সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

গোল খরায় দেশি ফুটবলাররা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

গোল খরায় দেশি ফুটবলাররা

সালাম মুর্শেদীর ২৭ গোলের রেকর্ড এখনো অক্ষুণ্ন রয়েছে। ১৯৮২ সালে মোহামেডানের জার্সি পরে লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন তিনি। সালাম চেয়েছিলেন দেশের কোনো ফুটবলার ২৭ গোল টপকিয়ে নতুন রেকর্ড গড়ুক। না, কোনো বিদেশি বা দেশি ফুটবলার ৩২ বছরে তার রেকর্ডটি ভাঙতে পারেননি। ভবিষ্যতেও ভাঙা সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা, পেশাদার লিগে স্বল্পসংখ্যক ম্যাচ খেলে ২৮ গোল করাটা কঠিন। আর দেশি ফুটবলারদের যে অবস্থা তাতে সালামের রেকর্ডটা ভাঙা স্বপ্নই বলা যায়। গত কয়েক মৌসুম ধরে ফুটবলে বিদেশিদের দাপট। যারা লিগ জিতছে সেখানে বিদেশিদের অবদান রয়েছে।

জনপ্রিয় ঢাকা আবাহনীর কথাই ধরা যাক। এবার পেশাদার লিগে পঞ্চমবারের মতো শিরোপা জিতেছে। এ নিয়ে তারা পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হলো। এত বড় কৃতিত্বের পেছনে দেশি ফুটবলারদের পারফরম্যান্স কি চোখে পড়েছে? ফুটবল ১১ জনের খেলা। তারপরও ফুটবল বিশ্লেষকদের অভিমত, দুই বিদেশি সানডে ও লি টাক না থাকলে আবাহনীর পক্ষে শিরোপা জেতা অসম্ভব ছিল। বিষয়টি অবাক হওয়ার মতো। দুজন ফুটবলার দলকে সাফল্য এনে দেন কীভাবে? লোকালদের কি কোনো ভূমিকাই নেই। বাস্তবতা হলো, আবাহনীর পারফরম্যান্স তাই বলে। আবাহনীর প্রতিটি ম্যাচে জয়ের পেছনে মূল ভূমিকা রাখেন সানডে ও লি টাক। তাদের গোল ছাড়া আবাহনী ম্যাচ জিতেছে এমন সংখ্যা খুবই কম। অথচ এবার লোকাল ফুটবলারদের পেছনে দলটি মোটা অঙ্ক ব্যয় করে।

অনেকেই অভিযোগ করেন, ঘরোয়া মৌসুমে আগের মতো মানসম্পন্ন বিদেশি ফুটবলারের দেখা মিলছে না। নিম্নমানের খেলোয়াড়দের পেছনে অঢেল অর্থ ব্যয় করছে। কথাটি একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। ৮০-৯০ দশকের কথা চিন্তা করুন, ঢাকার মাঠে কোন মানের বিদেশির দেখা মিলত। ১৯৭৪ সাল থেকেই ঢাকার মাঠে বিদেশিরা খেলছেন। কিন্তু আশির দশকে বিশ্বকাপ খেলা করিম মোহাম্মদ, সামির সাকি খেলে গেছেন। ছিলেন নালজেগার, বিজন তাহেরি, মুর্তুজা, কাজাকভ, ঝুকভ, এমেকা, চিমা, পলিনকভ, রহিমভদের মতো উঁচু মানের ফুটবলার। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখা গেছে তা অকপটে স্বীকার করেছিলেন তখনকার লোকাল তারকা ফুটবলাররা।

গত কয়েক বছর ধরে ঘরোয়া আসরে বিদেশি ফুটবলাররা খেললেও চোখে পড়ার মতো পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন সনি নর্দে। মান নিয়ে প্রশ্ন তুললেও মাঠে কিন্তু বিদেশিদের দাপট চোখে পড়ছে। এবার পেশাদার লিগের চিত্র তুলে ধরলে লোকালদের করুণ দশা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। বিশেষ করে আক্রমণভাগের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, শীর্ষ ৯ জনের গোলের তালিকায় দেশি খেলোয়াড় কেউ নেই। লিগে আরামবাগ ৭ ও মোহামেডানের পজিশন ছিল ১০ নম্বরে। তারপরও এ দুই দলের সাজিদুর রহমান ও তৌহিদুল আলম লোকালদের কিছুটা হলেও মান রক্ষা করেছেন। যৌথভাবে ৮ গোল দিয়ে তারা ছিলেন লোকালদের মধ্যে শীর্ষ গোলদাতা। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে কেন যে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা গোল পান না তা ঘরোয়া আসরের পারফরম্যান্সকে কারণ হিসেবে দাঁড় করানো যায়।

কথা হচ্ছে, স্থানীয় ফুটবলাররা কেন গোল খরায় ভুগছেন। এ ব্যাপারে জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ছাইদ হাছান কানন বলেন, লোকালরা গোল না পাওয়ায় আমিও বিস্মিত। এর প্রভাব জাতীয় দলে পড়বে। সহজ সহজ সুযোগ পাছে তারপরও জালে বল পাঠাতে পারছে না। এক্ষেত্রে দম তো আছেই, কমিটমেন্টের ব্যাপারও জড়িত। একজন খেলোয়াড়কে মনে রাখতে হবে, ক্লাব তাকে লাখ লাখ টাকা দিচ্ছে। একটা মিস দলের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে তা কি তারা ভাবছে? দেখেন বিদেশিরা গোল পাচ্ছে এটা কোনোভাবে সুখবর নয়। এতে করে লোকালদের প্রতি ক্লাবগুলোর আগ্রহ স্বাভাবিকভাবে কমে যাবে। তারা চাইবে আক্রমণভাগে বিদেশি আনার। যার যার দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। টাকা পেলাম এটাই মুখ্য ব্যাপার নয়। এর সঙ্গে ক্যারিয়ারও জড়িত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর