রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
রাজধানীর বাইরে

ছোট হয়ে আসছে ওয়ালিংটন মাঠ

সাজ্জাদ হোসেন, নড়াইল

ছোট হয়ে আসছে ওয়ালিংটন মাঠ

বিখ্যাত সেই ওয়ালিংটন মাঠ। এখন সেখানে ঢালাই কারখানাসহ বেশির ভাগ অংশই দখলদারদের হাতে জিম্মি

দখলবাজির কবলে ছোট হয়ে আসছে নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী কুরির ডোব বা ওয়ালিংটন মাঠ। নানা প্রক্রিয়ায় ক্রমেই মাঠটি গ্রাস করা হচ্ছে। ফলে কালীশঙ্কর রায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নড়াইল জমিদারির অন্যতম নির্দশন শতাব্দী প্রাচীন মাঠটির অস্তিতের হুমকির মুখে পড়েছে। 

 জানা গেছে, ‘কুরি’ (বাতাসা, গজা ইত্যাদি মিষ্টান্ন প্রস্তুত কারক) সমপ্রদায় অধ্যুষিত এলাকার নামেই কুরিগ্রামের নামকরণ। এই কুরিগ্রাম মৌজায় এক বিশাল ডোব (জনবসতি হীন জায়গা) যা কুরির ডোব নামে পরিচিত। নড়াইল জমিদার বাড়ির পূর্বপাশ সংলগ্ন এ কুরির ডোবের ১নং খতিয়ানভুক্ত ২৬১ দাগে ২ একর ৯০ শতক, ৪৯৭ দাগে ১ একর ৬৪ শতক এবং ২৬৬ দাগে ৭ একর ৪২ শতক, মোট ১১ একর ৯৬ শতক জায়গায় আয়তনের দিক থেকে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ মাঠটি নড়াইলের জমিদাররা ১৮৭০ সালের কোনো এক সময় তৈরি করেন। উদ্দেশ্য ছিল ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখানে খেলাধুলা করবে। ব্রিটিশদের মনোরঞ্জনে সদা সচেষ্ট জমিদাররা কলেজ প্রতিষ্ঠা করে যেমন রানী ভিক্টোরিয়ার নামে নামকরণ করেন, তেমনি কুরির ডোব মাঠ তৈরির একপর্যায়ে ইংল্যান্ডের ওয়ালিংটন শহরের নামে এটির নামকরণ করা হয়। কলকাতার ইডেন মাঠের আদলে তৈরি করা বিশাল এ মাঠটিতে একই সঙ্গে দুটি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে পারত।  শুরকি বালি বিছিয়ে মাঠটি এমনভাবে তৈরি যেখানে কখনো পানি কাঁদা জমে না। কলকাতার মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলসহ প্রখ্যাত বিভিন্ন ক্লাব অনেকবার অংশ নিয়েছে এ মাঠে অনুষ্ঠিত ফুটবল ম্যাচে। কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকেই পাল্টাতে থাকে এর দৃশ্যপট। বিলোপ ঘটে জমিদারি প্রথার। নানা প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত দখল হতে থাকে ওয়ালিংটন মাঠ। মাঠটির ২৬১ নং দাগ থেকে ২ একর ৯০ শতক, ২৬৬ নং দাগ থেকে ১ একর ৯৪ শতক ভিক্টোরিয়া সু্কলে, ৫ একর ভিক্টোরিয়া কলেজে, ৫০ শতক হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে এবং কিছু অংশ শিবশংকর বালিকা বিদ্যালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয় বিভিন্ন সময়। পরবর্তিতে ভূমিহীন হিসাবে সেটেলমেন্ট দেওয়া হয় ৪৯৭ নং দাগ থেকে জনৈক নির্মল ভদ্রকে ৪১ শতক, ২৬১ নং দাগ থেকে সালামুদ্দাহারকে ২৫ শতক, উবায়দুর রহমানকে ২৫ শতক, রোকনুদ্দাহারকে ৩৩ শতক এবং আ. লতিফ শেখকে ৩৩ শতক।

এ ছাড়া বর্তমানে মাঠটির চারপাশে দেড় শতাধিক বস্তি ঘর তৈরি করে অবৈধভাবে দখল করে রাখা হয়েছে এর বেশকিছু অংশ। মাঠের দুপাশে স্কুলের পক্ষ থেকে দোকান তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মাঠটির মাঝ বরাবর ব্যবহার হচ্ছে রাস্তা। এমনি নানা প্রক্রিয়ায় মাঠটি ক্রমেই ছোট হয়ে চলেছে। মাঠটিকে বাঁচাতে এখনই কার্যকরী উদ্যোগ না নিলে নড়াইলের ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক ওয়ালিংটন মাঠ স্বার্থন্বেষীদের লোলুপ থাবার কবলে হারিয়ে যাবার আশঙ্কা করছেন ঐতিহ্যপ্রেমী নড়াইলবাসী। জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ আবদুর রশীদ বলেন, দ্রুত দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে মাঠ বলে কিছুই থাকবে না। সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় অ্যাডভোকেট আজিজুল ইসলাম বলেন, যে ভাবে দিন দিন মাঠটি সংকুচিত হচ্ছে তাতে আমাদের খেলাধুলার অনুশীলন সম্ভব হবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর