বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

একাদশ ঘিরে যত প্রশ্ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

একাদশ ঘিরে যত প্রশ্ন

নিউজিল্যান্ড ট্যুরে উইকেট বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে টাইগারদের। তাই ক্রাইস্টচার্চের উইকেট পর্যবেক্ষণ করছেন হাতুরাসিংহে, মুশফিক ও তামিম —বিসিবি

ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ওভার বোলিং করেছেন। রান দিয়েছেন ১১৬। অন্য সব বোলার উইকেট পেলেও তিনি ৩৭ ওভারে ছিলেন উইকেট শূন্য। আর ব্যাটস হাতে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। অথচ বাংলাদেশ কিনা ৮ উইকেটে ৫৯৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট পেয়েছেন। কিন্তু রান দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। ওভার প্রতি ৫.৬৫ করে ১১.৪ ওভারে দিয়েছেন ৬৬ রান। কিন্তু ব্যাট হাতে এবার করেছেন মাত্র ১ রান। কিন্তু তার উইকেট হারানোর পরই টেস্টে ব্যাকফুটে যায় বাংলাদেশ।

—নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কথা হচ্ছে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে। আগের দুই টেস্টে ঘরের মাঠে যিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই টেস্টে ১৯ উইকেট নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের কন্ডিশন ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে পার্থক্য তো আকাশ পাতাল। তারপরেও বাস্তবতা ভুলে গিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট উচ্চাভিলাষী হতে মিরাজকে দলে নিয়েছেন। কিন্তু ফলাফল শূন্য।

এখানে মিরাজের কোনো দোষ নেই। তিনি সাধ্য মতো চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি। খেলোয়াড় মাত্র সফলতা যেন পাবেন, তেমন ব্যর্থতা কষ্টও পেতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে কি মিরাজের মতো বোলারের সফল হওয়ার কথা?

সন্দেহ নেই মিরাজ একজন পারফেক্ট অলরাউন্ডার। যুব দলের হয়ে তার প্রমাণও দিয়েছেন। কিন্তু জাতীয় দলে মিরাজের পরিচিতি একজন বোলার হিসেবে। ব্যাটসম্যান হিসেবে এখনো নিজেকে চেনাতে পারেননি। তার বোলিংকে বিবেচনায় নিয়েই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একাদশে রাখা হয়েছিল। কিন্তু যেখানে দলে সাকিব আল হাসানের মতো অভিজ্ঞ স্পিনার রয়েছেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও ভালো স্পিন করেন। পেস কন্ডিশনে নিশ্চয়ই এতো স্পিনার খেলানোটা বিলাসিতার মতোই মনে হবে। এমনিতেই নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে স্পিনারদের জন্য কোনো রকম সুবিধা রাখা হয় না। কেননা কিউই ব্যাটসম্যানদের বড় শত্রু স্পিনাররাই। এমন কন্ডিশনে সফল হতে হলে স্পিনারদের বড় সম্বল অভিজ্ঞতা। সে কারণেই দেখা যায় ওয়েলিংটন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব যেখানে ১০ ওভারে দিয়েছেন ৩০ রান সেখানে মিরাজ ১১.৪ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ৬৬ রান।

টেস্টের টপ র্যাঙ্কিংয়ের দলগুলোও একাদশে চার বোলারের বেশি রাখে না। তাই তিন পেসারের সঙ্গে সাকিব আল হাসানই যথেষ্ট ছিল। পার্টটাইমার স্পিনার হিসেবে দলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তো ছিলই। তাই মিরাজের জায়গায় অনায়াসে খেলানো যেতো একজন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে। এই পজিশনে নাসির হোসেনই ছিলেন পারফেক্ট। কিন্তু নাসিরকে তো দলে রাখারই প্রয়োজন মনে করেননি নির্বাচকরা। সেক্ষেত্রে খেলানো যেত সৌম্য সরকারকে। যদিও অনেক দিন থেকে ব্যর্থতার চোরাবালিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন এই তারকা ব্যাটসম্যান। কিন্তু এমন কন্ডিশনে মিরাজের চেয়ে অন্তত সৌম্যই ভালো ছিল বলে মনে করেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা। ব্যাটিংয়ের সঙ্গে মিডিয়াম পেস বোলিং করতে পারেন তিনি। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো সৌম্যর ব্যাটে রান ছিল। তাই মন্দের ভালো হিসেবে তাকে নেওয়াই যেত।

একাদশে নেওয়া যেত দলে থাকা তাইজুল ইসলামকেও। এই মুহূর্তে টেস্টে বাংলাদেশের এক নম্বর স্পিনার তিনি। দীর্ঘ সময় একই জায়গায় বোলিং করার অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে তার। ঘরের মাঠে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচেই মিরাজ যে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন তার বড় অবদান ছিল তাইজুলের। কেননা ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা তাইজুলের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দিয়ে গিয়ে মিরাজ ওভারে স্কোর বাড়াতে চেয়েছিলেন। সে কারণেই টপাটপ উইকেট হারাতে হয়েছে। তাই বলে মিরাজের সাফল্যকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। বরং বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক বড় এক সম্পদ তিনি। ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বোলিং লাইনের অনেক বড় অস্ত্র। কিন্তু সেই অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োগটা তো সঠিক হতে হবে। তা না হলে মিরাজের মতো প্রতিভা নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ব্যর্থ হবে, সেসঙ্গে ভেঙে যাবে মনোবল। এতে আত্মবিশ্বাসেও বড় চোট লাগতে পারে। আগামীকাল থেকে ক্রাইস্টচার্চে শুরু হচ্ছে শেষ টেস্ট। উইকেট কেমন হবে তা এখনো ধাঁ ধাঁ। কেননা কিউইরা স্পোর্টিং উইকেট বানাবেন নাকি সবুজ উইকেট তৈরি করবেন। নিউজিল্যান্ড সফর শেষ হয়ে এলো কিন্তু এখনো সবুজ উইকেটের দেখা মেলেনি। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট তৈরি করেই একের পর এক সফলতা পেয়েছে স্বাগতিকরা। তবে ওয়েলিংটন টেস্টে কিউইদের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছিল। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন। কিন্তু টাইগারদের ভুলের কারণেই জিতে যায় নিউজিল্যান্ড। তাই এই টেস্টে ব্যাটিং উইকেট তৈরি করে ঝুঁকি নিতে চাইবে না স্বাগতিকরা। আর সবুজ ঘাসের উইকেট বানালে তিন পেসারের সঙ্গে সাকিবই যথেষ্ট। সেক্ষেত্রে মিরাজের জায়গায় সুযোগ পেতে পারেন সৌম্য। তবে ম্যাচের দিন উইকেট দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে টিম ম্যানেজমেন্ট।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর