শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাকিব মুশফিকে সোনায় মোড়ানো এক দিন

আসিফ ইকবাল

সাকিব মুশফিকে সোনায় মোড়ানো এক দিন

ঘুম থেকে উঠে টেলিভিশন সেটের সামনে বসে থাকা ক্রিকেটপ্রেমীরা নিশ্চিত চিমটি কেটেছেন নিজেদের শরীরে! খেলা দেখছিলেন আর ভাবছিলেন স্বপ্ন দেখছেন না তো? স্বপ্ন মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন দিন কি এর আগে কখনো এসেছে? হয়তো না। আসুক, আর না আসুক, ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সোনায় মোড়ানো এক দিন। দিনটিকে সোনায় মুড়িয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজের ব্যর্থতার খোলস ছেড়ে দিনটিকে রৌদ্রকরোজ্জ্বল করেছেন দুই তারকা ক্রিকেটার। দুজনের গড়া একাধিক রেকর্ডে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ৫৪২ রান তুলে ‘ফুলের নগরী’ ওয়েলিংটনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে। শুধুই শুভেচ্ছা? বাতাসের নগরীর সব বাতাসকে বশ করে লণ্ডভণ্ড করেছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বোলিং লাইনকে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব ও টেস্ট অধিনায়ক মুশফিক যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে ৩৫৯ রানের নতুন রেকর্ডও গড়েছেন কাল।

বেসিন রিজার্ভের আগের দুই টেস্ট এত দিন শুধুই দুঃস্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের জন্য। তাই স্বপ্ন দেখার সাহস একটু বেশিই ছিল এবার। তার ওপর ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজের হতচ্ছাড়া পারফরম্যান্স ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল গোটা দলকে। কিন্তু ভালো করতে হবে, নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখতে হবে— এমন পণেই প্রথম দিনটি নিজেদের করে নিয়েছিলেন তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হক। দুজনের হাফ সেঞ্চুরি সাকিব, মুশফিকদের আত্মবিশ্বাসের পারদটাকে চড়িয়ে দেয় সর্বোচ্চে। মুশফিক কাল দিনের ২০ নম্বর বলে খেলতে নামেন মুমিনুলের বিদায়ের পর। সাকিব আগের দিন অপরাজিত ছিলেন ৫ রানে। এরপর দুজনে যা করলেন, তা শুধুই কল্পনার রংতুলিতে আঁকা সম্ভব। সেই কল্পনাকে কাল বাস্তবের আঁচড়ে আঁকলেন দুই তারকা। উইকেটের চারদিকে খেললেন একের পর এক বাহারি সব স্ট্রোক। খেললেন স্বপ্ন দেখানো দুটি ইনিংস। দুজনই করলেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। সাকিবেরটা আবার ডাবল সেঞ্চুরি; যা বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। ২১৭ রানের ইনিংস খেলেন সাকিব বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ২৭৬ বলে। মুশফিকের ১৫৯ রানের ইনিংসটি পুরোপুরি আস্থার প্রতীক।

২১৭ রানের রেকর্ডে গড়া ইনিংসটি খেলে ৩ হাজারি ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন সাকিব। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে হাবিবুল বাশার (৩০২৬) ৩ হাজারি ক্লাবে নাম লিখিয়েছিলেন। এরপর তামিম ইকবাল, ৩৪০৫ রান। সাকিবের রেকর্ডে গড়া ইনিংসটিতে কী নেই। দেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। আগের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২০৬ তামিম ইকবালের, ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে। বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক আবার সাকিবের গতকালের সব রেকর্ডের সঙ্গী। ২০১৩ সালে গলে মুশফিক খেলেছিলেন ২০০ রানের ইনিংস। ৪৫ টেস্ট ক্যারিয়ারে সাকিবের বর্তমানে রান ৩১৪৬। আগের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৪৪ রান, পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১১ সালে। ২০১০ সালে ডুনেডিনে ১০০ রানের ইনিংসও খেলেছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। গতকাল ৩১ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তিনি পেছনে ফেলেছেন মুমিনুলকে। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৭টি বাউন্ডারির রেকর্ড ছিল মুমিনুলের। পঞ্চম উইকেটে সাকিব-মুশফিকের ৩৫৯ রান বাংলাদেশের যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ। ২০১৫ সালে খুলনায় উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ও ইমরুলের ৩১২ রান ছিল এত দিন সর্বোচ্চ। পঞ্চম উইকেট জুটিতে সাকিব-মুশফিকের রান টেস্ট ক্রিকেটে চতুর্থ সর্বোচ্চ। ১৯৪৬ সালে স্যার ডন ব্রাডম্যান-বিল পন্সফোর্ডের ৪০৫ রান পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেট জুটিতে এই স্কোর সর্বোচ্চ। আগের ২৮১ রানের রেকর্ড ছিল জাভেদ মিয়াঁদাদ ও আসিফ ইকবালের। পঞ্চম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ মুশফিক-আশরাফুলের ২৬৭ রান।

দুজনের সোনায় মোড়ানো দিনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন শেষ করে ৭ উইকেটে ৫৪২ রান তোলে। দলগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভাঙতে টাইগারদের এখন দরকার আরও ৯৭ রান। ২০১৩ সালে গলে ৬৩৮ রান করেছিল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ৫০১, ২০১৩ সালে যা করেছিল চট্টগ্রামে। এখন শুধু আরও একটি রেকর্ডের অপেক্ষা!

সর্বশেষ খবর