রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাকিবের নতুন মাইলফলক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সাকিবের নতুন মাইলফলক

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে গতকাল কলিন ডি গ্রান্ডকে বোল্ড করার পর সাকিবকে ঘিরে সতীর্থদের উল্লাস —ক্রিকইনফো

ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন সাকিব আল হাসান। খেলেছিলেন ২১৭ রানের নান্দনিক ইনিংস। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের স্কোর করে অনন্য উচ্চতায় নিজেকে ঠাঁই দেন সাকিব। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলে সমালোচনার বাণে এফোঁড়-ওফোঁড় হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। নিন্দুকের সমালোচনায় হয়তো তাঁতিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে সাকিব। তাই ক্রাইস্টচার্চের শীতল আবহাওয়ায় বাংলাদেশের পারফরম্যান্সকে উষ্ণ করেন ব্যাট ও বলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। হ্যাগলি ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ম্যাচের যে চিত্র, তাতে পাল্লাটা সমানে সমান বলাই যায়! কিন্তু অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে সবার ওপরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘বরপুত্র’ সাকিব। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ‘বিজ্ঞাপন’ কাল নতুন এক মাইলফলক গড়েন। নাম লেখান লিজেন্ড অলরাউন্ডার কপিল দেব, জ্যাক ক্যালিস ও শহীদ আফ্রিদির পাশে। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব ৯ হাজার রান ও সাড়ে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক গড়েন। ৪৬ টেস্টে সাকিবের রান ৩২০৫, উইকেট ১৬৪। ১৬৬ ওয়ানডেতে ৪৬৫০ রান উইকেট ২২০ এবং টি-২০ ক্রিকেটে রান ১১৫৯ ও উইকেট ৬৭টি। সব মিলিয়ে রান ৯০১৪ এবং উইকেট গতকাল টেস্টের দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত ৪৫১টি।

ক্রিকেটের ‘পূর্ণাঙ্গতা’ বলা হয় স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্সকে। সামান্য কয়েকটি ওয়ানডে খেললেও টেস্ট ক্রিকেটে সোবার্স ছিলেন বৈচিত্র্যে ভরা। ব্যাটিং করতেন বাঁ হাতে। ট্রিপল সেঞ্চুরির ইনিংস (৩৬৫) রয়েছে তার। কিন্তু বোলিংয়ে ছিলেন অবিশ্বাস্য। মূলত চায়নাম্যান বোলার ছিলেন তিনি। কিন্তু দলের প্রয়োজনে মিডিয়াম পেসও করতেন। সোবার্সের দেখানো পথে আশি ও নব্বই দশকে ক্রিকেটবিশ্ব শাসন করেছেন ইমরান খান, ইয়ান বোথাম, কপিল দেব ও রিচার্ড হ্যাডলি। এরপর ক্রিকেট বিশ্বে আসেন জ্যাক ক্যালিস, শহীদ আফ্রিদিরা। ক্রিকেটবিশ্বে এখন তাদের মানের অলরাউন্ডার খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন ক্রিকেট বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। পারফরম্যান্স করে নিজেকে নিয়ে গেছেন বিশ্বসেরাদের কাতারে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এখন তিনি সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন।

হ্যাগলি ওভালে প্রথম ইনিংসে তার ৫৯ রান দলকে ২৮৯ রান পর্যন্ত পৌঁছাতে শক্ত ভিত দেয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সবসময়ই সাকিব সফল। এখন পর্যন্ত ৮ টেস্টের ১৪ ইনিংসে ৬৮.৬৩ গড়ে ৭৫৫ রান করেন। সেঞ্চুরি ২টি ও হাফসেঞ্চুরি ৪টি। সেঞ্চুরি দুটি আবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। ১০০ ও ২১৭। বল হাতেও সফল। গতকাল ইনিংসের ৩০ নম্বর ওভারে আসেন বোলিংয়ে এসেই বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান। নিজের পঞ্চম ওভারে সাজঘরে ফেরান মিচেল স্যান্টনারকে। এরপর এক ওভারে বিজে ওয়াটলিং ও কলিন ডি গ্রামকে প্যাভিলিয়নমুখী করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন সাকিব। দিনশেষে সাকিবের বোলিং স্পেল ৭-০-৩২-৩। দলের সবচেয়ে সফল বোলার।    

২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক সাকিবের। অভিষেকের পর থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘নিওক্লিয়াস’ হয়ে ওঠেছেন তিনি। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সবসময়ই তার ব্যাট হেসে উঠে এবং বলও হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। ব্ল্যাক ক্যাপসদের বিপক্ষে ওয়েলিংটনে যে ২১৭ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন, সেটা বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি এবং ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। ওই ম্যাচে আরও রেকর্ড করেছিলেন তিনি। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৩৫৯ রানের জুটি গড়েন, যা বাংলাদেশের যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ।

সাকিবের ৪৫০ নম্বর উইকেট বিজে ওয়াটলিং। অবশ্য সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় সাকিবের অবস্থান ৩৬। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি মাশরাফি বিন মর্তুজা। টি-২০ ও ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফির উইকেট সংখ্যা সব মিলিয়ে ৩৩৬ (৭৮+২১৯+৩৯)। এরপর বাঁ হাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক রাজের উইকেট সংখ্যা ২৭৪ (২৩+২০৭+৩৯)। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশ্য বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রান ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের অধিনায়ক তামিম ইকবালের, ৯৭৫৭ রান ( ৩৪৩৫(টেস্ট)+ ৫১২০ (ওয়ানডে)+ ১২০২ (টি-২০)।

আজ তৃতীয় দিন টেস্ট কোন দিকে হেলে পড়বে, সেটা সকালেই পরিষ্কার হয়ে ওঠবে। তবে বাংলাদেশকে জিততে হলে সবার আগে থাকতে হবে সাকিবকেই, সেটা পরিষ্কার দ্বিতীয় দিনের পারফরম্যান্স।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর