মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বসুন্ধরা গলফের ট্রফি উন্মোচিত

মেজবাহ্-উল-হক

বসুন্ধরা গলফের ট্রফি উন্মোচিত

কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হলো গলফের স্বপ্নের ট্রফি। এখন শুধু অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত কে হাসবেন বিজয়ের হাসি —রোহেত রাজীব

আবরণটা সরিয়ে দিলেন সিদ্দিকুর রহমান। সঙ্গে সঙ্গে সোনালি চকচকে ট্রফিটা বের হলো। আগের দুই আসরের মতোই বাঘের আদলে করা ট্রফি। নিচে লেখা- বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেন-২০১৭। এই ট্রফিটার জন্য আগামীকাল থেকে মাঠে নামবেন বিশ্বের ২৩টি দেশের ১৩৪ জন গলফার।

বাংলাদেশের গলফ ইতিহাস ও সাফল্য সবকিছুই এক সিদ্দিকুর কেন্দ্রিক। সিদ্দিকুর সাফল্য দেখিয়েছেন বলেই আজ এশিয়ান ট্যুরের বড় টুর্নামেন্ট বাংলাদেশে হচ্ছে। আর সিদ্দিকুর নিজে জানালেন এই টুর্নামেন্টের পেছনে বড় অবদান পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের। দেশসেরা গলফার বলেন, ‘বসুন্ধরাকে ধন্যবাদ। তারা এগিয়ে এসেছেন বলেই আজ দেশের মাটিতে আমরা এশিয়ান ট্যুরের আসরে অংশগ্রহণ করতে পারছি। আর ঘরের মাঠে এমন আসর হওয়ায় আমাদের গলফের উন্নয়নে বড় অবদান রাখছে।’

২০১৫ ও ২০১৬ সালেও বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মাটিতে এশিয়ান ট্যুরের এই টুর্নামেন্ট হয়েছে। এবার তৃতীয়বারের মতো হচ্ছে- বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেন। গলফ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এই আসরের আয়োজন করে ক্রীড়া জগতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে। গলফের সঙ্গে পর্যটনের নিবীড় সম্পর্ক। এমন একটি টুর্নামেন্টে বিশ্বের অনেক খ্যাতিমান খেলোয়াড় আসেন। যাদের অনেকেই আবার খ্যাতিমান ব্যবসায়ী। তাই এমন একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করায় বাংলাদেশ যেমন একদিকে গলফিং গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে, অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচিত হচ্ছে।

এবারের আসর শুরু হবে  ১ ফেব্রুয়ারি, সমাপনী ৪ ফেব্রুয়ারি। চার দিনের টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র গতকাল আয়োজন করা হয়েছিল সংবাদ সম্মেলনের। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেন-২০১৭ এর সাংগঠনিক কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মহিউদ্দীন সিদ্দিক বলেন, ‘বাংলাদেশ এতো বেশি দেশের এতোগুলো বিদেশি খেলোয়াড় একসঙ্গে কোনো ক্রীড়া ইভেন্টে অংশ নিয়েছে কিনা জানা নেই। আমাদের এই আসরে এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকার তারকা গলফার অংশ নিচ্ছেন। এটা অনেক গর্বের বিষয়। তাছাড়া স্বাগতিক হওয়ায় আমাদের দেশের ৩৩ জন গলফার অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছেন এটাও অনেক বড় বিষয়। কেননা এশিয়ান ট্যুরের আসরে অংশগ্রহণ করতে হলে গলফারদের আন্তর্জাতিক কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্টে খেলে যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। সেটা যেমন ব্যয়বহুল তেমন সময় সাপেক্ষও। আর এখানে টুর্নামেন্ট হওয়ায় আমাদের অ্যামেচার ৬ গলফারও সরাসরি মূল পর্বে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন- এটা অনেক বড় অর্জন। যা আমাদের গলফের উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে এশিয়ান ট্যুরের পরিচালক (ট্যুর অপারেসন্স) জিতিসাক তামপ্রাসার্ট বলেন, ‘কুর্মিটোলা গলফ কোর্স অনেক ভালো। এখানে সমস্যা নেই বললেই চলে। আমার বিশ্বাস ভালো একটি টুর্নামেন্ট হবে।’

পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা লে. কর্নেল খন্দকার আব্দুল ওয়াহেদ (অব.) বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ আসলে ক্রীড়াবান্ধব। গলফ ছাড়াও দেশের অন্যান্য ইভেন্টে এই প্রতিষ্ঠানটি পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। এশিয়ান ট্যুরের মতো এমন এটি টুর্নামেন্টের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পেরে বসুন্ধরা গ্রুপ আনন্দিত। এমন টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে সিদ্দিকুর রহমানের মতো আরও উদীয়মান তারকা গলফার বের হয়ে আসুক—এটাই আমাদের কামনা।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনের সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল এ কে এম আব্দুল্লাহিল বাকী, বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের যুগ্ম সচিব ব্রি. জে. মো. ওবাইদুল হক (অব.) ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।  ফুটবল কিংবা ক্রিকেট বিশ্বকাপের মতো গলফের বড় টুর্নামেন্টে আলাদাভাবে জমকালো অনুষ্ঠান করা হয় না। তবে গতকাল ট্রফি উন্মোচনকে কেন্দ্র করেই কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আবহ তৈরি করেছিল বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনের আয়োজকরা।

সিদ্দিকুর ট্রফি উন্মোচন করার পর পরই শুরু হয় দেশাত্মবোধক গান। মঞ্চে হাজির হন বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ ও তার দল। তারপর ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। ৫২-র ভাষা আন্দোলনের চিত্র, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুক্ত ও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের সময় গলফ ক্লাবের কনফারেন্স রুমে যেন এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। বাউল সম্রাট লালন শাহ, হাসন রাজা থেকে শুরু করে ভিডিও চিত্রে দেখানো হয়েছে রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলামকেও। তবে সমুদ্র সৈকতের সূর্য ওঠার দৃশ্যটি ছিল অসাধারণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা দর্শনীয় স্থান, ঐতিহাসিক স্থান, নানা স্থাপনা উল্লেখ করে অন্যরকম এক বাংলাদেশকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশে আসা দুই শতাধিক বিদেশি গলফার, অফিসিয়াল, রেফারি, সংগঠকদের অনেকেই উপস্থিত থেকে প্রাণ ভরে উপভোগ করেছেন এই অনুষ্ঠান। খেলা মাঠে গড়াবে ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টায় টি-অফের মধ্য দিয়ে। কিন্তু ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানটি এমন আড়ম্বরভাবে করা হলো- যেন গতকালই পর্দা উঠে গেল বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেন ২০১৭’র।

সর্বশেষ খবর