটা দুশ্চিন্তা হয়তো কিউইদের মনেও থাকবে। কেননা এ মাঠে সর্বশেষ টেস্টে গত ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। তা ছাড়া বেসিন রিজার্ভে জয়ের চেয়ে কিউইদের পরাজয়ের তালিকাই বড় (৫৮ ম্যাচে ১৬ জয়, ১৯ পরাজয়, ২৩ ড্র)। তবে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ বলেই ‘বেসিন রিজার্ভ’ নিয়ে বেশ উজ্জীবিত নিউজিল্যান্ড। বেসিন রিজার্ভে সর্বশেষ যে ম্যাচে বাংলাদেশ কিউইদের কাছে উড়ে গিয়েছিল সেই ম্যাচের সাক্ষী মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান এই দলে রয়েছেন। সর্বশেষ ইনিংসে সাকিব ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যানই সুবিধা করতে পারেননি। মুশফিক আউট হয়ে গিয়েছিলেন রানের খাতা খোলার আগেই। আর তামিম জ্বরের কারণে ব্যাট হাতে নামতেই পারেননি। বাংলাদেশ মাত্র ১১৩ রানে অলআউট হয়ে গেলেও সাকিব এক প্রান্ত আগলে রেখে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৪১ রানে। তবে ৮ বছর আগের সেই মুশফিক-তামিম-সাকিব এখন অনেক পরিণত। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মেরুদন্ড। টেস্টে তাদের ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে আছে পুরো দল।

দুই তরুণ ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদের জন্যও এ টেস্ট একটা ভিন্ন মঞ্চ। আগের দুই টেস্টে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯ উইকেট নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন মেহেদী। এবার অন্য রকম পরিবেশে তাকে দিতে হবে পরীক্ষা। আর তাসকিনের এখনো অভিষেকই হয়নি টেস্টে। তবে সবুজ ঘাসের উইকেট দেখে নাকি ভীষণ রোমাঞ্চিত এই গতি তারকা। ওয়েলিংটনে চাপমুক্ত থেকেই খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। ওয়ানডে ও টি-২০-এর মতো জয়ের প্রত্যাশা নেই। তবে ভালো খেলায় থাকবে প্রাপ্তি। এখন দেখা যাক ওয়ানডে ও টি-২০ থেকে শিক্ষা নিয়ে মুশফিকরা ভালো করেন নাকি কিউইদের পেতে রাখা ফাঁদে পা দিয়ে ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি ঘটান!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর