বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্পন্সরশিপ মানি নিয়ে লুকোচুরি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

স্পন্সরশিপ মানি নিয়ে লুকোচুরি

ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো সরকার থেকে প্রতি বছরই অনুদান পাচ্ছে। খেলার গুরুত্ব বুঝে এই অর্থ বণ্টন করা হয়। অধিকাংশ ফেডারেশনের অভিযোগ অনুদান যা দেওয়া হয় তা দিয়ে খেলা চালানো মুশকিল হয়ে পড়ে। অথচ টুর্নামেন্ট চালাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারের অনুদান ও স্পন্সরশিপের মানি। এরপরও ফান্ডের সমস্যা হবে কেন? ক্রীড়াঙ্গনে কোটি কোটি টাকার স্পন্সর হচ্ছে। কিছু ফেডারেশন সংবাদ সম্মেলনে আনুমানিক একটা হিসাব দিলেও অন্যরা স্পন্সরের সঠিক অর্থ কখনো প্রকাশ করে না। কথা হচ্ছে কেন এই লুকোচুরি?

ফুটবলের কথা ধরা যাক। ঘরোয়া আসরতো আছেই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে কম স্পন্সর আসছে না। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপে সহযোগিতার হিড়িক পড়ে যায়। গত বছরের কথা ধরা যাক। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চরম ভরাডুবির পরও বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ সফল করে তুলতে ব্যাংক, শিল্প প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে নিজেই বলেছিলেন টুর্নামেন্টে ফান্ড কোনো সমস্যা হবে না। স্পন্সরের অর্থের পরিমাণ বাফুফে প্রকাশ করেননি। তারপরও সাড়া যে ভালোই পড়েছিল তা ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দেখে বোঝা গেছে।

এরপরও অবাক করার মতো কাণ্ড ঘটায় বাফুফে। বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপে চ্যাম্পিয়ন দল নেপালের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়া হলেও ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন মানির চেক তুলে দিতে পারেনি। যা ছিল দেশের জন্য লজ্জাকর। প্রায় ১০ মাস হতে চললেও এই অর্থ এখনো নেপালকে দেওয়া হয়নি। চ্যাম্পিয়ন মানির পরিমাণ খুব যে বেশি তাও নয়। অনায়াসে শোধ করা যেত। এনিয়ে বাফুফের নির্বাহী কোনো কর্মকর্তা মুখ খোলেননি। সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলছেন ফান্ডের কিছু সমস্যা আছে। আশা রাখি খুব শিগগিরই নেপালের টাকা পাঠিয়ে দেবে। বাফুফে কি এতটা দেউলিয়া হয়ে গেল ১০ মাসেও সামান্য প্রাইজমানি দিতে পারছে না। নেপাল যদি ফিফার কাছে বিষয়টি তুলে ধরে অবস্থা কি হতে পারে তা কি সালাউদ্দিন ভেবে দেখেছেন। পেশাদার লিগে বড় পরিমাণে স্পন্সর পেলেও ক্লাবগুলোর অংশগ্রহণ মানি পুরো শোধ করা হয়নি। ফিফা থেকেও অনুদান পাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে বাফুফের এত অর্থ ব্যয় হচ্ছে কোথায়?

এক সময়ে অর্থের অভাব ছিল। এখন ক্রিকেট বোর্ড এতটা ধনী যে তারা অন্য ফেডারেশনের পাশে দাঁড়াচ্ছে। স্পন্সরের ছড়াছড়ি। বলা যায় টাকার পাহাড়ে ক্রিকেট। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডও স্পন্সর মানির ব্যাপারে অনেকটা নীরব। অন্যান্য ফেডারেশনও নীরব ভূমিকা পালন করছে। ফেডারেশনের বাৎসরিক অনুদান তো আছেই দেশে বা বিদেশে গেমস অনুষ্ঠিত হলে ক্রীড়াবিদদের প্রস্তুতি ও অন্যখাতে ব্যয়ের জন্য সরকার মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে থাকে। অথচ এরপরও ক্রীড়াবিদদের অভিযোগের শেষ নেই। উন্নতমানের প্রশিক্ষণ ছাড়াও থাকা-খাওয়া নিয়েও অভিযোগ উঠছে। যে মানের খাওয়া দেওয়া হয় তা নাকি মুখে নেওয়ার মতো নয়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ স্পন্সরের টাকা কোথায় ও কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তার কি কোনো খোঁজ-খবর রাখছে। এ ব্যাপারে ক্রীড়া পরিষদের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘সরকারি যে অনুদান দেওয়া হয় তার অডিট করা হয়। স্পন্সরের পরিমাণও জানতে চায়। কিন্তু কী কী খাতে ব্যয় হচ্ছে তা জানতে চায় না। তবে কোনো ফেডারেশনের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা হয়।’ সচিবের কথাই বলে দিচ্ছে তারা স্পন্সর মানিকে ততটা গুরুত্ব দেন না। অথচ  কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মূল অভিযোগটা স্পন্সরশিপ মানি ঘিরেই।

সর্বশেষ খবর