শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কার হাসি কে হাসল

আসিফ ইকবাল

কার হাসি কে হাসল

ওয়েলিংটন টেস্ট শেষ পর্যন্ত দুঃস্বপ্নেই শেষ হয়েছে। জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসেও হেরে গেছে টাইগাররা। এমন এক টেস্টে আবার বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বারবার ইনজুরির শিকার হয়েছেন। অধিনায়ক মুশফিক একাই পড়েছেন দুই বার। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির পথে আঙ্গুলে ব্যথা পাওয়ায় কিপিং করতে পারেননি। বদলি কিপার হিসেবে ইমরুল কায়েস নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে পাঁচ ক্যাচ নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। সেই ইমরুলও ইনজুরিতে পড়েন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার সময়। চলে আসেন মাঠের বাইরে। কাল ব্যাটিংয়ের সময় টিম সাউদির বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠে শুয়ে পড়েন মুশফিক —এএফপি

চারদিন ধরে ওয়েলিংটন টেস্ট জয়ের স্বপ্ন উড়াউড়ি করছিল বাংলাদেশ শিবিরের আশ-পাশে। কিন্তু পঞ্চম দিনে স্বপ্নটা শেষ পর্যন্ত দুঃস্বপ্নে রূপ হয়। মুশফিকদের মুখের হাসি কেড়ে নিয়ে মধুর হাসিতে বেসিন রিজার্ভের নীলাভ আকাশকে রঙিন করে তুলেন কেন উইলিয়ামসনরা। শুধুই কি দুঃস্বপ্ন, অনেক রেকর্ড গড়ে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেওয়া বাংলাদেশকে বিব্রতকর এক রেকর্ডও উপহার দেয় নিউজিল্যান্ড ৭ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয়ে। হাসিমুখে দেশে ফেরার অবশ্য এখনো সুযোগ রয়েছে মুশফিকদের। সেটা ২০-২৪ জানুয়ারি ক্রাইস্টচার্চে শেষ টেস্টেই প্রমাণিত করতে হবে।

খেলা মানেই হারজিৎ। তবে টেস্ট ক্রিকেটে আরও একটি ফল অনিবার্য, ড্র। জয় এবং ড্রয়ের স্বপ্ন জাগানো টেস্ট হেরে যাওয়ায় রেকর্ডটি এখন বাংলাদেশের জন্য রীতিমতো বিব্রতকর। কেন বিব্রতকর(!) ট্যাগটি গায়ে লাগায় সাকিব, মুশফিকদের অসাধারণ পারফরম্যান্সকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে?

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫৯৫ রান। কত রেকর্ড সেই ইনিংসের সঙ্গী। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। যা আবার টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। মুশফিকুর রহিমের ১৫৯। দুই তারকা ক্রিকেটারের ৩৫৯ রানের জুটি যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। এমন রেকর্ড গড়া ইনিংসের জবাব বেশ ভালোভাবে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড টম ল্যাথামের ক্যারিয়ার সেরা ১৭৭ রানে। দুই দলের প্রথম ইনিংসে টেস্টের পৌনে চারদিন তখনো শেষ। বাকি ১২০-১২৫ ওভার। বাকি দুই দলের দুই ইনিংস। এমন পরিস্থিতিতে ম্যাচ ড্র হচ্ছে-সবাই বলবেন। বলেছেনও সবাই। অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট বলেই জয়ের স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে বেসিন রিজার্ভ থেকে উড়াল দিয়ে আছড়ে পড়ে তাসমান সাগরে।   

টেস্টে প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করে হারের রেকর্ডটি ছিল ১৮৯৪ সালে। সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৮৬ রান করেও হেরেছিল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। টেস্টটি অবশ্য ছিল ‘টাইমলেস’ বা ‘সময়হীন’। টেস্টটি চলেছিল ৭দিন। টেস্ট পাঁচদিনে গড়ানোর পর এতদিন সবচেয়ে বড় হার ছিল পাকিস্তানের। ১৯৭২ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেটে ৫৭৪ রান করে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। তারপরও ম্যাচটি হেরে গিয়েছিল পাকিস্তান ৯২ রানে। অস্ট্রেলিয়ারও এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। ২০০৩ সালে অ্যাডিলেডে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ রান করে হেরেছিল ৪ উইকেটে। প্রায় ৬০০ (৫৯৫/৮) রান করে হারের বিব্রতকর রেকর্ডের মালিক এখন বাংলাদেশ। তবে প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ রান করেও হেরেছিল টাইগাররা। ২০১২ সালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টটি হেরেছিল বাংলাদেশ ৭৭ রানে। সাড়ে ৫০০ রান করে দুবার টেস্ট হারের একমাত্র মালিক এখন বাংলাদেশ।

প্রথম ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরি, তিনটি হাফসেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯৫ রান করে। জবাবে নিউজিল্যান্ড থমকে দাঁড়ায় ৫৩৯ রানে। ৫৬ রানে এগিয়ে থেকে মুশফিকদের দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৬০ রানে। প্রথম ইনিংসে সাড়ে ৫০০ রান করার পরের ইনিংসে বাংলাদেশের এটাই সর্বনিম্ন সংগ্রহ। ২০১২ সালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ করার পর পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিল ১৬৭। বেসিন রিজার্ভের আগের দুই টেস্টের রেকর্ড বরাবরই দুঃস্বপ্নের। প্রথম চারদিন এবার সেখানে ছিল শুধুই স্বপ্ন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতা ও সব মিলিয়ে দুর্বল বোলিং অ্যাটাকের কারণেই শেষ পর্যন্ত অজেয়ই থাকল নিউজিল্যান্ড।

বেসিন রিজার্ভের উইকেট পেসারদের স্বর্গ। সেখানে বাংলাদেশ খেলতে নামে তিন অনভিজ্ঞ পেসার নিয়ে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, তিন পেসারের টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা দুটি! কামরুল ইসলাম রাব্বির টেস্ট খেলেছেন দুটি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবং শুভাশীষ রায় ও তাসকিন আহমেদের অভিষেক। তিন পেসারের সঙ্গী যে দুই স্পিনার, তাদের একজন সাকিবের টেস্ট অভিজ্ঞতা ৪৪টি এবং মেহেদী হাসান মিরাজের টেস্ট ক্যারিয়ার দুটি। এমন বোলিং অ্যাটাক নিয়ে স্বপ্ন দেখা দুঃস্বপ্নই। সেটাই ম্যাচ শেষে হলো। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতায় নিউজিল্যান্ডের টার্গেট দাঁড়ায় ২১৭ রানের। অধিনায়ক উইলিয়ামসন ও রস টেলর টি-২০ স্টাইলে ব্যাটিং করে ৩৯.৪ ওভারে পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে। উইলিয়ামসন ১০৪ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেন মাত্র ৯০ বলে।

স্বপ্ন দেখানোর টেস্টটি দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়। বাংলাদেশের হাসি কেড়ে নেওয়া ম্যাচটির ম্যাচসেরার পুরস্কারও কেড়ে নিয়েছে স্বাগতিকরা। সাকিব ক্যারিয়ার সেরা ২১৭ রানের ইনিংস খেলার পরও ম্যাচসেরা হন ১৭৭ রানের ইনিংস খেলা টম ল্যাথাম। পুরো খেলার পাশাপাশি সান্ত্বনার পুরস্কারের লড়াইয়েও হেরে যায় টাইগাররা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর