রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

তবু বিস্মিত নন তারা

ফুটবলে র‌্যাঙ্কিং ১৯০

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তবু বিস্মিত নন তারা

গোলাম সারোয়ার টিপু - শফিকুল ইসলাম মানিক

নিউজিল্যান্ড ট্যুরে ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। শঙ্কা ছিল টেস্টেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। না, ওয়েলিংটন টেস্টে প্রশংসনীয় নৈপুণ্য প্রদর্শন করছে টাইগাররা। বাংলাদেশের ক্রিকেট একটা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বড় ধরনের সাফল্য আশা করা যায় ক্রিকেটারদের কাছ থেকে। কিন্তু ফুটবলে কোনো অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। জনপ্রিয় এই খেলা লাইফ সাপোর্টে আছে বলা যায়। যতটুকু আশা তা মহিলা ফুটবলারদের ঘিরে। পুরুষদের ব্যর্থতা যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফুটবল মানেই এখন মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়া।

এতটা সংকটাপন্ন অবস্থা যে ভুটানের মতো দুর্বল দলের কাছেও হার মানছে। দেশের মান এতটা নিচে নামানোর পরও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন এটা নিছক দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু দেশের ফুটবলের ভয়াবহতা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কি ফুটবলার হিসেবে জয় উপলব্ধি করছেন? ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে নামতে নামতে ১৯০তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ফিফার সদস্যভুক্ত ২০১টি দেশকে নিয়ে ফিফার র‌্যাঙ্কিং নির্ধারণ করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯০। ইতিহাসে সবচেয়ে নিচে অবস্থান করছে। যেভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে হয়তো র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ২১১তে গিয়ে ঠেকলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। কেন এই অধঃপতন! এ ব্যাপারে ফুটবল ব্যক্তিত্ব গোলাম সারোয়ার  টিপু বলেন, ‘র‌্যাঙ্কিংয়ে এমন অবস্থান দেখে আমি বিস্মিত হয়নি। দেখেন র‌্যাঙ্কিং কোনো ফ্যাক্টর নয়। ওঠা-নামা করবেই। র‌্যাঙ্কিংয়ে নিচে থাকলে বিশ্বকাপে ভালো খেলেছে এমন উদাহরণ দেওয়া যায়। বাংলাদেশ তো জিততেই পারছে না। দুর্বল ভুটানের কাছে হেরেছে। সেক্ষেত্রে র‌্যাঙ্কিংয়ে অধঃপতন তো হবেই।’ টিপু বলেন, এ অবস্থার জন্য আমি শুধু বর্তমান বাফুফের কমিটিকে দায়ী করব না। দায়ভার নিতে হবে আগের কমিটি বা ক্লাবগুলোকে। ৭০ বা ৮০ দশক পর্যন্ত ফুটবলে দর্শক ছিল। ফুটবলের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। আমরা তা কাজে লাগাতে পারেনি। যারা বাফুফের দায়িত্ব পালন করেছেন তারা কখনো লক্ষ্য ঠিক করে কর্মসূচি দিতে পারেনি। ফুটবলকে এগিয়ে নিতে যে কাজ করা উচিত ছিল তা কেউ করতে পারেনি। ক্রিকেট এগিয়েছে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে। ফুটবলে আরও ভালো সুযোগ থাকলেও ব্যর্থ হয়েছি।

টিপু বলেন, ‘বর্তমান কমিটির অনেকে ৯ বছর ধরে বাফুফের কমিটিতে আছেন। অধিকাংশই খ্যাতনামা ফুটবলার। আশা ছিল এদের দিয়ে ফুটবলে ভালো কিছু ঘটবে। অথচ ফুটবলে সবচেয়ে দুঃসময় নেমে এসেছে। ক্লাবগুলোও ভূমিকা রাখতে পারছে না। অবাক হলাম উত্তর বারিধারা ও ফেনী সকারের কাণ্ড দেখে। তারা বাইলজই মানেনি। এতেই বোঝা যায় ক্লাবগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বাফুফে। তাহলে আপনি ফুটবলের ভালো আশা করবেন কীভাবে? ক্যালেন্ডার ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমি সন্দিহান এর বাস্তবায়ন নিয়ে। সত্যি বলতে কী ফুটবলে ভালো কিছু ঘটবে তা অদূর ভবিষ্যতেও আশা করা যায় না। তার চেয়ে বরং মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে।’

সাবেক ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘১৯০ র‌্যাঙ্কিং দেশের জন্য নিঃসন্দেহে লজ্জার। তা কী বাফুফে অনুভব করছে? তবে আমি অবাক হয়নি ব্যর্থতার সাগরে ডুবে থাকলে র‌্যাঙ্কিং তো নিচে নামবেই। একই লোক ৯ বছর ধরে দায়িত্বে আছেন তারা ব্যর্থতা ছাড়া ফুটবলে কী কিছু দিতে পেরেছেন। কেন পারছেন না তার কারণগুলো কি চিহ্নিত করতে পেরেছেন? চেয়ারে বসা আর বিদেশে ট্যুর করলে কী ফুটবলের উন্নয়ন ঘটবে? জানি না এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কি? বাফুফে ক্যালেন্ডার ঘোষণা করেছে। এটা শুধু ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে ক্লাব ও সাবেক ফুটবলারদের সহযোগিতা নিতে হবে। কেননা ফুটবলে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে তা বাফুফের পক্ষে একা সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। যে রোগ হয়েছে তার জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। অযথা হাঁ-হুতাশ করে লাভ নেই।’

 

সর্বশেষ খবর