সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে ফেদেরার শিরোপা

রাশেদুর রহমান

শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে ফেদেরার শিরোপা

মেলবোর্নের রড লেভার এরিনায় ফেদেরার-নাদাল ফাইনাল ম্যাচের পঞ্চম সেটের খেলা চলছে। সুইস কিংবদন্তি পিছিয়ে আছেন ১-৩ গেমে। নাদাল সমর্থকরা অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। গ্যালারিতে নাদালের প্রতি অভিনন্দন লেখা ব্যানার-ফেস্টুন দেখা যেতে লাগল। এর মধ্যে একজন লাল ব্যানারে ‘অভিনন্দন নাদাল’ লিখে উঁচিয়ে ধরলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ফেদেরার টিমের মধ্যে বসে থাকা স্ত্রী মিরকা ফেদেরার দাঁড়িয়ে গেলেন। ফেদেরারের উদ্দেশ্যে কী যেন বলে উঠলেন চেঁচিয়ে। তার বক্তব্যে যেন রক্তের তুফান ছুটল ফেদেরারের শিরায়-শিরায়। রড লেভার এরিনার নীল কোর্টে তারুণ্যের শক্তিতে টগবগ করে ছুটতে লাগলেন ৩৫ বছরের ফেদেরার। টানা পাঁচটা গেম জিতে ১৮তম গ্র্যান্ডস্লাম জয় করলেন তিনি। নাদালের হৃদয় ভেঙে আরও একবার গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের উচ্ছ্বাস করলেন ফেদেরার।

দীর্ঘ পাঁচটা বছর গ্র্যান্ডস্লাম শূন্য রজার ফেদেরার। হয়তবা এ কারণেই গতকাল ম্যাচ পয়েন্টটা নিশ্চিত হওয়ার পর প্রবল উচ্ছ্বাসে লাফিয়ে উঠেছিলেন এ সুইস তারকা। ক্যারিয়ারে অসংখ্য ট্রফি জিতেছেন তিনি এমন উচ্ছ্বাস কবে করেছেন ভক্তরা হয়ত ভুলেও গেছেন। কিন্তু গতকাল ফেদেরারের মধ্যে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে প্রবল আবেগও ছিল। এ বয়সেও যে গ্র্যান্ডস্লাম জেতা যায় এটা ফেদেরার ছাড়া আর কেই বা প্রমাণ করবেন এ যুগে! গত বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনাল খেলেছেন ফেদেরার। নোভাক জকোভিচের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিলেন হতাশ হয়ে। সেমিফাইনাল খেলেছিলেন উইম্বলডনেও। ২০১২ সালের পর গ্র্যান্ডস্লাম ফাইনাল তিনবার খেলেছেন রজার ফেদেরার। দুবার উইম্বলডনে। একবার ইউএস ওপেনে। তিনবারই তিনি হেরেছেন নোভাক জকোভিচের কাছে। চতুর্থবার ফাইনালে উঠে ফেদেরার যেন নির্ভার হয়ে উঠলেন। নাদালের মতো দুরন্ত প্রতিপক্ষকেও খুব একটা পাত্তা দিলেন না। ম্যাচটা পাঁচ সেটে হয়েছে বটে। তবে ৬-৪, ৩-৬, ৬-১, ৩-৬, ৬-৩ স্কোর লাইনই বলছে ফেদেরার কতটা দুরন্ত খেলেছেন। নাদালকে তেমন কোনো সুযোগই দেননি তিনি! অবশ্য শেষ সেটটায় বেশ লড়াই করতে হয়েছে ফেদেরারকে।

নাদালকে হারিয়ে ফেদেরার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তবে একজন বিজয়ী হিসেবে নাদালের প্রশংসায় তিনি ছিলেন পঞ্চমুখ। ট্রফি হাতে নিয়ে স্ত্রী আর সমর্থকদের সাধুবাদ দিয়েই বলে উঠলেন, ‘টেনিসে কোনো ড্রয়ের সুযোগ নেই। নাহলে আমি ট্রফিটা নাদালের সঙ্গে ভাগ করে নিতাম। সে সত্যিই একজন অসাধারণ খেলোয়াড়।’ দুজনই ইনজুরি থেকে ফিরেছেন। পুরনো ফর্মটা ফিরিয়ে আনার জন্য কঠোর সংগ্রাম করতে হয়েছে দুজনকেই। নাদাল যেমন বললেন, ‘আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। তবে আজকের দিনটা ছিল ফেদেরারের। আমি তাকে অভিনন্দন জানাই।’ ফেদেরারও কঠোর পরিশ্রমের কথাই বললেন। টেনিসে কেবল তারুণ্যের শক্তিই সফলতার মূলমন্ত্র নয়, অভিজ্ঞতা আর কঠোর সাধনা দিয়েও জয় করা যায় গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা। ফেদেরার আর নাদাল যেন তাই প্রমাণ করলেন!

অনেক আগেই রজার ফেদেরার ইতিহাস গড়েছেন। তিনিই এখন সর্বোচ্চ গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী তারকা। পিট সাম্প্রাসের ১৪টি গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের রেকর্ড তো বহু আগেই  পেছনে ফেলে এসেছেন এ সুইস কিংবদন্তি। নাদালও এখন পিট সাম্প্রাসের সমান্তরালে। আর ফেদেরার গতকাল ১৮তম গ্র্যান্ডস্লাম জয় করে ভবিষ্যৎ তারকাদের জন্য নিজের রেকর্ড স্পর্শ করা যেন আরও অসম্ভব করে তুললেন। আর কে জানে, দুরন্ত ফর্মে থাকা ফেদেরার হয়ত আরও কয়েকটা গ্র্যান্ডস্লাম জিতেই অবসরে যাবেন!

সর্বশেষ খবর