সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর মতো কি সাকিব আল হাসান এখন বলবেন, ‘আই অ্যাম দ্য গ্রেটেস্ট’!
২১৭ রানের ব্যক্তিগত ইনিংস ভূরি ভূরি রয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটে। কিন্তু বাংলাদেশে এই প্রথম। তার ওপর প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৩ হাজার রান (৩১৪৬) ও ১৫৯ উইকেট নিয়েও নিজেকে তুলে ধরেছেন অনন্য উচ্চতায়। তাই বাংলাদেশের ক্রিকেটার হিসেবে বলতেই পারেন, ‘আমিই সেরা’। কিন্তু সে পথে হাঁটেননি ঠাণ্ডা মাথার বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। রেকর্ডে মোড়ানো ইনিংস খেলে শুধু বলেছেন, ‘প্রয়োজনে দেশের জন্য এমন একটি ইনিংস খেলতে পেরে ভালোই লাগছে।’ এমন সময় ইনিংসটি খেলেছিলেন, যখন ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটের বিপর্যস্ত পারফরম্যান্স কাটিয়ে টেস্টে ভালো খেলা ছিল জরুরি। সাকিবের ক্যারিয়ারসেরা, দেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোরে ভর করে ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিনটিকে নিজেদের করে নিয়েছে।
সাকিব কথা বলেন কম। হাসেন কম। সবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা কম। নিন্দুকের এমন কত সমালোচনা। ১০ বছরের ক্যারিয়ারে কতবার নিন্দুকের সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। কত ম্যাচ জিতিয়ে উৎসবের রঙে ভাসিয়েছেন দেশকে। কিন্তু কাল চাপের মুখে যেভাবে জবাব দিয়েছেন অনিন্দ্যসুন্দর ব্যাটিং করে, এক কথায় অসাধারণ। প্রথম দিন ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। কাল তার সঙ্গে যোগ করেন আরও ২১২। ২১৭ রানের ইনিংস খেলার পথে গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিক এখন তিনি। আগের রেকর্ডটি ছিল তামিম ইকবালের, ২০৬ রানের। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ৩৫৯ রানের রেকর্ড জুটি গড়েছেন; যা বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ। এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩১ বাউন্ডারির রেকর্ড হাঁকানো সাকিব দিন শেষে মিডিয়ার মুখোমুখিতে বলেন, ‘ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটে ভালো না খেলায় টেস্টে ভালো খেলা জরুরি হয়ে পড়েছিল। আমার জন্যও জরুরি ছিল। ইনিংসটি আমার জন্য যেমন, তেমন দেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের জন্য এমন একটি ইনিংস খেলতে পেরে ভালোই লাগছে।’২১৭ রানের ইনিংসটি খেলেছেন ২৭৬ বলে। ক্যারিয়ারের এত লম্বা সময় ধরে কখনো ব্যাটিং করেননি সাকিব। তাই দিন শেষে এমন একটি ইনিংস খেলার পরিকল্পনার ব্যাখ্যায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বলেন, ‘আমরা নিজেদের মতো খেলতে চেয়েছি। বেসিন রিজার্ভের উইকেটে ব্যাটিং করা একটু সহজ ছিল। আমাদের পরিকল্পনা ছিল বলের মেজাজ বুঝে খেলা। তা করতে পেরেছি বলেই সাফল্য পেয়েছি।’
হাবিবুল বাশার (৩০২৬) ও তামিম ইকবালের (৩৪০৫) পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ৩ হাজারি ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন সাকিব। বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ৩ হাজার রান (৩১৪৬) ও দেড় শ উইকেট (১৫৯) শিকারি এলিট ক্লাবের সদস্য। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এতটাই কার্যকর ক্রিকেটার যে, কলকাতা নাইট রাইডার্সের একমাত্র বাংলাভাষী ক্রিকেটার। তাকে পঞ্চম বছরের মতো রেখে দেওয়ার ব্যাখ্যায় কলকাতার এক সাংবাদিক বলেছিলেন, ‘সাকিব গোটা বাংলার (বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলা) প্রতিনিধি।’ ভুল কি বলেছেন? ভুল বলেননি ভারতীয় সাংবাদিক। সাকিব সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।