বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্রাইস্টচার্চেও অনভিজ্ঞ পেস আক্রমণ?

মেজবাহ্-উল-হক

ক্রাইস্টচার্চেও অনভিজ্ঞ পেস আক্রমণ?

ওয়েলিংটনে তাসকিন-রাব্বি-শুভাশীষদের নিয়ে গড়া পেস অ্যাটাক কোনো চাপই সৃষ্টি করতে পারেনি প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের ওপর। টেস্ট হারের পর পেসারদের অনভিজ্ঞতাকে দুষেছেন অধিনায়ক মুশফিক। এই পেস বোলারদেরই কি দেখা যাবে ক্রাইস্টচার্চে? —ফাইলফটো

তামিম ইকবাল নিজে ব্যাটসম্যান, তাই ওয়েলিংটনে লজ্জার রেকর্ড গড়ে হারার পেছনে ব্যাটসম্যানদেরই দায়ী করেছেন। তবে রাখঢাক না করে মুশফিকুর রহিম বলেছেন, দোষটা ছিল বোলারদেরই। বোলারদের অনভিজ্ঞাকে দায়ী করেছেন।

বাংলাদেশের দুই ইনিংসের দিকে তাকালে মনে হবে, তামিম ইকবালই আসল কথাটা বলেছেন। প্রথম ইনিংসে যেখানে ৫৯৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করার সাহস দেখিছেন টাইগাররা সেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৬০ রানে অলআউট। তবে হ্যাঁ, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্যি হলে ব্যাটসম্যানদের আর দোষ দিয়ে কি লাভ! অভিযোগটি হচ্ছে, চতুর্থ দিন শেষে নাকি উইকেটে পানি দিয়েছিল কিউইরা? যা গুরুতর অপরাধ! মিডিয়ায় এসেছে, উইকেটে পানি দেওয়ার দৃশ্যটা নাকি বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে মোবাইলে ছবি তুলেও রেখেছেন। আর পানি দিয়ে থাকলে তো ব্যাটসম্যানদের জন্য উইকেট মৃত্যুফাঁদ হবেই?

কিন্তু পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের বোলাররা কী করেছেন! কিউই ব্যাটসম্যানদের সামনে তারা বল ফেলানোর জায়গাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। একের পর এক বাউন্ডারি। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে যে পাঁচ বোলার বোলিং করেছেন তাদের মধ্যে সাকিব আল হাসান ছাড়া বাকি চার বোলার-মেহেদী হাসান মিরাজ, কামরুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও শুভাশীষের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে ছিল মাত্র চার ম্যাচ। সে কারণে সাকিব কম রান দিলেও বাকিরা কেউই সুবিধা করতে পারেননি। স্পষ্ট বোঝা গেছে বোলিং লাইনে অনভিজ্ঞতার ছাপ!

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের আগে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা এখন পেস আক্রমণকে নিয়ে। নিউজিল্যান্ডের বড় ভয় বাংলাদেশের স্পিনকে। তাই স্পিনারদের জন্য তারা বিন্দুমাত্র সুবিধাও রাখতে চাইবে না উইকেটে। তাই সাকিব-মিরাজ কিংবা মাহমুদুল্লাহ যা করবেন সেটা অনেকটা ‘বোনাস’। আসল কাজ করতে হবে পেসারদেরই। কিন্তু ওয়েলিংটন টেস্টে একাদশে থাকা তিন পেসারের পারফরম্যান্সই ছিল হতাশাজনক।

নিউজিল্যান্ডের পেস কন্ডিশনে তাসকিন আহমেদকে ভাবা হচ্ছিল বাংলাদেশের সেরা অস্ত্র। সে কারণে প্রথম টেস্টে তাকে অভিষেক করানো হলো। কিন্তু প্রথম ইনিংসে ২৯ ওভার বোলিং করে তিনি রান দিয়েছেন ১৪১, ওভার প্রতি ৪.৮৬ গড়ে। উইকেট পেয়েছেন মাত্র একটি। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে তাসকিন মাত্র ৬ ওভারেই দেন ৩৮ রান। ওভার প্রতি ৬.৩৩ গড়ে।

স্বপ্ন নিয়ে শুভাশীষ রায়কে দলে রেখেছিলেন নির্বাচকরা। তিনিও ব্যর্থ। প্রথম ইনিংসে ২৬.২ ওভার বোলিং করে ৮৯ রান দিয়েছেন। যদিও দুটি উইকেট পেয়েছেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে তার বোলিং হয়েছে যাচ্ছেতাই। ৫ ওভারেই দিয়েছেন ৩২ রান।

প্রথম ইনিংসে কামরুল ইসলাম রাব্বি দিয়েছেন ২৬ ওভারে ৮৭ রান। তবে তিন উইকেট নিয়ে নিজের সক্ষমতা দেখিয়েছেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে রাব্বিও ৭ ওভারে দিয়েছেন ৩১ রান। তিন পেসারের এমন অবস্থা হয়েছিল যে অধিনায়ক বল কার হাতে তুলে দেবেন তা বুঝতেই পাচ্ছিলেন না।

তাই শেষ পর্যন্ত লজ্জার ‘কণ্টক হার’ গলায় পড়তেই হয়! কিন্তু ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট নিয়ে কি ভাবছে টিম ম্যানেজমেন্ট। আবারও এই অনভিজ্ঞ পেস লাইন আপকেই নামিয়ে দেবেন মাঠে। অবশ্য হাতে অপশনও নেই। দ্বিতীয় টেস্টের জন্যও একই দল ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু একটা অপশন তো রয়েছে— রুবেল হোসেন!

কিন্তু রুবেলকে প্রথম ম্যাচে কেন খেলানো হয়নি? ফিটনেসের সমস্যা নাকি অ্যাক্সপেরিমেন্ট চালানো হয়েছিল। মুস্তাফিজের ইনজুরির পর তো রুবেলের বিকল্প ছিল না। তাছাড়া ওয়েলিংটন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে যে অবস্থার তৈরি হয়েছিল এমন পরিস্থিতিতে রুবেলের বল খুবই কার্যকর। অসাধারণ ইয়র্কার দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তার। আর যদি রুবেলের ফিটনেস সমস্যাই হবে তাহলে কেন দ্বিতীয় টেস্টের দলেও তাকে রাখা হয়েছে?

টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে জাতীয় দলের সাবেক প্রধান নির্বাচক ও অধিনায়ক ফারুক আহমেদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, নিউজিল্যান্ডে কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্সপেরিমেন্ট চালাতে গেলেই সমস্যায় পড়বেন। শেষ পর্যন্ত ফারুকের কথাটাই কিনা সত্যি হলো! যদি এক সঙ্গে দুই পেসারের অভিষেক না ঘটিয়ে অন্তত রুবেলকে নেওয়া যেত তাহলে ম্যাচের ফল অন্য রকম হতে পারত।

‘সবুজ ঘাসের উইকেট’ ‘সবুজ ঘাসের উইকেট’ করতে করতে সফর শেষ হয়ে গেল কিন্তু নিউজিল্যান্ডে সেই চিরাচরিত উইকেটের দেখা মিলল না। তবে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে সত্যি সত্যি সবুজ ঘাসের  উইকেটও থাকতে পারে। কেননা কিউইরা বুঝে গেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও সামর্থ্য আছে। তাই যদি শেষ টেস্টে সত্যিই সবুজ উইকেট থাকে, সেক্ষেত্রেও এই অনভিজ্ঞ পেস আক্রমণ নিয়ে খেলতে নামবে বাংলাদেশ নাকি অভিজ্ঞ পেসার রুবেল হোসেনকে জায়গা দেওয়া হবে? প্রশ্নের উত্তরটা দিতে পারেন কেবল কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্ট।

সর্বশেষ খবর